ঢাকা, ৫ আগস্ট, ২০২০ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বলেছেন, শেখ কামাল বেঁচে থাকলে দেশকে অনেক কিছু দিতে পারতো। সে তার বহুমুখী প্রতিভা দিয়ে দেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ যদি কামাল (শেখ কামাল) বেঁচে থাকতো তবে, সে দেশকে অনেক কিছু দিতে পারতো। তার বহুমুখী প্রতিভা দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারতো। কামাল অনেক ক্ষেত্রেই তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মদিন উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে এই আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কামালের বহুমুখী প্রতিভা ছিল। একজনের মধ্যে এতো গুণ ও প্রতিভার সমাহার সত্যিই বিরল।’
তিনি আরো বলেন, কামাল একদিকে যেমন ছিল একজন ক্রীড়া সংগঠক, ঠিক তেমনি অপর দিকে সংস্কৃতিক অঙ্গনেও ছিল তার বহুমুখী প্রতিভা। পাশাপাশি, রাজনীতিতেও সে দক্ষতা ও যোগ্যতার ছাপ রেখে গেছে।
রাজনীতি ও আন্দোলনে শেখ কামালের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছয় দফা দাবির সময় থেকে প্রতিটি সংগ্রাম ও আন্দোলনে কামাল সক্রিয় ছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জাতির পিতা গ্রেফতার হলে কামাল সে সময় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’
তিনি বলেন, যথাযথ প্রশিক্ষণ শেষে মহান মুক্তিযুদ্ধে কামাল সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়।
ক্রীড়াঙ্গনে শেখ কামালের অবদান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধানমন্ডিতে খেলাধূলার আয়োজন এবং আবাহনী ক্লাব প্রতিষ্ঠা ক্রীড়াঙ্গনে কামালের সবচেয়ে বড় অবদান। মুক্তিযুদ্ধের পর কামাল আবাহনীকে আরো শক্তিশালী করে।
আবাহনীর জন্য কামালের গভীর ভালবাসা ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে জার্মানী যাওয়ার আগে কামাল তাঁর কাছে তার ক্লাবের ফুটবল খেলোয়াড়দের জন্য অ্যাডিডাস বুটস আনতে বলেছিল।
শেখ কামালের বড় বোন শেখ হাসিনা এ সময় বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, কামাল তার নিজের জন্য কখনোই কিছু চায়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কামাল গান গাইতো ও সেতার বাজাতো। সে স্পন্দন শিল্প গোষ্ঠী’ নামে একটি সঙ্গীতের ব্যান্ড দলও গঠন করে। পাশাপাশি, কামাল ঢাকা থিয়েটার প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রাখে যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, ‘কামাল আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার হাতে গড়া আবাহনী ও স্পন্দন এখনো আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কামাল আমার দুই বছরের ছোট ছিল। কিন্তু সে অনেক পরিপক্ক ও বাস্তবজ্ঞান সম্পন্ন ছিল। পাশাপাশি তার আরো অনেক গুণ ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই কামালের দায়িত্ববোধ ছিল। ছোটবেলা থেকেই মাকে সে ঘরের কাজে সাহায্য করতো।’
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, দেশব্যাপী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাহ্উদ্দিন এবং একাত্তর টেলিভিশনের এডিটর-ইন-চার্জ ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর পরিচালনা বোর্ডের সদস্য মোজাম্মেল বাবু।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য হত্যার বিবরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কখনই ভাবেননি যে তাদের এভাবে সবাইকে হারাতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ কামালকে তারা হত্যা করে, যাদের সঙ্গে (কামাল) একজন সেনাকর্মকর্তা হিসেবে এবং ওসমানির এডিসি হিসেবে, সে কাজ করেছে এবং একসঙ্গে থেকেছে।’
তিনি বলেন, তারা (খুনিরা) নিয়মিত তাদের বাড়িতে যেত। তাদের বাড়িতে খাবার ও নাশতা খায়নি এমন কেউই ছিল না। তারা কামাল ও জামালের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের গুলি চালায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু, যিনি দেশের মুক্তির জন্য তাঁর পুরো জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাঁর সরকারের কাছ থেকে পদোন্নতি পাওয়া মেজর জিয়াসহ সেনা অফিসারদের একটি অংশ তাঁকে হত্যা করে।
তিনি বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত ছিলেন এবং এমনকি তাদের স্বদেশে ফিরে আসতেও বাধা দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনকি তারা এমন একটি আইন কার্যকর করে যাতে দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- যিনি জনগণ ও দেশের কল্যাণে তাঁর পুরো জীবন উৎসর্গ করেছিলেন- তাঁর হত্যার বিষয়ে কোনো মামলা দায়ের করা না যায়।
তিনি বলেন, ২১ বছর পরে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করার উদ্যোগ নেয়।
প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগকে তাদের সেবা করার এবং বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারীদের বিচারের সুযোগ দেওয়ায় দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান।
শৈশবের স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমরা, ভাই-বোনরা একসাথে খেলতাম, ঝগড়া করতাম। বয়সের দিক থেকে একে অপরের কাছাকাছি হওয়ায় পুতুলখেলার সময় কামাল আমাকে সঙ্গ দিতো এবং আমিও তার খেলার সময় তাকে সঙ্গ দিতাম।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কামালের জন্মের পর থেকে আব্বা অধিকাংশ সময় কারাগারে ছিলেন বলে কামাল আমার কাছ থেকে আমার আব্বাকে ‘আব্বা’ বলে ডাকার অনুমতি চেয়েছিলো।’তিনি বলেন, কামাল ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই সুলতানা কামালের সাথে এবং জামাল ১৯৭৫ সালের ১৭ জুলাই রোজির সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাদের সকলকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয়। ‘একবার ভাবুন, এটা কী রকম নিষ্ঠুরতা!’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিরা দশ বছর বয়সী শেখ রাসেলসহ কয়েকটি শিশুকেও হত্যা করে।
তিনি যোগ করেন, ‘আমার মা যিনি সবসময় বাবাকে তার প্রতিটি কাজে সহযোগিতা করতেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে তাকেও হত্যা করা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছোট ভাই শেখ কামালের ৭১ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনায় যারা অংশ নিয়েছেন তাদের শুভেচ্ছা জানান।
পরে তিনি শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রকাশিত একটি স্মৃতিগ্রন্থেও মোড়ক উন্মোচন করেছেন