ঢাকা শেখ হাসিনা দেশে বীমার সম্প্রসারণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ এবং সেবা প্রদানে গ্রাহক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে বীমা কোম্পানীগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বীমা একটি সেবামূলক পেশা। গ্রাহক স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার পাশাপাশি একে জনপ্রিয় ও জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি বীমা কোম্পানীগুলোকে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের সাথে একযোগে কাজ করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি)-তে আজ জাতীয় বীমা দিবস-২০২১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি দেয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি জনগণ যাতে সংকটকালীন সময়ে বীমা পলিসি খুলে সুবিধা পেতে পারে সে জন্যে তথ্য দিয়ে তাদের বীমা সম্পর্কে সচেতন করতে বীমা কোম্পানীগুলোকে নির্দেশ দেন।
তিনি কোম্পানীগুলোর উদ্দেশ্যে আরো বলেন, জনগণ যাতে বীমার বিষয়ে উৎসাহিত হয়, সে লক্ষ্যে তাদের সচেতন করতে আপনাদেরকে আরো ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।
‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, বীমা হোক সবার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ দেশজুড়ে যথাযথভাবে জাতীয় বীমা দিবস-২০২১ পালিত হচ্ছে।
স্বাধীনতার মহান রূপকার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বীমাকে পেশা হিসেবে নিয়ে ১৯৬০ সালের ১ মার্চ আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে যোগ দেন।
এই দিনটির স্মরণে সরকার প্রতিবছর ১ মার্চ জাতীয় বীমা দিবস পালন করছে।
এই দিন বীমা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্যে চার বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বিশেষ সম্মাননা জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল এমপি এই চার বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন এবং চার ছাত্রের মাঝে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমাও বিতরণ করেন। মোট ৫০ হাজার ছাত্রকে এই বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা দেয়া হচ্ছে।
মুস্তাফা কামালের সভাপতিত্বে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এছাড়া, বাংলাদেশ বীমা সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন।
অনুষ্ঠানে বীমা খাতের ওপর একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতির যত বিস্তৃতি ঘটবে, বীমার গুরুত্বও ততই বৃদ্ধি পাবে, আর এ জন্যই জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য বীমা কোম্পানিগুলোর আরো বেশি উদ্যোগ নেয়া উচিত।
শেখ হাসিনা বীমা কোম্পানিগুলো থেকে সময়মতো অর্থ পরিশোধের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘মানুষ যেন তাদের বীমা অথবা ক্ষতি অনুযায়ী যথাযথভাবে বীমার অর্থ পেয়ে যায় তা নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে কিছু মানুষের প্রবণতাই হচ্ছে- সাজানো দুর্ঘটনার মাধ্যমে বীমা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করা। এই মুহূর্তে এ ধরনের প্রবণতা কমেছে বা বন্ধ হয়ে গেলেও কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে আরো সতর্ক থাকতে হবে এবং দক্ষ ও উপযুক্ত লোককে তদন্ত করতে পাঠাতে হবে।
জাতীয় বীমা নীতি-২০১৪ বাস্তবায়নে সরকারের সময় উপযোগী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে ‘প্রবাসী শ্রমিক বীমা’ চালু করা হয়েছে।
বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কাটিতে উঠতে দরিদ্র মানুষের জন্য সীমিত আকারে শস্য বীমা চালু করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘দেশে ব্যাপক আকারে স্বাস্থ্য-বীমা চালু করা প্রয়োজন। আমাদের জনগণ সচেতন নয়, কিন্তু আমি আশা করছি যে, তারা কোভিড-১৯ এর পর এ ব্যাপারে সচেতন হবে।’
মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’, বঙ্গবন্ধু নিরাপত্তা বীমা’ ও ‘বঙ্গবন্ধু স্পোর্টসম্যান’স কম্প্রিহেনসিভ ইন্স্যুরেন্স’ চালু করায় প্রধানমন্ত্রী ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট এন্ড রেগুলেটরি অথরিটি (ডিআইআরএ)-কে ধন্যবাদ জানান।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষা-বীমাকে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বা বাবা-মায়ের অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর পর এই বীমা তাদের শিক্ষা-জীবনকে নির্বিঘœ করবে।
বীমা খাতের উন্নয়নে সংক্ষেপে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষায় স্টেট-অব-দ্য-আর্ট প্রযুক্তি-ভিত্তিক সমন্বিত মেসেজিং প্লাটফরম চালু করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পাশাপাশি বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাকাডেমি, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন, জীবন বীমা কর্পোরেশন এবং আইডিআরএ কার্যক্রমে অটোমেশন চালু ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে ৬৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি বৃত্তি কর্মসূচির আওতায় অ্যাকটুয়ারিয়াল বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাঁচ জন শিক্ষার্থীকে যুক্তরাজ্যে পাঠাচ্ছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স (জাতীয়করণ) আদেশ-১৯৭২ জারি করে ৪৯টি দেশি-বিদেশি বীমা কোম্পানীকে জাতীয়করণ করে সুরমা, রূপসা, তিস্তা ও কর্ণফুলী নামে চারটি বীমা কর্পোারেশন গঠন করেছিলেন।
পরে, অল্প সময়ের মধ্যে তিনি দেশের বীমা শিল্পের উন্নয়নের প্রয়োজনে ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন আইন-১৯৭৩ প্রণয়ন করে জীবন বীমার জন্য জীবন বীমা কর্পোারেন এবং নন-লাইফ বীমা সেবা প্রদানের জন্য ‘সাধারণ বীমা কর্পোরেশন’ নামে দুটি পৃথক বীমা কর্পোরেশন গঠন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবন বীমা কর্পোরেশন ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশন এখনও মানুষকে বীমা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমিও জাতির পিতাই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ব্যাপারে তিনি কোভিড-১৯ এর টিকা নেয়ার পরও যথাযথভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধিমালা মেনে চলতে ও মাস্ক পরার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।