দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৫৩তম দিনে ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমেছে। বেড়েছে সুস্থতার হার।
গত ২৪ ঘন্টায় ১২ হাজার ৬৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৮৫১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ এই ভাইরাসে ১২৬ জন কম আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল ১২ হাজার ৭০৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৯৭৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার দশমিক ৯৮ শতাংশ কম।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ১২ লাখ ৩৭ হাজার ৮২৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ৫২ হাজার ৫০২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ২৭ মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ১২ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৩৯ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৩৩৩ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। গতকালও মৃত্যুর হার একই ছিল।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৭৬০ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫৮৪ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৭ দশমিক ৬১ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ০৫ শতাংশ বেশি।
অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ২৫৩ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ১৮৯ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ৬৪টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৮৪টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৬৯৯ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১২ হাজার ৭০৮ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৯টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারী ২৭ জনের মধ্যে পুরুষ ২৪ জন এবং নারী ৩ জন। হাসপাতালে মারা গেছেন ২৬ জন, বাড়িতে মারা গেছেন ১ জন। এখন পর্যন্ত পুরুষ মোট মারা গেছেন ২ হাজার ৬৩০ জন; যা ৭৮ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং নারী মারা গেছেন ৭০৩ জন; যা ২১ দশমিক ০৯ শতাংশ। পুরুষ শনাক্তের হার ৭১ শতাংশ ও নারীর শনাক্তের হার ২৯ শতাংশ।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪ জন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। এ পর্যন্ত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের বয়স এবং শতকরা হার শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১৮ জন, যা দশমিক ৫৪ শতাংশ; ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩৩ জন, যা দশমিক ৯৯ শতাংশ; ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৮৭ জন, যা ২ দশমিক ৬১ শতাংশ; ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২১৪ জন, যা ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ; ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪৬২ জন, যা ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ; ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৯৫৩ জন, যা ২৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং ৬০ এর অধিক বয়সের রয়েছেন ১ হাজার ৫৬৬ জন, যা ৪৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টায় বিভাগভিত্তিক মৃতের সংখ্যা, ঢাকা বিভাগে ১৩ জন, খুলনা ৫ জন, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে ৩ জন করে, রংপুর বিভাগে ২ জন এবং বরিশাল বিভাগে ১ জন। এ পর্যন্ত বিভাগ অনুযায়ী মারা গেছেন, ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৫৯৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৯৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ২০৫ জন, খুলনা বিভাগে ২৪৭ জন, বরিশাল বিভাগে ১৩১ জন, সিলেট বিভাগে ১৫৬ জন, রংপুর বিভাগে ১৩২ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৭১ জন।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৮৩ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৯৩ জন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২২১ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ২১ জন। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬৫৫ জন এবং আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৯৪ জন। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ২৪৮টি, রোগী ভর্তি আছে ৩ হাজার ৯৫৯ জন এবং শয্যা খালি আছে ১১ হাজার ২৮৯টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৩৯টি, রোগী ভর্তি আছে ৩০৮ জন এবং খালি আছে ২৩১টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৫২০টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৩৪৫টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১৬০টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না- এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে যুক্ত হয়েছেন ৮১৫ জন এবং আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়েছেন ৮৩৮ জন। এ পর্যন্ত মোট আইসোলেশনে গেছেন ৫৫ হাজার ১৭৫ জন, ছাড় পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৫২৪ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৮ হাজার ৬৫১ জন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬০ জন, ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ২৮১ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে গেছেন ৪ লাখ ৪৮ হাজার ১৩৮ জন, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড় পেযেছেন ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৫২৯ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫২ হাজার ৬০৯ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৬৩৪টি, ৩৩৩ এই নম্বরে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৫৯ হাজার ৭১৬টি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইনে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘন্টায় ৪০৪টি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৭০ হাজার ৭৫৪। এ পর্যন্ত হটলাইনে ফোনকল এসেছে ১ কোটি ৮৩ লাখ ৯৬ হাজার ২০২টি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ৭৬৫ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ৭৪ হাজার ১৫ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্যকর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৩ হাজার ৭ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৮ লাখ ৬ হাজার ৫৭৮ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৬ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬১ হাজার ২৮৮ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ লাখ ৬০ হাজার ৭২১ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৩ জন এবং এ পর্যন্ত ৪৯ হাজার ৫৭২ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৬ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪৪ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৮৬ লাখ ১৪ হাজার ১৭৭ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ হাজার ৪৮৮ জন এবং এ পর্যন্ত ৭ লাখ ২ হাজার ৬৪২ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
ডা.নাসিমা সুলতানা বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।