করোনা আতঙ্কে উদ্বিগ্ন যখন পুরো বিশ্ব, তখন বাংলাদেশে ফের শুরু হচ্ছে ডেঙ্গুর মৌসুম। প্রতি বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অ্যাডিস মশার প্রকোপ থাকে বেশি। তবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ে আগস্ট মাসে। এবারও তাই ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হওয়ার আগে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে করোনার মধ্যে বর্ষাপূর্ব মশার জরিপে রাজধানীর চারটি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই চারটি এলাকা হচ্ছে—ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের লালমাটিয়া ও ইকবাল রোড এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সায়েদাবাদ ও উত্তর যাত্রাবাড়ী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও অ্যাডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় মশার লার্ভার ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়। এ বছরের জরিপ গত ২৯ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত দুই সিটি করপোরেশনের ৬৯ ওয়ার্ডের ৭০ স্থানে পরিচালনা করা হয়।
জরিপ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ যখন শুরু হয় তখন লকডাউন চলে আসে। এতে ৯৮টি ওয়ার্ড জরিপ করার কথা থাকলেও ৬৯টিতে করা গেছে। জরিপে উঠে আসা শুধু চারটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ওপর নির্ভর করা যাবে না। অন্য এলাকায়ও ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই নগরবাসী ও সিটি করপোরেশনের উচিত, যেখানেই মশার প্রজননস্থল রয়েছে সেগুলো ধ্বংস করে দেওয়া।
ড. কবিরুল বাশার বলেন, গবেষণার জন্য এ জরিপ করা হয়। এখানে দুই সিটির দুটি ওয়ার্ডে জরিপের ইনডেক্স বেশি বা ২০-এর ওপরে পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পূর্বাভাস দেওয়া হয় ঐ এলাকায় অ্যাডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া হতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে অ্যাডিসের প্রকোপ থাকে বেশি। তাই এ সময়টাকে কেন্দ্র করে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বৃষ্টিপাত হলেই মশার লার্ভার ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই যেখানে পাত্রে জমে থাকা পানি পাওয়া যাবে সেটি সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নাগরিকদের ফেলে দিতে হবে।
ডেঙ্গু মশক নিধন সম্পর্কে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধেও সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রতি তিন দিনে এক দিন জমা পানি ফেলে দিতে হবে। মশা দমনে সিটি করপোরেশন নিয়মিত কাজ করছে বলেও তিনি জানান। অন্যদিকে মশক দমনের বিষয়ে এক অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ডিএসসিসি এলাকায় কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এ বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে কিউলেক্স মশা কিছুটা বাড়লেও আমাদের কার্যকর পদক্ষেপের কারণে আমরা দুই সপ্তাহের মধ্যেই তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আশাবাদী, গত বছরের মতো এ বছরও ডেঙ্গু থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম হবো।’