- ।। অজিত কুমার সরকার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যার জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না; যে নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি রাষ্ট্রের জন্মের ২৪ বছর আগে, যে নেতা একটি রাষ্ট্রের জন্মের আগেই ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ডিফ্যাক্টো হেড অব স্টেট (কার্যত রাষ্ট্রপ্রধান) হিসেবে পূর্ব বাংলা শাসন করছিলেন।
আর বঙ্গবন্ধুর যুগসৃষ্টিকারি ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালির মুক্তির সড়ক নির্মাণে ছিল অনন্য দূরদর্শী, যা আজ বিশে^র মুক্তিকামী মানুষ এবং মানব জাতির আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় উপাদানে পরিণত হয়েছে। ভাব, ভাষা ও শব্দ চয়নে এ এক মহাকাব্যিক ভাষণ। বিশ^খ্যাত নিউজউইক পত্রিকার ৫ এপ্রিল, ১৯৭১ সংখ্যার একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম দেওয়া হয়েছিল ‘পোয়েট অব পলিটিকস’ বা রাজনীতির কবি। এই রাজনীতির কবি হলেন বঙ্গবন্ধু। ওই প্রতিবেদনে ৭ মার্চের ভাষণের বর্ননা দিতে গিয়ে পত্রিকাটি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে লিখেছে, ‘৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার আপদমস্তক বাঙালি, ধূসর ঝাকড়া চুল, পুরু গোঁফ ও তীক্ষè দৃষ্টির অধিকারী মুজিব আবেগঘন বক্তৃতার দ্বারা ১০ লক্ষ মানুষকে যাদুমন্ত্রের মতো সম্মোহিত করে রাখতে পারতেন। উর্দু, বাংলা এবং ইংরেজি-এই তিন ভাষায় অনর্গল কথা বলায় পারদর্শী মুজিব একজন চিন্তাবিদ হওয়ার ভান করেনি, তিনি প্রকৌশলীও নন, তিনি রাজনীতির কবি। শৈল্পিক স্টাইলে তার বক্তৃতার মূল লক্ষ্য ছিল এ অঞ্চলের সকল শ্রেণি ও আদর্শের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা।’
অনেকেই বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে আব্রাহাম লিঙ্কনের গেটিসবার্গ অ্যাডড্রেসে সঙ্গে তুলনা করেন। লিঙ্কনের ভাষণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের অবসান এবং ঐক্যবদ্ধ মার্কিন জাতির অভ্যূদয় ঘটায়। কিন্তু, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাঙালির মুক্তির সড়কের পথ-নকশা নির্মাণ করে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশর অভ্যূদয় ঘটায়।
ইতিহাসের পর্যবেক্ষক জ্যাকব এফ ফিল্ড বিশ্বে যাদের ভাষণ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে এমন ৪১ জন দূরদর্শী ও অনলবর্ষী বক্তার বক্তব্য সংকলিত করে প্রকাশ করেছেন, ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস: দ্য স্পিচেস দ্যাট ইনসস্পায়ার হিস্টোরি’। জ্যাকব ইতিহাস সৃষ্টিকারি বক্তা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামানের ভাষণ এ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেন। আরও যাদের বক্তব্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম পেরিক্লিস, আলেকজান্ডার, হানিবল, জুলিয়াস সিজার, সালাদিন, নেপেলিয়ান, গ্যারিবল্ডি, আব্রাহাম লিঙ্কন, ভøাদিমির ইলিচ লেলিন, হো চি মিন।
২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
এই ভাষণে শব্দ ও বাক্য প্রয়োগে উঠে এসেছে একটি জাতির ইতিহাস, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, ২৩ বছরের শোষণ-বঞ্চনা-বৈষম্য এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলনে বাঙালিদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হবার কথা। ভাষণে উঠে এসেছে মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত সংগ্রামে অংশগ্রহণের কথা। কোন কৌশলে যুদ্ধ ও জনযুদ্ধ পরিচালিত হবে রয়েছে সে কথা। আরও রয়েছে যুদ্ধাবস্থায় সর্বস্তরের মানুষের করণীয় সম্পর্কে আগাম দিক-নির্দেশনা।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণে ‘২৩ বছরের ইতিহাস’ কথাটি দু’বার এসেছে। মূল বক্তব্যে পৌঁছার আগে তিনি প্রেক্ষাপট বর্ননা করেছেন কয়েকটি বাক্যে। বাঙালির রক্তে বারবার রাজপথ রঞ্জিত হবার কথা বলেছেন। ২৩ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের ঘটনাপঞ্জী ছিল: ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভের পরও প্রাদেশিক সরকার বাতিল, ১৯৫৬ সালে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি, ১৯৫৬ সালে পূর্ব বাংলার নাম বদল, ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি করে দমন-পীড়ন, ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬-দফা আন্দোলন, ১৯৬৭ সালে রবীন্দ্রনাথ নিষিদ্ধকরণ, ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার এবং ১৯৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান। এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশের রাজপথ রঞ্জিত হয়।
বঙ্গবন্ধু তার ভাষণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুক্তির কথা বলেছেন তিনবার। বলেছেন বাংলার মানুষের অধিকারের কথা। মুক্তি বলতে তিনি সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তিসহ জনগণের সার্বিক মুক্তির কথা বলেছেন।
প্রথমত, সাংস্কৃতিক মুক্তি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হলেও বাঙালিরা ছিল পরাধীন। ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত পাকিস্তান সৃষ্টির এক বছরের মধ্যে বাঙালির সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানে। বাঙালিরা সব সময়ই ভাষাভিত্তিক সাংস্কৃতিক বন্ধনে আবদ্ধ। বাংলা ভাষার ওপর আঘাত মানে সংস্কৃতির ওপর আঘাত। পাকিস্তানে ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষের ভাষা বাংলা। অথচ ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ মাত্র ৭ দশমিক ২ ভাগ মানুষের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেওয়া হয়। বাংলা ভাষার ওপর আঘাত আসায় শুরু হয় ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই দাবীতে ধর্মঘট পালনকালে সচিবালয়ের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন। পাকিস্তানে এটা ছিল তার প্রথম গ্রেপ্তার।
দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক মুক্তি: পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনামলে বাঙালির রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কখনও স্টিম রোলার চালিয়ে, আবার কখনও সামরিক শাসন জারি করে। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন থেকে বাঙালির স্বাদেশিকতার রাজনৈতিক অধিকার অর্জন বা পলিটিক্যাল ইনডিপেনডেন্স প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন।
তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক মুক্তি: সাতচল্লিশে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী জনসংখ্যার দিক থেকে পূর্ব পাকিস্তান বৃহত্তর হওয়া সত্ত্বেও সরকারি বাজেটের প্রায় পুরোটাই খরচ হতো পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য। বৈদেশিক সাহায্যের ৮০ ভাগই ব্যয় হতো পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য। চাল, আটা, তেলের দাম পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে পূর্ব পাকিস্তানে ছিল দ্বিগুণ। এসব বৈষম্য, শোষণ-বঞ্চনা, নির্যাতন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তি সনদ (ম্যাগনাকার্টা) ছয় দফা ঘোষণা করেন।
বঙ্গবন্ধু সত্তরের নির্বাচনের পর ইয়াহিয়া-ভুট্টোর আঁতাতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বঙ্গবন্ধু ভাষণে বলেন, ‘তিনি আমার কথা রাখলেন না। তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা।’ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল দেখে ভুট্টোর মাথা বিগড়ে যায়। এ নির্বাচনে আাওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয় অর্জিত হয়। নির্বাচনে ৩০০ আসনের গণপরিষদে জনসংখ্যা অনুপাতে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ১৬৭টি। আর পশ্চিম পাকিস্তানের ১৩১ আসনের মধ্যে জুলফিকার আলী ভুট্টোর পিপলস পার্টি পায় ৮১টি। প্রাদেশিক পরিষদে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ২৮৮টি। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা ডেজিগনেটেড প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ মুজিবের পরামর্শমতো ১৫ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদের অধিবেশন না ডেকে ভুট্টোর কথামতো ৩ ফেব্রুয়ারি অধিবেশন ডাকেন।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ^সী একজন মানুষ। ৭ মার্চের ভাষণেও এর প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই। তিনি গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছেন গণতান্ত্রিক ধারায়। ১৯৭১ সালের মার্চে সশস্ত্ররূপ লাভের আগ পর্যন্ত আন্দোলনকে সহিংসরূপ নিতে দেননি। ন্যায্যতার প্রতি ছিলেন অবিচল আস্থাশীল। সারাজীবন অন্যায্যতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেন, ‘যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও, একজন যদিও হয় তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব।’ ন্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া একজন নেতা সংখ্যালঘু, আবার তাও যদি একজনও হয় তা মেনে নেবার কথা বলতে পারেন?
বঙ্গবন্ধু খুব ভাল করেই জানতেন পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ জনগণের উপযুক্ত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষকে চারটি শর্ত জুড়ে দেন, যা পাকিস্তানের অস্তিত্বকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেয়। শর্তগুলো হলো: এক. সামরিক আইন মার্শাল ল’ উইথড্র করতে হবে; দুই. সামরিক বাহিনীর সমস্ত সদস্যকে ব্যারাকে ফেরত নিতে হবে; তিন. যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে; চার. জনগণের উপযুক্ত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন ভাল কমিউনিকেটর ও সুবক্তা। কোথায় কোন বক্তব্য দিতে হবে তা খুব ভাল জানতেন। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত, অডিয়েন্স (শ্রোতা) এবং মানুষের স্বপ্ন-আকাঙক্ষা বিবেচনায় নিয়ে শব্দ এবং বাক্যের প্রয়োগ করেছেন। যেমন ‘৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না’। আঞ্চলিক শব্দ সহযোগে আঞ্চলিক ক্রিয়াপদ ব্যবহার করেছেন। ‘দাবায়ে’ শব্দটি প্রমিত বাংলায় বললে বলতেন ‘দাবিয়ে’। কিন্তু দাবায়ে শব্দ অপ্রমিত অথচ গভীর অর্থবোধক ও শক্তিশালী শব্দ। সাধারণ মানুষের হৃদয়ে গ্রোথিত হওয়ার মতো শব্দ। ঠিক এমনিভাবে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি’। একেবারেই সাধারণ মানুষের মুখ নিসৃত কথাই যেন তাঁর মুখে উচ্চারিত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে জাগ্রত করেছেন। ‘এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি-নন বেঙ্গলি যারা আছে, তারা আমাদের ভাই’। বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। এই আন্দোলন নস্যাতে বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িকতাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। তাই, বঙ্গবন্ধুর ভয় ছিল পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ অতীতের ন্যায় সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিয়ে আন্দোলন বিভ্রান্ত বা বানচালের চেষ্টা করতে পারে। এ কারণেই তাঁর সাবধান বাণী। ‘মনে রাখবেন, শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটতরাজ করবে’।
তিনি ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয়বাংলা’ বলে বক্তব্য শেষ করেন। বঙ্গবন্ধু মুক্তি বলতে যে জনগণের সার্বিক মুক্তির কথা বলেছেন সে কথা আগেই বলেছি। বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন, বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানি শাসন-শোষণের কবল থেকে মুক্ত করতে হলে একমাত্র স্বাধীনতা ছাড়া আর কোন উপায়ে তা সম্ভব নয়। তাই, তার আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা। ৭ মার্চে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। প্রকৃতপক্ষে এটাই ছিল কার্যত স্বাধীনতার ঘোষণা। যে সময়ের মধ্যে তিনি এই ঘোষণা দেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ভাষায় সেই সময়কাল (১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ, ১৯৭১) হলো ডিফ্যাক্টো রিজিম, আর মুজিব হলেন ডিফ্যাক্টো রাষ্ট্র প্রধান। ওয়াশিংটন পোস্ট ২১ মার্চ ১৯৭১ সংখ্যায় ‘মুজিবুর: ভার্চুয়াল রুলার অফ ই.পাকিস্তান’ এবং ১০ মার্চ ‘দ্য ইভনিং স্টার পত্রিকায় ‘ডিফ্যাক্টো গভর্নমেন্ট ঢাকা ডিসিডেন্ট ইন পাওয়ার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
কৌশলী, বিচক্ষণ ও প্রজ্ঞাবান রাজনীতিক বঙ্গবন্ধু এমনভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন যাতে তার ওপর বিছিন্নতাবাদের দায় না আসে। একজন সিভিলিয়ান নেতা চমৎকারভাবে গেরিলাযুদ্ধের নীতি ও কৌশল তুলে ধরেছেন। একদিকে বলেছেন, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে, অপরদিকে জনগণকে চরম আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। হানাদার বাহিনীকে বাংলার মাটি থেকে চিরতরে উৎখাত করে বাংলাদেশ স্বাধীন করতে নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু। সেনাবাহিনীকে ক্যান্টনমেন্টে অবরুদ্ধ করে রাখার জন্য যা যা করা দরকার তার নির্দেশ ছিল ভাষণে।
বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল জয় বাংলা। জয় বাংলা বলে তিনি ভাষণ শেষ করেন। এই জয় বাংলা শুধু রণধ্বনি নয়, এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র যা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে। জয় বাংলা বলেই স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা আত্মহুতি দেয়। নয় মাসের রক্তস্নাত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের আবির্ভাব ঘটে।
অজিত সরকার, সাবেক সিটি এডিটর, বাসস