সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভ

 

ধর্ষণ ও নির্যাতনের প্রতিবাদে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিভিন্ন নারী সংগঠনের সমাবেশ : নয়া দিগন্ত –


রাজধানী ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণ, শাহবাগ চত্বর, টিএসসিসহ বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিক্ষোভ, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধনসহ নানা ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করা হয় এ উপলক্ষে।
এ দিকে ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী ও মানবাধিকার সংগঠন এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করে।
সংসদ ভবন চত্বরে ধর্ষণ মোকাবেলায় ১০ দফা উত্থাপন
নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছে, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদ ভবন চত্বর। ‘প্রজন্মান্তরে নারীবাদী মৈত্রী’-এর ডাকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নারী-পুরুষ ব্যানার-ফেস্টুন ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে এই বিক্ষোভে অংশ নেয়। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বিষয়ে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১০ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
বেলা ৩টা থেকে নারী সংগঠনের সদস্যরা সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে মানিক মিয়া এভিনিউতে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রশাসনের অনুমতি না থাকায় সেখানে সভা-সমাবেশ করা যাবে না। কিন্তু বিক্ষোভে আসা নারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে যেকোনো স্থানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেয়ার অধিকার রয়েছে। তাই তারা সেখানেই অবস্থান করবেন। সমাবেশের বিষয়টি পরে ভেবে দেখা যাবে। কথা কাটিকাটির মধ্যেই বিক্ষোভে আসা মানুষের জমায়েত বাড়তে থাকে। বিকেল ৪টার দিকে শতশত নারী-পুরুষ ব্যানার ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড নিয়ে সেখানে মিলিত হয়। এরই মধ্যে সেখানে ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে, রুখে দাঁড়াও এক সাথে’, ‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে, রুখে দাঁড়াও এক সাথে’, ‘সইবো নাকো আমরা আর, নারীর উপর অত্যাচার’, ‘রক্ষা নয়, মুক্তি চাই’-এমন এমন সেøাগানে জমায়েত আরো বাড়তে থাকে। সমাবেশ চলাকালে ‘প্রজন্মান্তরে নারীবাদী মৈত্রী’র পক্ষ থেকে নারী পক্ষের প্রতিষ্ঠাতা শিরিণ হক ১০ দফা দাবি তুলে ধরে বলেন, মৃত্যুদণ্ড কোনো সমাধান নয়, ধর্ষণের সংস্কৃতি সমূলে উৎপাটন চাই।
দাবিনামায় বলা হয়, আমরা সব ধরনের লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার অবসান চাই, সেই সহিংসতা পুরুষতন্ত্র প্রভাবিত রাষ্ট্রীয় কাঠামো কর্তৃক সমর্থিত হোক বা যেকোনো পুরুষ বা পুরুষ দলের দ্বারা সংগঠিত হোক। সমাজের যেকোনো পরিসরে (কাঠামোগত, প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক বা ব্যক্তিগত) যৌন সহিংসতার ঘটনায় ভুক্তভোগীকে দায়ী করা চলবে না। পরিবারের পুরুষ সদস্যদের দ্বারা যেকোনো সহিংসতার জন্য পরিবার তাদেরকেই জবাবদিহি করবে। ধর্ষক কোনোভাবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র ও পরিবারে আশ্রয় ও প্রশ্রয় পাবে না। যেকোনো স্থানে, যেকোনো সময়ে, যেকোনো প্রয়োজনে, নারীরা চলবে নিরাপদে। পাঠ্যক্রমে যৌনশিক্ষার পাঠ বাধ্যতামূলক করতে হবে। সাইবার মাধ্যমকে ব্যবহার করে নারীর ওপর সহিংসতার বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে ধর্ষণের বিষয়টি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে আইন সংস্কার করতে হবে।
একই সাথে ‘ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট’ কর্তৃক প্রস্তাবিত ১০-দফা দাবিগুলো অনতিবিলম্বে মেনে নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। অর্থাৎ লিঙ্গ ও বয়স নির্বিশেষে বিনা সম্মতিতে যেকোনো যৌনকর্মকে অপরাধ গণ্য করে ধর্ষণের সংজ্ঞা সংশোধন করতে হবে। ভুক্তভোগীকে দায়ী করার সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা বন্ধে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ সংশোধন করতে হবে। ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীদের মামলা পরিচালনাকালে লিঙ্গীয় সংবেদনশীল আচরণ করতে পুলিশ, আইনজীবী, বিচারক ও সমাজকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগে গণঅবস্থান
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, রাজধানীর শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো। এ ছাড়া সারা দেশে মানববন্ধনসহ ধর্ষণবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে গতকাল শনিবার বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই সমাবেশ শুরু হয়। পূর্বঘোষিত এ সমাবেশ থেকে ৯ দফা দাবিতে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
তাদের দাবিগুলো হলোÑ সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ-নারীর প্রতি সহিংসতার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং ধর্ষণ, নিপীড়ন বন্ধ ও বিচারে ‘ব্যর্থ’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে; পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সামরিক-বেসামরিক সব ধরনের যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে; হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতনবিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে এবং সিডো সনদে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে, পাশাপাশি নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব আইন ও প্রথা বিলোপ করতে হবে; ধর্মীয়সহ সব ধরনের সভা-সমাবেশে নারীবিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করার পাশাপাশি সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে বিটিসিএলের কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে; তদন্তকালীন সময়ে ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং ভিকটিমের আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ও ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন সব মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করতে হবে; ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-১৫৫ (৪) ধারা বিলোপ করতে হবে এবং মামলার ডিএনএ আইনকে সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কার্যকর করতে হবে; পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যেকোনো প্রবন্ধ, নিবন্ধ, পরিচ্ছেদ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন পরিহার করতে হবে; গ্রামীণ সালিসের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
অবস্থান কর্মসূচির শুরুতেই নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে পুলিশবাহিনী এবং সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে বক্তারা বলেন, এখনো ধর্ষণ ও নিপীড়ন চলছে স্বাধীন বাংলাদেশে। যেভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের মা বোনকে ধর্ষণ করত, ঠিক একইভাবে স্বাধীন দেশেও ধর্ষণ চলছে। তাই ধর্ষণের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে। অবস্থান কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের ধর্ষণবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
আশুগঞ্জে মানববন্ধন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, নারী-শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে গতকাল বিক্ষোভ সমাবেশসহ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু টোলপ্লাজা গোলচত্বর এলাকায় আশার আলো নারী উন্নয়ন সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে এলাকাবাসী মানববন্ধনে অংশ নেয়।
আশার আলো নারী উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি জোসনা চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তানবির আজারের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, আশুগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো: মোজাম্মেল হক, আশুগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম সাচ্চু, আওয়ামী লীগ নেতা হাজী ছাঈদুর রহমান, যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান কবির, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো: শাহিন শিকদার, আলাল শা’ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোমানা ইয়াছমিন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি মো: কামাল হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা সজিবসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বক্তারা দেশব্যাপী নারী-শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনার সাথে জড়িত দুর্বৃত্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
ফেনীতে সুজনের মানববন্ধন
ফেনী অফিস জানায়, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক ফেনী জেলা শাখার আয়োজনে মানববন্ধনে বক্তারা বলেছেন, ধর্ষণ-নিপীড়নসহ যেকোনো ধরনের অপরাধ সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। এসব ক্ষেত্রে দল-মত ভেদাভেদ ভুলে নাগরিকদের স্বোচ্চার হতে হবে। তারা ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অবিলম্বে কার্যকর এবং দেশব্যাপী ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতনকারীদের দ্রুততম সময়ে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
গতকাল শনিবার বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শহরের ট্রাংক রোডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন অংশ নেন। সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট লক্ষণ বণিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বিমল কান্তি পাল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও ডায়াবেটিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মোতালেব, ফেনী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রবিউল হক রবি, শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী, ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আলম প্রমুখ।
ঝালকাঠিতে মানববন্ধন
ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠিতে ধর্ষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন ও নারীর প্রতি সহিংসার প্রতিবাদ এবং দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন। গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে একাত্মতা প্রকাশ করে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ অংশ নেয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের জেলা শাখার সভাপতি ইলিয়াস সিকদার ফরহাদ, সাধারণ সম্পাদক মঈন তালুকদার, সদর উপজেলা শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, পৌর শাখার সভাপতি আনিসুর রহমান পলাশ, সাধারণ সম্পাদক আক্কাস সিকদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিল, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত দাস হরি, নারী নেত্রী ডালিয়া নাসরিন, নাছিমা কামাল ও ইয়ুথ অ্যাকশন সোসাইটির সমন্বয়কারী শাকিল হাওলাদার রনি। সমাবেশে বক্তারা সারা দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি ঝালকাঠিতে স্বর্ণকিশোরী খেতাবপ্রাপ্ত কলেজছাত্রী নাছরিন আক্তার সারার ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও দোষীকে গ্রেফতারের দাবি জানান।
রাজশাহীতে মানববন্ধন
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, সারা দেশব্যাপী নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের প্রতিবাদে ও জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রাজশাহী মহানগর নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরের দিকে নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
রাজশাহী মহানগর নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, রাজাশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী বার সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ তৌফিক জাহেদী, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ওয়ালিউল হক রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক সাফিকুল ইসলাম শাফিক, জিয়া পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব প্রফেসর সেলিম আরিফ, রাজশাহী মহানগর নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য প্রফেসর ড. মাসুদুল হাসান খান মুক্তা ও জাসাস রাজশাহী মহানগর সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নারী ও শিশুরা নিরাপদ নয়। প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো স্থানে নারী ও শিশু ধর্ষিত হচ্ছে। আর এর সাথে জড়িত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।
কুড়িগ্রামে প্রতিবাদ কর্মসূচি
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, সারা দেশে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় ধর্ষকদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবিতে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা জাতীয় যুব সংহতির ব্যানারে এ মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন,জেলা জাতীয় যুব সংহতি জেলা শাখার আহ্বায়ক প্রভাষক শামছুজ্জোহা চৌধুরী সাজু, সদস্যসচিব লুৎফর রহমান, শ্রমিক পার্টির সভাপতি মজনু রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক হৃদয় আলী, ট্রাক শ্রমিক শাখার সম্পাদক মীরাণ মিয়া ও জাপা নেতা আয়নাল হক, তসলিম উদ্দিন, বাঘা চন্দন প্রমুখ।
বরিশালে সাংস্কৃতিক সমাবেশ
বরিশাল ব্যুরো জানায়, দেশব্যাপী অব্যাহত ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বরিশালে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেছে উদীচী শিল্পিগোষ্ঠী। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১০টায় নগরীর সদর রোডে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এ সময় বক্তারা বলেন, দেশব্যাপী নারীর প্রতি যে সহিংসতা চলছে, এই সহিংসতার বিরুদ্ধে ও বিচারের দাবিতে আজ আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে বটে কিন্তু নারীর প্রতি সহিসংসতা বেড়েই চলছে। যে সমস্ত দুর্বৃত্তরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিংবা অবৈধ অর্থের প্রভাবে এ ধরনের কাজ করছে, আমরা তাদের বিচার দাবি করছি। নারী ও শিশু নির্যাতন আইন সংশোধন করে এদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান বক্তারা।
খুলনায় নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের মানববন্ধন
খুলনা ব্যুরো জানায়, দেশব্যাপী নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের প্রতিবাদে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম খুলনা মহানগর শাখা গতকাল শনিবার নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করে। কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম খুলনা মহানগর আহ্বায়ক ও কেসিসির সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি। পরিচালনা করেন সদস্য সচিব নারীনেত্রী রেহানা আক্তার। প্রধান অতিথি ছিলেন নগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকট এস এম শফিকুল আলম মনা। বক্তৃতা করেন অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, শিক্ষক নেতা অধ্যাপক মনিরুল হক বাবুল, বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান মন্টু, শেখ আব্দুর রশিদ, নিজামুর রহমান লালু, সিরাজুল হক নান্নু, এ কে এম শহীদুল ইসলাম, আইনজীবী ফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা, অ্যাডভোকেট কানিজ ফাতেমা আমিন, কাওছারী জাহান মঞ্জু, কেসিসির সাবেক কাউন্সিলর আনজিরা খাতুন। দুই দিনব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা বলেন, নারী-শিশু ধর্ষণ-নির্যাতনকারীদের শাস্তির বিষয়ে সরকার নতুন আইন করতে যাচ্ছে। কিন্তু শুধু আইন করলেই হবে না, এ আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ