মন্ত্রিসভায় মহাসড়ক আইন-২০২০ এর খসড়ার নীতিগতভাবে অনুমোদিত

ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০ মহাসড়কে অনিয়ম দূর করার লক্ষে নানাবিধ দন্ডের বিধান রেখে ‘মহাসড়ক আইন-২০২০’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাথে সংযুক্ত হয়ে এই বৈঠক করেন। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
সচিব বলেন, আমাদের মহসড়কগুলো যে আইনে চলছিল সেটা ১৯২৫ সালের করা। ব্রিটিশ আমলে করা ৫টি ধারার সেই আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দেয়ায় নতুন এই আইন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দি হাইওয়ে এক্টস ১৯২৫’কে রোহিত করে একে যুগোপযোগী করে মহাসড়ক নির্মাণ, উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষন ও পরিচালনা এবং অবাধ সুশৃঙ্খল যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করার জন্য ‘মহাসড়ক আইন-২০২০’ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন এই আইনে মোট ১৯টি ধারা এবং ৪৬টি উপধারা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কেউ মহাসড়কের সংরক্ষণ রেখার মধ্যে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করলে দুই বছরের কারাদ- বা স্থায়ী স্থাপনার ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ টাকা আর অস্থায়ী স্থাপনার ক্ষেত্রে অনধিক ৫০ হাজার টাকা দ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবে।’
তিনি বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে অবকাঠামো নির্মাণ করলে, ফসল, খড় বা পণ্য শুকালে, ক্রসিং এরিয়া বাদে অন্য জায়গা দিয়ে হাঁটলে এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।’
‘অধিদপ্তরের বিনা অনুমতিতে বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, তোরণ বা এ ধরনের কিছু মহাসড়কে টাঙালে এবং ধীরগতির যানবাহনগুলো নির্ধারিত লেন ছাড়া মহাসড়কে উঠলে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে,’ বলেন তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগের মহাসড়কগুলো দুই লেনের ছিল এখন ক্রমে ফোরলাইনে যাচ্ছি কাজেই এখানে গাড়ি চলাচলের যে আন্তর্জাতিক গতিসীমা রয়েছে তা মেনে চলতে হবে, আন্ডার পাস এবং ওভারপাসের ব্যবস্থা রাখা, মহাসড়কগুলো থেকে বৃষ্টির পানি সরে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখা, পাশে ক্যানেল রাখা এবং সেখানে লীজ দিয়ে মাছ চাষের ব্যবস্থা করা এবং রোডসাইড প্ল্যান্টেশনের ব্যবস্থা করা (মেহেগনি বা দেবদারু) এবং সার্ভিস লেন রাখা।
এছাড়া নির্দিষ্ট দূরত্বে ফুয়েল ষ্টেশন এবং চালকদের জন্য রেস্ট জোন এবং রিফ্রেসিং জোন রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। এর ফলে হেড অন কলিশন তথা দুর্ঘটনা শতকরা ৮০ ভাগ হ্রাস পাবে, বলেন তিনি।
‘হজ¦ ও ওমরাহ ব্যবস্থপনা আইন, ২০২০’ এর খসড়ার অনুমোদন ও দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সচিব বলেন, এতদিন আমাদের হজ¦ ব্যবস্থাপনা চলতো একটা নীতিমালার মাধ্যমে। যে কারণে, অনেক অসুবিধা ছিল, নানা পদক্ষেপ নিতে হতে। দেখা যেত কোন পদক্ষেপ বা অনেকগুলো পদক্ষেপ নেয়া হলে অভিযুক্তরা হাইকোর্টে গিয়ে ইনজাংশন বা স্ট্যাটাসকো নিয়ে আসতো। এছাড়া, ২০১১ সাল থেকে সৌদি আরব সম্পূর্ণ হজ¦ ব্যবস্থপনা পরিবর্তন করেছে। যে কারণে ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া বা মালয়েশিয়া আইন করে ফেলেছে।
যে কারণে, আমাদের হজ¦ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি আইনি কাঠামোর প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ২০১২ সালে এ বিষয়ে মন্ত্রিসভার একটি নির্দেশনা ছিল নীতিমালার পরিবর্তে আইন প্রণয়নের।
আইনের উদ্দেশ্য পূরণে হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সরকারের ওপর ন্যস্ত থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সরকার হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে সৌদি সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি, সমঝোতা ও সম্মতিক্রমে সৌদি আরবের যেকোনো স্থানে হজ অফিস স্থাপন ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে। এই আইনের অধীনে নিবন্ধন ছাড়া কেউ কোনো হাজী বা হজের কোনো কিছু পরিচালনা করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ যদি দেখে কেউ অনিয়ম করছে তবে উপযুক্ত তদন্ত ও শুনানি করে হজ ও ওমরাহ এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। সরকার দৈব-দুর্বিপাক, মৃত্যু, দুর্ঘটনা, হজযাত্রীদের আকস্মিক প্রয়োজন পূরণ ও অপ্রত্যাশিত ব্যয় নির্বাহের জন্য একটি আপদকালীন তহবিল গঠন করবে।’
তিনি বলেন, ‘হজের চুক্তি এখানে হওয়ার পর কেউ গিয়ে যদি ওই দেশেও (সৌদি আরব) ঠকায় সেই অপরাধ এখানে করা হয়েছে বলে গণ্য হবে। ফৌজাদারী অপরাধের ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।’
এছাড়া, এদিন মোংলা বন্দর কতৃর্পক্ষ আইন-২০২০ এর খসড়ার চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ‘সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মহাসড়ক ল্যান্ডস্কেপিং নীতিমালা-২০২০’ এর খসড়ার এবং জিটিসিএল কতৃর্ক ধনুয়া-এলেঙ্গা এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়-নলকা গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্প এলাকায় গাছপালা কাটার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশে সামরিক শাসন বলবৎকালীন জারিকৃত অর্ডন্যান্সগুলো বাতিলে হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে ‘মোংলা পোর্ট অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬’ এর পরিবর্তে নতুন এই আইনটি নিয়ে আসা হয়েছে। এর আগে পায়রা বন্দর আইন যেমনটি হয়েছে অনেকটা সেরকমই এই আইনটি।
এই আইনে যে নতুন বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত হয়েছে সেগুলো হচ্ছে-প্রয়োজনে দেশের যে কোন স্থানে কতৃর্পক্ষের কার্যালয় স্থাপনের বিধান, কতৃর্পক্ষের দায়িত্ব পালনের সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কমিটি গঠনের বিধান, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে বন্দরের বিভিন্ন স্থান ও স্থাপনাকে সংরক্ষিত রাখার বিধান এবং বন্দরে পণ্য বোঝাই, খালাস, সংরক্ষণের এবং সরবরাহের জন্য প্রয়োজন বোধে প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ পূর্বক অপারেটর নিয়োগের বিধান সংযোজন করা হয়েছে।
সচিব বলেন, বন্দরের কোন স্থাপনা বা সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিধি দ্বারা নির্ধারিত মেয়াদ, শর্ত ও পদ্ধতিতে অনুমতি প্রদানের বিধান সন্নিবেশিত করা হয়েছে (যে বিধান আগে ছিল না, আগে সরকারই পরিচালনা করতো। এখন সরকার আউট সোর্সিং করতে পারবে বা টেন্ডারের মাধ্যমে ব্যক্তিখাতে দিতে পারবে), টোল, রেট ইত্যাদি ফাঁকির জন্য দন্ড, কোম্পানী কতৃর্ক অপরাধ সংগঠন, ফৌজদারী কার্যবিধির প্রয়োগ-প্রভৃতি।
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ‘টোল, রেট ইত্যাদি ফাঁকির জন্য দন্ড, কোম্পানির অপরাধ সংগঠন, ফৌজদারি কার্যবিধির প্রয়োগ-এগুলো রাখা হয়েছে। এখানে যে অপরাধ হবে সেগুলো ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী বিচার হবে। মোবাইল কোর্টেরও বিধান রাখা হয়েছে।’
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘গ্যাস নেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে ২০ ইঞ্চি ব্যসার্ধের গ্যাসলাইনে কাজ হচ্ছে না। আমাদের ৩০ ইঞ্চি লাগবে। এ জন্য নতুন লাইন করা হচ্ছে। এই গ্যাসলাইন যাবে নতুন যে রেল ব্রিজ হচ্ছে সেটার ওপর দিয়ে। এরপর স্টেশন থেকে বিতরণ করা হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তাছাড়া আগের আইনের কিছু ধারা যেগুলো এখন আর প্রযোজ্য নয় সেগুলো বাতিল করা হয়েছে।
‘সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মহাসড়ক ল্যান্ডস্কেপিং নীতিমালা-২০২০’এর খসড়ার অনুমোদন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভূপ্রকৃতির সাথে মানানসই পরিবেশ, ঐতিহাসিক ভবন, প্রত্নতাত্বিক ঐতিহ্য, জীব বৈচিত্র সব কিছুই ল্যান্ডস্কেপিং এর সাথে সমন্বয় রেখে সংরক্ষণ করতে হবে।
তিনি বলেন, বনাঞ্চলে মহাসড়ক করার ক্ষেত্রে ন্যূনতম বৃক্ষ অপসারণের বিষয়টি বিবেচেনায় রাখতে হবে। বন্য প্রাণির যাতায়াতের এলাকা রাখতে হবে, একটি গাছ কাটলে পাঁচটি গাছ লাগাতে হবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ