পশ্চিমবঙ্গের চিন্তা বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’

 

 নিজস্ব প্রতিবেদক 

 

 

 

কলকাতা: আশঙ্কা উড়িয়ে বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে ঘূর্ণিঝড় যশ। কলকাতা আবহাওয়া দপ্তরের তরফে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে ধীরে ধীরে ঘণীভূত হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়টি, যা আগামী বুধবার (২৬ মে) সন্ধ্যা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ-উড়িষ্যা উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে।তার আগের সন্ধ্যা থেকে রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে শুরু হয়ে যাবে ভারী বৃষ্টি। এবারের ঘূর্ণিঝড় যশের নামকরণ করেছে ওমান।

তবে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ঠিক কতটা হতে পারে এবং প্রথম কোথায় আছড়ে পড়বে, সে ব্যাপারে আবহাওয়া দপ্তর এখন বিস্তারিত কিছু জানায়নি। কলকাতা আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তা জিসি দাস জানান, দু’একদিনের মধ্যে যশ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।

দিল্লির আবহাওয়া ভবনের তরফে বুধবার জানানো হয়েছে, আগামী শনিবার (২২ মে) আন্দামান সাগর ও সংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে। নিম্নচাপটি আরও শক্তিশালী হয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। যা উত্তর-পশ্চিম দিকে থেকে অগ্রসর হয়ে ২৬ মে সন্ধ্যা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ-উড়িষ্যা উপকূলে আছড়ে পড়বে বলে মনে করছেন তারা। গতিমুখ বাংলাদেশের দিকে থাকবে বলেও জানা যাচ্ছে। ভারতের উড়িষ্যা রাজ্য থেকে বাংলাদেশের সুন্দরবন-চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে যশ।

নিম্নচাপটি তৈরি হওয়ার সময় সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬৫ কিলোমিটার হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। তারপর ঝড়ো হাওয়ার গতিবেগ বাড়তে থাকবে। উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ কত থাকতে পারে, তা এখনও আবহাওয়া দপ্তরের তরফে জানানো হয়নি। তবে পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যা সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়লে, তার বেশি প্রভাব পড়বে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। স্থলভূমিতে প্রবেশের পর নিম্নচাপের দরুণ প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি শুরু হবে।

পরিস্থিতির দিকে বিশেষভাবে নজর রেখেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ইতোমধ্যেই আগাম প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। গতকাল প্রশাসনিক ভবন নবান্নে থেকে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে বৈঠকও সেরে ফেলেছেন। এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রাতেই তার নিজ বাসভবন কালীঘাটের বাড়ি থেকে মেদিনীপুর জেলাসহ আনুমানিক ঝড় আছড়ে পড়তে পারে এমন জেলাগুলোর দায়িত্বে থাকা কর্তা, সচিবদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। আগাম প্রস্তুতির নেওয়ার জন্য রাজ্যের নেতা-মন্ত্রী শীর্ষকর্তাদের একাধিক নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

নবান্ন সূত্রে জানা যায়, পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য, ওষুধ প্রভৃতি প্রয়োজীয় বিষয়গুলো নিরাপদ জায়গায় মজুদ করে রাখতে শুরু করা হয়েছে। যেসব মৎস্যজীবী সমুদ্রে গেছে তাদের ২২-২৩ মে’র মধ্যে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। মৎস্যজীবীসহ উপকূলবর্তী সংলগ্ন এলাকার মানুষদের সতর্ক করা এবং মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৈরি থাকতে বলা হয়েছে উপকূলরক্ষী বাহিনীকেও।

ভারতে লকডাউন চলাকালীন গতবছর ২০ মে, বিধ্বংসী অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় আমপান পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়েছিল। যার জেরে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল কলকাতা।

এবারও ভারতে করোনা ভাইরাস আরও মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। সংক্রমণ সামাল দিতে পশ্চিমবঙ্গে চলছে লকডাউন। তারমধ্যে জেলে রয়েছেন মমতার দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। এরমধ্যেই যশের পূর্বাভাস প্রশাসনের চিন্তা আরও বাড়িয়েছে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ