অংশগ্রহণকারী এবং আয়োজকদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ‘অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদরা প্রতিটি ডিসিপ্লিনে যেন সর্বোচ্চ পারদর্শিতা দেখাতে পারেন এবং আগামীতে বিশ্ব অলিম্পিকসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পর্যায়ে নিজেদের গড়ে তুলতে পারেন সেজন্য আগামীতে তাঁর সরকার আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করবে।’ সেভাবেই দেশের খেলোয়াড়দেরকে তিনি তৈরী করতে চান বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী আজ সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস-২০২০ এর বর্নাঢ্য উদ্বোধনী অন্ষ্ঠুানে সকলকে করোনা সতর্কতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনেই গেমসে অংশ গ্রহণেরও আহ্বান জানান।
তিনি ভিডিও কনফারেন্সে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে ভার্চুয়ালি ক্রীড়া আসরটির উদ্বোধন করেন।
প্রায় সাড়ে ৫ হাজার অ্যাথলেট ৩১টি ক্রীড়ায় ১২৭১টি পদকের জন্য প্রায় ১০দিন ব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন। দেশের ৯টি শহরের ২৯টি ভেন্যুতে এই খেলা অনুষ্ঠিত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন থেকে যে ৩১টি ডিসিপ্লিনে খেলা অনুষ্ঠিত হবে তাতে প্রত্যেকে আপনারা স্বাস্থ্যসুরক্ষাটা একটু মেনেই চলবেন। কারণ, আমি চাইনা আপনারা কেউ কোন কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। যে কারণে, সকলকে বিশেষ করে যারা আয়োজক তাদেরকে আমি বলবো আপনারা এই বিষয়টা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবেন যাতে সকলেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই গেমসটি ২০২০ সালে হওয়ার কথা থাকলেও গতবার হঠাৎ করে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে গেলে বাধ্য হয়ে সেটি বন্ধ রেখে আমরা এবার আয়োজন করছি। যদিও আবার নতুনভাবে করোনা দেখা দেওয়ায় স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে নজর রেখে এই খেলাগুলো আয়োজনের জন্য প্রধানমন্ত্রী গেমস সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
গেমসের মশাল জাতির পিতার জন্মভূমি টুঙ্গীপাড়া থেকে প্রজ¦লন করায় তিনি বিওএ (বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন) এবং গেমস সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
বাঙালি স্বাধীন জাতি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই আমাদের এই স্বাধীনতা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে ভাষার জন্য আন্দোলন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাঙালি জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, বিওএ সভাপতি এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং বিওএ মহাসচিব সৈয়দ সাহেদ রেজা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী ক্রীড়াবিদদের মার্চ পাস্ট এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঞ্চে আসন গ্রহণের পর পরই জাতীয় সঙ্গীত বেজে ওঠে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ক্রীড়াবিদরা সারিবদ্ধ হয়ে মাঠে অবস্থান নেন, ক্রীড়াবিদদের শপথবাক্য পাঠ করান তীরন্দাজ রোমান সানা এবং বিচারকদের পক্ষে শপথবাক্য পাঠ করান সাবেক জুডো তারকা কামরুন্নাহার হিরু। ৩১টি ডিসিপ্লিনের ক্রীড়াবিদরা হাত নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
সকল অংশগ্রহণকারীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আগাম শুভেচ্ছা থাকলো যেন সফলভাবে আপনারা এটা সম্পন্ন করবেন এবং প্রত্যেকেই যেন আপনাদের পারদর্শিতা দেখাতে পারেন।
একটি জাতিকে উন্নত করতে হলে খেলাধূলাসহ সর্বক্ষেত্রে উন্নতি করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই খেলাধূলাটা আমাদের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে যুব, তরুণ সকলের জন্য একান্ত অপরিহার্য।
তিনি এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ছোট ভাইয়েরা পর্যন্ত খেলাধূলায় যুক্ত ছিলেন, নিজেরা খেলতেন এবং তিনি নিজেও নিজেকে একজন ক্রীড়ানুরাগী হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন ’৭৫ এর ঘাতক চক্র জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে সকল সম্ভাবনাকেই নস্যাৎ করে দেয়।
২১ বছর পর ’৯৬ সালে সরকারে এসেই তাঁর সরকার যুব সমাজকে খেলাধূলার প্রতি উৎসাহিত করতে চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সব ধরনের খেলাধূলার প্রতিই যুবসমাজকে উৎসাহিত করেছে, এমনকি দেশীয় খেলাধূলার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর একটাই লক্ষ্য আমরা চেয়েছি আমাদের ছেলে-মেয়েরা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকুক। তার সরকার সমগ্র বাংলাদেশের প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম, তথা খেলার মাঠ করে দিয়েছে। পাশাপাশি ফুটবল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খেলারও প্রতিযোগিতামূলক আসরের ব্যস্থা করেছে এবং করছে। তবে, করোনার কারণে একটু সমস্যা দেখা দিলেও আমরা মনে করি কাজ চালাতে পারবো।
ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠান উদ্বোধন করায় এবং সরাসরি মাঠে উপস্থিত হতে না পারায় এ সময় আক্ষেপ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সুবাদে অনলাইনে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে পারায় সরকারের সাফল্যের দিকেও ইঙ্গিত করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি নিজে খেলাধূলা পছন্দ করি এবং সবসময় নিজে উপস্থিত থেকেই খেলাধূলার উদঘাটন করতে চেষ্টা করি। যদিও এবার পারলাম না, যেটা আমার জন্য খুব দুঃখজনক। তারপরেও আমি বলবো, সকলের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই আসিনি।’