: পরিবহন যোগাযোগ খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল (এনইসি) আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত করেছে।
মঙ্গলবার এনইসি চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এনইসি সভায় আগামী অর্থবছরের এডিপির অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন।
মন্ত্রীসভার সদস্যবৃন্দ, প্রতিমন্ত্রীগণ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ এনইসি সভাকক্ষ ও সচিবালয় থেকে বৈঠকে যোগদান করেন।
সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ভার্চ্যুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, মূল এডিপির বাইরে স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনসমূহের জন্য আরও ১১ হাজার ৪৬৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকার এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনসমূহের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ও মূল এডিপির বরাদ্দ মিলে আগামী অর্থবছরের এডিপির মোট আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি ৯ লাখ টাকা। মূল এডিপির জন্য বরাদ্দ অর্থের মধ্যে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা আসবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং বাকী ৮৮ লাখ ২৪ হাজার ২৩ কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে পাওয়া যাবে।
এছাড়া, স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনসমূহের জন্য বরাদ্দকৃত ১১ হাজার ৪৬৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পাওয়া যাবে ৬ হাজার ৭১৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে পাওয়া যাবে ৪ হাজার ৭৫১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
আগামী অর্থবছরের মূল এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৪২৬টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৩০৮ এবং কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের সংখ্যা ১১৮। পাশাপাশি, স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনসমূহের জন্য আরও ৮৯টি প্রকল্প রয়েছে। সবমিলিয়ে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে মোট প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫১৫।
নতুন এডিপিতে ৪ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যার মধ্যে ২ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা পাওয়া যাবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বাকী ১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা আসবে বৈদেশিক উৎস থেকে।
বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প রয়েছে ৫৯৬টি, বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির জন্য অন্তর্ভূক্ত প্রকল্প ১৪১, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের প্রকল্প ৮৮টি এবং পরবর্তী অর্থবছরের মধ্যে শেষ করার জন্য নির্ধারিত প্রকল্প হচ্ছে ৩৫৬টি।
মান্নান জানান, সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য গৃহীত যেসব প্রকল্পের কাজ করোনা অতিমারির কারণে শেষ করা সম্ভব হয়নি,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেসব প্রকল্প সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী গবেষণা কার্যক্রম জোরদারের জন্য গবেষণাখাত বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতের গবেষণায় আলাদা বরাদ্দের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।শেখ হাসিনা আরও বলেন, একেবার প্রয়োজন ছাড়া কোন প্রকল্পে বিদেশী পরামর্শক নিয়োগের দরকার নেই। কেবলমাত্র সেসব উন্নয়ন প্রকল্পে তাদেরকে নিয়ে আসতে হবে যেখানে তাদের দরকার। পাশাপাশি, বিদেশী পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে যেন যথাযথ প্রক্রিয়া পরিপাালন করা হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কৃষি, প্রবাসী আয় ও গ্রামীণ শ্রমবাজারের কারণে করোনা অতিমারি স্বত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ভাল করছে। তিনি বলেন, এর বড় উদাহরণ হলো করোনাকালীন সময়ে আমাদের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৯ শতাংশ বেড়েছে। এখন মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার। এতে বোঝা যায় আমাদের অর্থনীতির সহনশীলতার ক্ষমতা কেমন।
তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ ৩০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। এক প্রশ্নের উত্তরে সরকারের এই জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী বলেন, করোনার সময় বছরজুড়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নের বেশ অগ্রগতি ছিল।
মান্নান বলেন, করোনা অতিমারির শুরুর দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ততটা ভাল অবস্থায় ছিল না। কিন্তু করোনা শুরুর ১ থেকে ২ মাসের মাথায় সেই অবস্থার পরিবর্তন হয় এবং ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট উন্নতি করে।
তিনি দাবি করেন, বিশে^র অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার অনেক কম।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি খাত হচ্ছে; পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি ৪১ লাখ টাকা (২৭ দশমি ক ৩৫ শতাংশ)। দ্বিতীয় অবস্থানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪৫ হাজার ৮৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা (২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ) এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে ২৩ হাজার ৭৪৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা (১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ)।
অন্যান্য খাতের মধ্যে শিক্ষা খাতে ২৩ হাজার ১৭৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ১৭ হাজার ৩০৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৪ হাজার ২৭৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে ৮ হাজার ৫২৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা, কৃষি খাতে ৭ হাজার ৬৬৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকাৎ, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৪ হাজার ৬৩৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৫৮৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় হলো- স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩৩ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২৮ হাজার ৪১ কোটি, বিদ্যুৎ বিভাগে ২৫ হাজার ৩৪৮ কোটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ২০ হাজার ৬৩৩ কোটি, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১৩ হাজার ৫৫৮ কোটি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ১৩ হাজার কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ১১ হাজার ৯১৯ কোটি, সেতু বিভাগে ৯ হাজার ৮১২ কোটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৮ হাজার ২২ কোটি এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, চতুর্থ পিইডিপি কর্মসূচি, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু নির্মাণ, পদ্মা সেতু প্রকল্প, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ডিপিডিসির আওতায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন এবং ঢাকা বিমান বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প।