ইতিহাসের প্রাচীনতম ক্ষমতাধর নারীর সন্ধান পাওয়া যায় প্রাচীন মিসরে। বিখ্যাত এই নারীর নাম হাতশেপসুত। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মিসরের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি। আর সে সময় পুরুষেরাই সাধারণত রাজ্য শাসন করত। হাতশেপসুত ছিলেন রাজা প্রথম তুতমোসের মেয়ে। ১২ বছর বয়সে সৎভাই দ্বিতীয় তুতমোসের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় এবং তিনি হন মিসরের রানি।
ভারপ্রাপ্ত শাসক
খ্রিষ্টপূর্ব ১৪৭৯ সালে দ্বিতীয় তুতমোস মারা গেলে উত্তরাধিকার প্রশ্নে জটিলতা দেখা দেয়। কারণ, তাঁর ছেলে তৃতীয় তুতমোস তখন শিশু। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগপর্যন্ত তাঁর সৎমা হাসশেপসুত ভারপ্রাপ্ত শাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা
রাজ্য শাসনের মতো বয়স না হওয়া পর্যন্ত তৃতীয় তুতমোসের সৎমা এবং দ্বিতীয় তুতমোসের স্ত্রী হাতশেপসুত ভারপ্রাপ্ত শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে, ১৪৭৩ খ্রিষ্টপূর্বের দিকে তিনি সম্পূর্ণ ক্ষমতা নেন এবং মিসরের সহশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তৃতীয় তুতমোস তখন নামমাত্র রাজা। প্রকৃতপক্ষে তৃতীয় তুতমোসকে কখনো ক্ষমতাচ্যুত করা না হলেও এটা নিশ্চিত যে হাতশেপসুতই ছিলেন আসল শাসক।
পুরুষের ছদ্মবেশ
ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই হাতশেপসুত বাণিজ্যের জন্য নতুন ‘রুট’ চালু করেন এবং উল্লেখযোগ্য স্থাপনা তৈরির কাজে হাত দেন। কিন্তু তখনকার পৃথিবীটা ছিল পুরুষশাসিত। ফলে তিনি আপাদমস্তক পুরুষ রাজার মতোই পোশাক পরতেন। এমনকি মুখে লাগিয়ে নিতেন নকল দাড়ি। শিল্পীরা যখনই তাঁর ছবি এঁকেছে, দাড়িসহ এঁকেছে। তখনকার অনেক দলিলপত্রে দেখা যায়, তাঁকে অনেক সময় পুরুষবাচক সর্বনামে ডাকা হতো। হাতশেপসুতের নির্দেশেই সমসাময়িক অনেক ভাস্কর্য এবং চিত্রকলায় তাঁকে পুরুষ হিসেবে এঁকেছিলেন শিল্পীরা। উনিশ শতকের আগপর্যন্ত পণ্ডিতেরা তাঁর সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বলা চলে। অথচ তিনি ছিলেন মিসরের হাতে গোনা জনপ্রিয় কয়েকজন প্রাচীন শাসকদের মধ্যে একজন।
ক্লিওপেট্রার ছায়া
হাতশেপসুতের কীর্তির অনেকটাই ঢাকা পড়ে থাকে সপ্তম ক্লিওপেট্রার ছায়ায়। ৫১ থেকে ৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মিসরে ছিল ক্লিওপেট্রার শাসনকাল। আর এই পুরো শাসনকাল কেটেছিল টালটামাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। আর এতেই মিসরে অবসান হয় ফারাও রাজত্বের। ক্লিওপেট্রা প্রথমে ভাইদের সঙ্গে মিলে শাসনকাজ চালাচ্ছিলেন, তারপর তাঁদের ক্ষমতাচ্যুত করে একাই সম্পূর্ণ ক্ষমতা দখল করেন। রোমানদের বিপক্ষে অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর ক্লিওপেট্রা মিসরীয় কোবরার ছোবল নিয়ে আত্মহত্যা করেন।
সমাধির ধনরত্ন
এটা তো সবাই জানেন, মিসরের শাসকদের সমাধির ভেতরে প্রচুর ধনরত্ন এবং নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র দিয়ে দেওয়া হতো। ৫০ বছর বয়সে, ১৪৫৮ খ্রিষ্টপূর্বে মারা যান হাতশেপসুত। তাঁকেও অন্য শাসকদের মতো বিশেষভাবে নির্মিত মন্দিরের ভেতরে কারুকার্যখচিত সমাধিতে সমাহিত করা হয়।
যেভাবে দুনিয়া বদলে দিলেন
হাতশেপসুত আচরণ ও বেশভূষায় পুরুষের মতো ছিলেন, এটা ঠিক। সেটা তিনি করেছিলেন বাধ্য হয়ে। তবে তাঁর কীর্তিময় গৌরবোজ্জ্বল শাসনকাল প্রমাণ করে দিয়েছিল, নারীরাও পুরুষের মতো রাজকার্য চালাতে সক্ষম।
সূত্র: হানড্রেড ইভেন্ট দ্যাট মেড হিস্ট্রি এবং হিস্ট্রি ডটকম