ঢাকা, শেখ হাসিনা মুজিব বর্ষে সংযুক্ত মাথার জমজ বোন রাবেয়া ও রোকেয়াকে সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে পৃথক করে তাদের সুস্থ শরীরে বাবা-মা’য়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়াকে বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন হিসেবে অভিহিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে রাবেয়া-রোকেয়া বাড়ি ফিরে যাবে, তাদের মা-বাবার কোলে হেসে খেলে বেড়াবে এটা সত্যি খুব বড় পাওয়া। যেখানে আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছি, ঠিক এই সময়ে এত বড় একটা সফল অস্ত্রপচার করা এবং সফলতা অর্জন করা এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বিরাট অর্জন।’
তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষে জোড়া মাথা থেকে মুক্তি পাওয়া রাবেয়া-রোকেয়া’র শুভ গৃহ প্রত্যাবর্তন সকলের জন্য আনন্দের এবং গর্বের।’
প্রধানমন্ত্রী আজ অপরাহ্নে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)-এ সংযুক্ত মাথা থেকে মুক্তি পাওয়া রাবেয়া-রোকেয়ার গৃহ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত সিএমএইচ-এর অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এই মাসে (মার্চ) বাঙালির ইতিহাসে অনেক কিছু ঘটেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্ম গ্রহন করেন, দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়, ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলন শুরু হয়েছিল, ’৭১ এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।
প্রধানমন্ত্রী যমজ শিশুদের জিজ্ঞেস করেন তারা কেমন আছে। উত্তরে বাচ্চাদের একজন জানায়, সে ভাল আছে এবং সে প্রধানমন্ত্রীকে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করায় প্রধানমন্ত্রী জবাব দেন তিনিও ভাল আছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ছোট বোন শেখ রেহানা তাকে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর দেখিয়ে যমজ শিশুদের সম্পর্কে অবহিত করার পরে তিনি সংযুক্ত শিশুদের চিকিৎসার উদ্যোগ নেন। রাবেয়া-রোকেয়া’র মত যমজকে পৃথক করার মত এক বড় অপারেশন বাংলাদেশে করার কারণ হলো, এখনকার চিকিৎসক এবং টেকশিয়ানদের একটা অভিজ্ঞতা হবে। ৪৮টি অপারেশন এবং ৩৬ ঘন্টা ধরে অপারেশন করা, এটা বিরাট ব্যাপার। হাঙ্গেরি থেকে আসা চিকিৎসকদের দলটি এখানে দীর্ঘদিন অবস্থান করে অপারেশনটা করেছে। আর সব থেকে ভাল লেগেছে এরা প্রত্যেকেই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি সকলের কাজের আন্তরিকতার প্রশংসা করে বলেন, প্রত্যেকেই এত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন যে, এটা আমি ভাষায় বর্ননা করতে পারবো না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে, প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত পারদর্শি যারা, তাদেরকেই একত্রিত করা হয়েছে। যাতে কোন রকম ফাঁক না থাকে। সব যেন ঠিকমত হয়। কারণ, এটা একটা জটিল অপারেশন ছিল।
তিনি বলেন, রাবেয়া এবং রোকেয়া জোড়া মাথা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘ক্রেনিয় পেগাজ’। এ ধরণের ঘটনা মাঝে মাঝে দেখা গেলেও আমাদের দেশে এটি পৃথক করার ঘটনা সম্পূর্ণ নতুন।
সেটি সলভাবে সম্পন্ন করতে পারায় সংশ্লিষ্ট সকলকেই আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সিএমএইচএ দীর্ঘদিন অপারেশন এবং রাবেয়া-রোকেয়ার বাবা-মা’কে সেখানে রাখা এবং এতবড় একটা অপারেশন করাটা একটা অত্যন্ত মানবিক কাজ, যা আপনারা করেছেন।’
তিনি রাবেয়া-রোকেয়ার জন্য সকলের দোয়া কামনা করে বলেন, আমি দেশবসীরও দোয়া চাই তারা যেন সুস্থ থাকে, ভাল থাকে এবং বাবা-মা’য়ের মুখে আনন্দ নিয়ে আসতে পারে।
২০১৯ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক মাইলফলক। এ দিনেই সিএমএইচ ঢাকায় জোড়া মাথা পৃথকীকরণের জটিল অপারেশনটি শুরু হয়। হাঙ্গেরী সরকারের সহযোগিতায় ‘একশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল ফাউন্ডেশন’এর সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাঙ্গেরীতে ছোট-বড় ৪৮টি অপারেশন সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে শিশু দু’টিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে এই অপারেশনের সবচেয়ে জটিল অংশ যমজ-মস্তিস্ক আলাদাকরণের কাজটি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকায় সম্পন্ন কর হয়।
এ ধরণের অপারেশন সারা বিশ্বেই বিরল এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রথম। অপারেশন পরর্বতী সাফল্যও বিশ্বে খুব বেশি নেই।
পিএমও সূত্র জানায়, ঢাকা সিএমএইচ শিশু দু’টির জন্য আজীবন চিকিৎসা সুবিধা কার্ড প্রদান করেছে, যাতে ভবিষ্যতে সিএমএইচসহ যে কোন সরকারি হাসপাতালে তারা বিনামূল্যে সব ধরণের চিকিৎসা সেবা পায়।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাষ্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
২০১৬ সালের ১৬ জুলাই রাবেয়া এবং রোকেয়া এই যমজ দুই বোন সংযুক্ত মাথা নিয়ে পাবনার স্কুল শিক্ষক দম্পতি রফিকুল ইসলাম এবং তাসলিমা খাতুনের ঘরে জন্মগ্রহণ করে।