এক বছরেও পূরণ হয়নি শূন্যপদ

এক বছরেও পূরণ হয়নি শূন্যপদ

বিতর্কিত ও গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় অভিযোগে ছাত্রলীগের ৩২ নেতাকে অব্যাহতি দেয়ায় শূন্য হয় ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটির এই পদগুলো। অব্যাহতির এক বছর পূর্ণ হলেও ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এখনও পূরণ করেননি শূন্যপদগুলো। ফলে পদগুলোতে যোগ্যদের পদায়ন না করায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ পদপ্রত্যাশীরা।

ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের পর ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগে পূর্ণাঙ্গ মেয়াদে দায়িত্ব পালনের আগেই ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এই দুই নেতা। তাদের অব্যাহতির পর সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান যথাক্রমে আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য। তিন মাস ভারপ্রাপ্ত থাকার পর ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদের পূর্ণাঙ্গ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর আগে শোভন ও রাব্বানী দায়িত্ব পাওয়ার এক বছর পর ২০১৯ সালের ১৩ মে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। আর কমিটি ঘোষণার পরপরই প্রশ্ন ওঠে পদ পাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে। অভিযোগ ওঠে কমিটিতে যোগ্যদের স্থান না দিয়ে রাখা হয়েছে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি, মাদকসেবী, বিএনপি-জামায়াত ও রাজাকার পরিবারের সন্তান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিতে যুক্ত, বিবাহিত, সংগঠনে নিষ্ক্রিয় এবং অছাত্ররাও। এছাড়াও সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন ছাত্রলীগের বঞ্চিত ও পদ না পাওয়া নেতাকর্মীরা। পরে দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর জয়-লেখক কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বিতর্কিত ২১ জনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের পদ শূন্য ঘোষণা করেন। পাশাপাশি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও ১১ জনের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নথি জালিয়াতির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত বদলে দেয়ার অভিযোগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহসভাপতি তরিকুল ইসলাম মুমিনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। এর বাইরে বিভিন্ন সময় আরও চারটিসহ বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির মোট ৩৭টি পদ এখন শূন্য রয়েছে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন যুগান্তরকে বলেন, যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রলীগে যেসব শূন্যপদ রয়েছে সেগুলো পূরণ করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু অজানা কারণে সেটি কেউ করেনি। যা আমাদের মতো পদপ্রত্যাশিত ও পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের হতাশ করছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক উপদফতর সম্পাদক শেখ নকিবুল ইসলাম সুমন বলেন, নৈতিক স্খলন, স্বেচ্ছাচারিতার দায়ে শোভন-রাব্বানীর অপসারণের পরে জয়-লেখক নেতৃত্বের কাছে প্রত্যাশার পারদ অনেক বেশি ছিল। কিন্তু তারা সেটা পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। গত এক বছরে শূন্যপদ পূরণ ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, তাদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে তারা শোভন-রাব্বানীর দেখানো পথেই হাঁটতে পছন্দ করছেন। এভাবে ছাত্রলীগ চললে ভবিষ্যতে ভালো কর্মী খুঁজে পাওয়া দায় হবে। তাই অচিরে আমরা সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তাদের ব্যর্থতার ফিরিস্তি তুলে ধরব। যারা সামান্য শূন্যপদ পূরণ এবং দায়িত্ব বণ্টনে এক বছর লাগিয়ে দিতে পারে তাদের বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে শতভাগ সদিচ্ছা আছে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়! এ বিষয়ে জানার ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারাণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ