সরকারি হিসেবে দেশে বস্ত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে আট হাজারেরও বেশি। আইনের আলোকে বস্ত্র অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয় ২০১৮ সালে। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন ছাড়াই ব্যবসা পরিচালনা করছে। বস্ত্র অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে বস্ত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে মোট ৮ হাজার ৪১৫টি। এর মধ্যে সুতা উৎপাদনকারী স্পিনিং প্রতিষ্ঠান আছে ৪২৫টি, কাপড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে ৭৯৬টি। বিশেষায়িত টেক্সটাইল ও পাওয়ার লুম প্রতিষ্ঠান আছে ৪৪৯টি। টেরিটাওয়েল প্রতিষ্ঠান আছে ১০৪টি। ডায়িং-প্রিন্টিং এবং ফিনিশিং প্রতিষ্ঠান আছে ২৪০টি। গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ শিল্প আছে ৯৫৫টি। রফতানিমুখী নিট ও ওভেন প্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ৩২৭টি। এছাড়া বস্ত্র শিল্পসংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান আছে ১১৯টি। সব মিলিয়ে বস্ত্র অধিদপ্তরের আওতায় মোট প্রতিষ্ঠান আছে ৮ হাজার ৪১৫টি। সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে আইন প্রণয়নের পর এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬৩২টি প্রতিষ্ঠান বস্ত্র অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিয়েছে। এর মধ্যে বস্ত্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ৪৯২টি। তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান আছে ৭৪৩টি। এছাড়া ৩৯৭টি বায়িং হাউজ নিবন্ধন নিয়েছে। এ হিসেবে মোট ১ হাজার ৬৩২টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিয়েছে বস্ত্র অধিদপ্তরের। এ হিসেবে নিবন্ধন ছাড়া বস্ত্র শিল্পে ব্যবসা পরিচালনা করছে ৬ হাজার ৭৮৩টি প্রতিষ্ঠান। জানতে চাইলে বস্ত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব দিলীপ কুমার সাহা বণিক বার্তাকে বলেন, বস্ত্র শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত সংখ্যা আট হাজারেরও অনেক বেশি হবে। কারণ নানা রকমের বস্ত্র ও বস্ত্র সহযোগী অ্যাকসেসরিজ, ছোটখাটো মিলিয়ে অনেক শিল্প আছে। সবাই নিবন্ধন নেয়নি। তাদের কেউ কেউ হয়তো নিবন্ধন নেয়ার বিষয়টি জানে না অথবা অন্যরা নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তার মুখোমুখি হয়নি। আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন আছে। এখন ব্যাংকে কোনো সহযোগিতা বা ঋণের জন্য বস্ত্র শিল্পের কেউ গেলে যদি বলা হয় যে আপনার প্রতিষ্ঠান বস্ত্র অধিদপ্তরের নিবন্ধিত কিনা তখন ওই প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের তাগিদ পাবে। আইন হওয়ার পরই নিবন্ধন নেয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন প্রতিদিনই নিবন্ধন পেতে আবেদন জমা হচ্ছে। কভিডের মধ্যেও নিবন্ধন বন্ধ ছিল না। অনেক বস্ত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে যারা নিবন্ধন ছাড়া ব্যবসায়িক কার্যক্রম সচল রাখতে পারছে, কোথাও আটকাচ্ছে না। কোনো প্রতিষ্ঠান না এলে আইনগতভাবেই সেই প্রতিষ্ঠানকে বাধা দেয়া আছে। নিবন্ধন না করে ব্যবসা করলে কী হবে এবং এ বিষয়ে আইনে কী বলা আছে তা দেখতে হবে। পোশাক খাতের সংযোগ শিল্প হিসেবে আশির দশকে দেশে গড়ে উঠতে থাকে রফতানিমুখী বস্ত্র কারখানা। এরই ধারাবাহিকতা গড়ে উঠেছে হোমটেক্সটাইল ও টেরিটাওয়েল পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পও। সরকারি কোনো আইন ছাড়াই গত ৩০ বছরে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ঘটেছে। ২০১৮ সালে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বস্ত্র অধিদপ্তরে বস্ত্র শিল্প খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। অনুমোদিত বস্ত্র আইনে বস্ত্র শিল্প বলতে বস্ত্র বা তৈরি পোশাক, বস্ত্র খাতের মূলধনি যন্ত্রপাতি, অ্যালাইড টেক্সটাইল ও প্যাকেজিং উপাদান উৎপাদন, বস্ত্র পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিং, গুদামজাতকরণ, আমদানি ও রফতানি, বিক্রয় ও বাজারজাত, বায়িং হাউজসহ সব কার্যক্রম। এছাড়া এতদসংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেও এর আওতাভুক্ত উল্লেখ করা হয়েছে। বস্ত্র অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে বস্ত্র শিল্পকে আনা হলেও উদ্দেশ্য হলো এ শিল্পের আরো বিকাশ ঘটানো। বেসরকারি খাত নিজ থেকেই বর্তমান পর্যায়ে বিকশিত হয়েছে। এখন এ বিকাশ আরো সুষম ও সুষ্ঠুভাবে যেন হয় সে বিষয়ে ভূমিকা পালন করবে পোশাক কর্তৃপক্ষ। অনুমোদিত আইন অনুযায়ী পোশাক কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন ব্যতীত বস্ত্র শিল্প-কারখানা পরিচালনা করা যাবে না। মিথ্যা তথ্য প্রদান বা প্রতারণার মাধ্যমে নিবন্ধন গ্রহণ করলে তা বাতিল হবে। এছাড়া শর্ত লঙ্ঘন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিলম্ব ফি ব্যতীত নিবন্ধন না করলে এবং কোম্পানি-সংস্থা-অংশীদার কারবার বা আইনগত সত্তার ক্ষেত্রে অবসায়ন হলেও নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল হবে। নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিতের কারণে কোনো লোকসান বা ক্ষতির জন্য ওই প্রতিষ্ঠান কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে না। বস্ত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হবে পোশাক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। পরিদর্শনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বস্ত্র শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী কারখানা পরিদর্শন করবেন। এক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে শিল্প মালিক কর্তৃপক্ষকে। সহযোগিতা না করলে তা হবে অপরাধ। পরিদর্শনে সুতা ও বস্ত্রের মজুদ কার্যক্রম, বাজারজাত এবং মূল্য স্থিতীকরণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং প্রয়োজন মনে করলে নির্দেশনা জারি করবে। পরিদর্শনের জন্য পোশাক কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলগত সক্ষমতা অর্জনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রমও গ্রহণ করবে সরকার।