১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে কারবালার বিয়োগান্তক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে : প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা, ৩০ আগস্ট, ২০২০ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে কার্যত কারবালার বিয়োগান্তক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে এবং জিয়াউর রহমান ছিলেন ওই হত্যাকান্ডের নেপথ্য খলনায়ক।
জাতীয় শোক দিবস ও আশুরা উপলক্ষে আজ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ আগস্ট হত্যাযজ্ঞ ও কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনার মধ্যে বিস্ময়কর মিল রয়েছে।’
তিনি বলেন, নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র ও মুসলমনদের ইমাম হযরত হোসেন (রা.)-কে কারবালায় হত্যা করা হয় আর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরো বলেন, কারবালার ঘটনায় নারী ও শিশুদের হত্যা করা হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের ওই ঘটনায় নারী-শিশুদেরও রেহাই দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের কালরাতে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে শিশু ও নারীদেরও গুলি করে হত্যা করা হয়। এছাড়াও, ওই রাতে মিন্টু রোডে তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী ও আত্মীয়দেরও হত্যা করা হয়।
আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই আলোচনা সভায় অংশ নেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সচিবগণও তাঁর সঙ্গে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগ যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। আলোচনা সভার পর এক বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং ঢাকা দুই সিটি ইউনিটের নেতা-কর্মীরা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলীয় কার্যালয় থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় অংশ নেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ইমাম হোসেন (রা.)-এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ‘হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রা.)-কে ৬৮০ সালের ১০ মুহররম কারবালার ময়দানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কারণ তিনি ন্যায়ের পথে ছিলেন।’
আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি’র সভাপতি বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির আলোচনা সভাটির সঞ্চালনা করেন।
সভার শুরুতে বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের অন্যান্য শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যাকারীরা তাদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য এবং গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাতকারে এই হত্যাযজ্ঞে জিয়ার সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্য ও তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোস্তাকও এই ষড়যন্ত্রের সাথে সম্পূর্ণ জড়িত ছিলেন। ইতিহাসের পাতায় বিশ্বাসঘাতক হিসেবে তার নাম লেখা থাকবে। এই জঘন্য হত্যাকান্ডের পরপরই মোস্তাক নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া খন্দকার মোস্তাকের বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন। আর এ কারণেই তিনি জেনারেল শফিউল্লাহ্’কে সরিয়ে জিয়াকে সেনা প্রধান করেন।
তিনি বলেন, ‘খন্দকার মোস্তাক বঙ্গভবনে থাকাকালে জিয়া ঘনঘন সেখানে যাতায়াত করতেন এবং বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সাথে বৈঠক করতেন। এই সব ঘটনা মানুষের সামনে এখন বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সাথে জিয়ার সম্পৃক্ততা প্রমাণ করে দিয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনী ফারুক, রশিদ, নূর, হুদা, শাহরিয়ার, মোসলেউদ্দিন, রাশেদ, পাশা, খায়রুজ্জামান এবং এরকম আরো কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘আমি জানি না জাতির পিতাকে হত্যা করে তারা (হত্যাকারীরা) কি জঘন্য আনন্দ পেয়েছে… এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে তারা কি পেয়েছে এবং কার কাছ থেকে তারা এত বড় সাহস পেয়েছে?
বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা আরও প্রশ্ন করেন, জাতির পিতার অপরাধ কি ছিল?
তিনি বলেন, এটাই কি তার অপরাধ ছিল যে, তিনি একটি জাতির স্বাধীনতা নিয়ে এসেছিলেন এবং আত্মপরিচয় লাভের সুযোগ দিয়েছিলেন। এটাই কি তার অপরাধ ছিল, তিনি জনগণকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং একটি উন্নত জীবন উপহার দিতে চেয়েছিলেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান নামে রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধুর ব্যাপক অবদান রয়েছে। তিনি বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) সংগ্রাম করেছেন এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দেখা গেলো যে, বাঙালিরা শোষিত ও বঞ্চিত হচ্ছে এবং তিনি বাঙালিদের শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্ত করার জন্য সংগ্রাম শুরু করেন এবং এই সংগ্রাম শুরু হয় ১৯৪৮ সালে যখন আমাদের মাতৃভাষা ছিনিয়ে নিতে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বারবার জেলে গেছেন। কেন তিনি তার জীবনে এতো আত্মত্যাগ করেছেন? এই আত্মত্যাগ ছিল শুধুমাত্র বাংলাদেশের জনগণের জন্য।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দলের অসংখ্য নেতা-কর্মী সংগ্রাম করেছেন এবং তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি বলেন, তাদেরকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, কিন্তু তারা মতাদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি এবং তারা একটি লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে গেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু এই লক্ষ্য অর্জন করতে একটি পরিকল্পিত উপায়ে প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি ধাপে ধাপে এগিয়ে গেছেন এবং বারবার বাঙালিদের দাবি উত্থাপন করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু ক্ষুধার্ত মানুষের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, কিন্তু তিনি নিজের দিকে তাকাননি বা নীতি ও আদর্শের সঙ্গে আপোস করেননি। কারণ তিনি জনগণ ও তাদের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেছেন এবং এই দাবি স্বাধীনতাপ্রেমী জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল যে, ছয় দফা দাবিতে তাদের স্বাধীনতার বীজ বপন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা সেই মূহুর্তে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন যখন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বাঙালিদের উপর হামলা শুরু করেছিল।
তিনি আরো বলেন, ‘এর আগে ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু জাতিকে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার উপায় সম্পর্কে নির্দেশনা দেন এবং বাঙ্গালী জাতি এসব নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল।
শেখ হাসিনা স্মরণ করেন, জাতির পিতা যখন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তখন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাদের ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা চালায়। তিনি বলেন, পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে এবং তাকে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে কারাগারে আটক রাখা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানে কারাগারে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু যে বেদনা ও কষ্ট পেয়েছিলেন সেবিষয়ে তিনি সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট ছাড়া আর কারো সঙ্গে কথা বলেননি।
তিনি (বঙ্গবন্ধু) একটি সাক্ষাৎকারে ডেভিড ফ্রস্টের সঙ্গে কিছু কথা বলেছিলেন এবং আমরা তার কাছ থেকে (ফ্রস্ট) জেনেছিলাম যে, বঙ্গবন্ধুর পিঠে এবং মাথা থেকে পা পর্যন্ত রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের জেলে আটক থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর ওজন ৪০ পাউন্ড কমে গিয়েছিল। স্বাধীনতা লাভের পর ১০ জানুয়ারি যখন তিনি দেশে ফিরে এলেন, তখন তিনি একদম শুকনো হয়ে গিয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন, ‘ওই অবস্থায় থাকাকালে তিনি জানতেন যে, দেশ স্বাধীন হবে এবং তিনি সেখানে এতটুকুও মানসিক শক্তি হারাননি। জাতির পিতা তাঁর জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও তাঁর জনগণের মুক্তির জন্য সকল কষ্ট সহ্য করেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু সব দুঃখ-কষ্ট বরণ করে নেন, কিন্তু তাঁর মুক্তির বিনিময়ে তবুও কোন শর্ত মেনে নেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যখন জেলখানা থেকে মুক্তি পেলেন, তখন তিনি প্রথমে লন্ডন যান এবং সেখানে গিয়ে তাঁর বক্তব্য রাখেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ফিরে আসার পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১০ জানুয়ারির ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি ঘোষণা করেন কোন নীতি ও আদর্শেও ভিত্তিতে এবং কিভাবে দেশ পরিচালিত হবে। তিনি সমগ্র দেশের জন্য একটি রূপরেখাও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ গঠনের সকল ক্ষেত্রে ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। এছাড়া, তিনি খাদ্য, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যসেবাসহ সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে তাদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য প্রয়োজনীয় সকল আইন প্রণয়ন করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলেই বাংলাদেশ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে।
তিনি আরো বলেন, ‘এতো অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের অন্য কোন দেশ এত বেশি কিছু অর্জন করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কারণেই তা সম্ভব হয়েছিল।
এক শ্রেণীর লোক সব সময় গণতন্ত্রের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন তাদের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সংবিধান স্থগিত ও লংঘন করে এবং মার্শাল ল’ জারি করে ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা কিভাবে গণতন্ত্র দেবে।
১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসকদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আইয়ুব খান ও ইয়াহিয়া যা করেছিলেন, জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদ সেই একই কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘তাদের আমলে গণতন্ত্র শুধু মুখেই শোভা পেত। তখন কি দেশে গণতন্ত্রের চর্চা হতো? যারা মার্শাল ল’ এর মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে, তারা গণতন্ত্র দিতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আরো বলেন, ক্ষমতা দখল করার পর জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মীকে হত্যা করেন। এছাড়া, তার আমলে একের পর এক ক্যু হয় এবং তিনি এগুলোর মাধ্যমে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে জিয়া দেশে হত্যার রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করেন।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘জিয়া বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের নিয়োগ দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করেছিলেন। তখন কি গণতন্ত্র ছিল?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষিত মানুষ রয়েছেন যারা গণতন্ত্র খোঁজেন। যখন জরুরি অবস্থা আরোপ করা হয়েছিল বা সামরিক স্বৈরশাসকরা ক্ষমতা দখল করেছিল, তখন তারা কি এই কাজটি করেছিলেন?’
তিনি বলেন, ‘যখন এ ধরনের (অনির্বাচিত) সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল, তখন তারা গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছিল।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, এই সব লোকেরা সব সময় অনির্বাচিত সরকারের দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। তিনি বলেন, ‘যখন প্রকৃত গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বিদ্যমান থাকে, তখন তাদের কোন মূল্য থাকে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণই একটি সরকারের প্রধান লক্ষ্য, আর একমাত্র গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষেই এটা সম্ভব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, প্রথমবারের মতো দেশের জনগণ বুঝতে পারে যে, সরকার তাদের সেবক এবং জনকল্যাণে কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং আমরা তাঁর আদর্শ নিয়েই কাজ করছি।’
আদর্শভিত্তিক সংগঠন গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করে আওয়ামী লীগ প্রধান অনুপ্রবেশকারীদের দলে ঢুকতে না দেয়ার জন্য দলের নেতাদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, তাদের অপকর্মের কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়।
তিনি আরো বলেন, ‘কোন দল ক্ষমতায় থাকলে বিভিন্ন দিক থেকে কিছু লোক সেই দলে যোগ দেয়। দলে যোগদান করার পর তারা বিভিন্ন দুষ্কর্ম করে ও অপতৎপরতা চালায়। তখন দলকে তাদের দায়ভার নিতে হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কারণেই তিনি আগেই দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছিলেন যাতে সামরিক স্বৈরশাসকদের প্রতিষ্ঠিত দল থেকে আসা লোকজন বা যারা যুদ্ধাপরাধের সাথে সংশ্লিষ্টরা আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার সুযোগ না পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারণ, তারা যদি দলে ঢুকতে পারে, তবে তারা দলের ক্ষতি করবে, এই ধরণের ঘটনায় লিপ্ত হবে এবং আমাদের ভাল নেতাকর্মীদের খুন করবে। আর অভ্যন্তরীন কোন্দলে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছেও। কিন্তু সত্য উদঘাটন হলে দেখা গেছে যে, হঠাৎ করেই যারা দলে ঢুকেছে, তারাই এই সব অপরাধ ও অপকর্মগুলো ঘটিয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, তারা (অনুপ্রবেশকারীরা) খুব ভাল আচরণ করে যে, এতে অনেক দলীয় নেতা তাদের গ্রুপ শক্তিশালী করার জন্য তাদেরকে কাছে টেনে নেয়। এইভাবে তাদেরকে ভিতরে ঢুকতে দেয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সুসংগঠিত এবং যার বিপুল সমর্থক ও জনসমর্থন রয়েছে।
করোনা মহামারি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের সকল দেশের অর্থনীতিই এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে।
শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে আরো বলেন, করোনা মহামারি সত্তে¦ও, আমরা আমাদের কর্মকা- অব্যাহত রাখতে পেরেছি। এর ফলে রেমিটেন্স রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, মানুষ যেন দারিদ্রের কষাঘাত থেকে মুক্তি পেতে পারে সে লক্ষে সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাজেক ঘোষণা করেছি, যাতে করে আমাদের কৃষি, শিল্প, ব্যবসা, বাণিজ্য সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে। অর্থনীতির কর্মকা-ের চাকা সচল রাখার জন্য আমরা জিডিপি’র ৪ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য তাঁর দলীয় নেতাকর্মীসহ জনগণের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানান।
তিনি করোনাকালে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার কর্মীদেরকে ধন্যবাদ জানান।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ