আগামী মাস থেকে শুরু সাংগঠনিক পুনর্গঠন

করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামলিয়ে ফের মাঠে ফিরছে রাজনীতি। ভার্চুয়াল রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসছে দলগুলো। ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়গুলোতে। শত শত নেতাকর্মীর আড্ডাও আগের মতো জমে উঠেছে।

দলীয় কর্মসূচিতেও বাড়ছে তাদের উপস্থিতি। শুধু তাই নয়, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাস থেকে সাংগঠনিক পুনর্গঠনও আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করবে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো। পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর কিভাবে দ্রুত স্থবিরতা কাটানো যায় সেই কৌশলও চূড়ান্ত করছেন দলগুলোর নীতিনির্ধারকরা। করোনাভাইরাসের কারণে মার্চ থেকে অনেকটা লকডাউনে (অবরুদ্ধ পরিস্থিতি) চলে যায় রাজনীতি।

সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন কিংবা স্লোগান- রাজনীতির এমন চিরচেনা চিত্র রাজপথে দেখা যায়নি। করোনা সংক্রমণের মধ্যেই দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে জুন থেকে অফিস-গণপরিবহনসহ প্রায় সবকিছু সীমিত পরিসরে খুলে দেয়া হয়। বর্তমানে অফিস, আদালত, গণপরিবহনসহ সবকিছুই পুরনো রূপে ফিরেছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ফিরে আসছে।

আপাতত বড় পরিসরে গণজমায়েত না করলেও ঘরোয়া আলোচনা সভা, মানববন্ধনসহ দলীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি আরও কিছুটা স্বাভাবিক হলে রাজপথে পুরোদমে নামার চিন্তা রয়েছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যুগান্তরকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে এই বছরজুড়ে আমাদের বিস্তারিত কর্মসূচি ছিল। এছাড়া তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর কাজ আমরা শুরু করেছিলাম।

যা অনেকদূর এগিয়েও গেছে। এখন করোনার পাশাপাশি দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা ও বন্যায় অসহায় মানুষের সুরক্ষা এবং মানবিক সহায়তা দেয়াই এখন আমাদের রাজনীতি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, করোনা মহামারী সবকিছুর মতো রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বিশাল ধাক্কা দেয়। বেশ কয়েক মাস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তেমনটা ছিল না বললেই চলে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করা হয়েছে। ধীরে ধীরে রাজনীতি মাঠে গড়াচ্ছে। প্রতিদিন শত শত নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ে আসছেন। বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতারা সাংগঠনিক গতি ফেরানোর কৌশল নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন।

তিনি বলেন, করোনার কারণে আমরা কয়েক মাস সাংগঠনিক পুনর্গঠন স্থগিত রেখেছি। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ স্থগিতাদেশ রয়েছে। এরপর দলের নীতিনির্ধারকরা বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আশা করা যায়, ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্গঠন ফের শুরু হতে পারে। বিএনপির পুনর্গঠন স্থগিত থাকলেও অঙ্গ সংগঠনগুলো কাজ করে যাচ্ছে।

করোনা সংকট শুরুর পর থেকে সব সাংগঠনিক কর্মসূচি স্থগিত রেখেছিল আওয়ামী লীগ। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও ধীরে ধীরে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করছে দলটি। আগস্ট মাসের শুরু থেকে প্রায় প্রতিদিনই ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক বা একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। সীমিত পরিসরে হলেও এসব কর্মসূচিতে নগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি থাকছে।

আর নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় আবার আগের মতো সরব হতে শুরু করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়েও একই দৃশ্য।

১৭ আগস্ট থেকে শূন্য হওয়া পাঁচ আসনের উপ-নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমাদানের কার্যক্রম শুরু পর থেকে সেখানেও ভিড় বাড়তে থাকে। বেশির ভাগ প্রার্থীই কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন করে দলীয় মনোয়ন ফরম ক্রয় ও জমা দিতে দেখা গেছে। ফলে আবার আগের মতোই জমে উঠছে দলীয় সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়। শিগগিরই এই আসনগুলোর দলীয় প্রার্থী চূড়ান্তে মনোনয়ন বোর্ডের সভা ডাকা হবে। এছাড়া আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ মাসের ২৯ বা ৩০ তারিখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভা ডাকবে আওয়ামী লীগ। তবে এই মিটিং সরাসরি গণভবনে হবে নাকি ভার্চুয়াল হবে নাকি সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া করোনার কারণে বেশ কয়েক মাস আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিং হয় না। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে (১০ তারিখের মধ্যে) কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিং ডাকা হতে পারে।

সেখানেই দলের পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিভাবে পরিচালনা করা হবে তা নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া সেপ্টেম্বর মাসেই পর্যায়ক্রমে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ সম্মেলন হওয়া অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। করোনার কারণে অনেক জেলায় সম্মেলন করা যায়নি।

সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে যুবলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ ও মৎস্যজীবী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এছাড়া করোনা সংকটের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও তাঁতী লীগের কমিটি। শিগগিরই এসব কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করবে দলটি।
একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, সাংগঠনিক কাজ কিন্তু চলমান বিষয়। এটা কখনও বন্ধ হয় না।

হয়তো কাজের গতি-প্রকৃতি ধরন গতিপথ এগুলোর পরিবর্তন হয়। যেমন এখন করোনা সংকট, এর মধ্যে আম্পান এলো, এখন আবার বন্যা এসেছে। যখন যেগুলো আসবে তা মোকাবেলা করেই রাজনীতি চলবে। ফলে সাংগঠনিক কাজ কিন্তু চলমানই আছে। তবে হ্যাঁ, কমিটি গঠন, কাউন্সিল এগুলো হয়তো হচ্ছে না। আমি মনে করি, সময় ও পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে এগুলো আবার শুরু হবে।

এদিকে করোনার কারণে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও অনেকটা স্থবির ছিল। সীমিত পরিসরে কিছু কার্যক্রম চালানো হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় সাংগঠনিক পুনর্গঠন। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নেয়া হয় প্রযুক্তির সহায়তা। ভার্চুয়াল মাধ্যমে চলছে স্থায়ী কমিটির বৈঠক। কিন্তু সম্প্রতি সেই অবস্থা থেকে সরে এসেছে দলটি। শুধু ভার্চুয়াল মাধ্যমে নয়, দলীয় কর্মকাণ্ডে মাঠে সক্রিয় নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন ইস্যুতে প্রেস ক্লাব, নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনও শুরু করেছে দলটি।

১৯ আগস্ট জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারতে যান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সিনিয়রসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী বনানীতে তার কবর জিয়ারত করেন।

জানা গেছে, শুধু দলীয় কর্মকাণ্ডে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়ছে তা নয়। বিএনপি ছাড়া অঙ্গ সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে পুনর্গঠন কাজও শুরু করেছে। সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর উত্তরের নয়টি থানার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। যুবদলেরও কয়েকটি ইউনিটের কমিটি ঘোষণা ও বিলুপ্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ইডেন মহিলা কলেজসহ ছাত্রদলের চারটি ইউনিটের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর দ্রুত পুনর্গঠনে কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ