স্বামী আজহারকে খুনের পরিকল্পনার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন আসমা আক্তার। এক ইমামের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে তিনি এ খুনের পরিকল্পনা করেন। জানা গেছে, আজহারের ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আসমার। পরে আজহার ও আসমার মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। এরপর স্বামীকে তালাক দিয়ে তার ভাই আজহার করে করেন আসমা। আজহারের সঙ্গে বিয়ের আগে আরও তিনটি বিয়ে করেছিলেন আসমা।
সম্প্রতি তিনি রাজধানীর দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে ইমাম ও তিনি মিলে আজহারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। খুন হওয়া আজহারের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার রাজাবাড়ি গ্রামে।
নিহত আজহারের বাবা জুলহাস উদ্দিন জানান, তার ৫ ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে আজহারুলকে খুব আদর করতো সবাই। লেখাপড়ায়ও খুব ভালো ছিল। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মেজো ছেলে সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আসমার বিয়ে হয়। বিয়ের দু-তিন মাস পর তারা জানতে পারেন এর আগেও একই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে এক ছেলের সঙ্গে আসমার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু সেই বিয়ের দু’দিন পরই আসমা চলে আসে স্বামীর সংসার ছেড়ে। এরপর আসমা ওই স্বামীর ছোট বোনের স্বামীর সঙ্গে পরকীয়া করে পালিয়ে বিয়ে করে। সেই বিয়েও মাত্র এক থেকে দেড় মাস টেকে। এসব কিছু গোপন রেখে আসমার বাবা আশরাফ আলী তার ছেলের সঙ্গে আসমার বিয়ে দেন। তবে বিয়ের পর এত কিছু জেনেও জুলহাস উদ্দিনের পরিবার আসমাকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন।
তিনি জানান, কিন্তু ছয় মাস যেতে না যেতেই তার বাড়ির মেজ বউ আসমা ও তার আরেক ছেলে আজহারুল বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান। পরে তিনি জানতে পারেন সাহাবুদ্দিনকে তালাক দিয়ে আসমা আজহারুলকে বিয়ে করেছে। এরপর থেকে তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখেননি জুলহাস উদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজন। হঠাৎ করেই রোজার আগে খবর পান অসুস্থ হয়ে পড়ায় আজহারুলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে তিনি ঢাকায় গিয়ে আজহারুল ও আসমাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাড়িতে রেখেই আজহারুলকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। একটু সুস্থ হলে হঠাৎ করেই ১৭ মে আসমা আজহারুলকে ঢাকায় যেতে চাপ দিতে থাকে। এ কারণে আজহারুল পরদিন ১৮ মে ঢাকায় যেতে রাজি হন। এই অসুস্থতার মধ্যে ঢাকা যাওয়া নিয়ে আজহারুলকে তার মা কয়েকবার বাধাও দেন। কিন্তু আসমার পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত ঢাকায় রওয়ানা হন আহজারুল। এসময় আসমা তার স্বামী আজহারুলকে ৫শ টাকাও দেন গাড়ি ভাড়া হিসেবে।’
আজহারুলের চাচাতো ভাই মো. হাফিজ উদ্দিন জানান, ১৮ মে আজহারুর ঢাকা যাওয়ার পর আসমা তাদের বাড়িতেই ছিলেন। পরদিন বুধবার (১৯ মে) আজহারুলের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর আসমা তার বাবা আশরাফ আলীকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। দু’দিন পর তারা দু’জন ফিরে আসেন এবং আশরাফ আলী তার মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি রেখে তড়িঘড়ি করে চলে যান। ২৫ মে তারা জানতে পারেন দক্ষিণখানের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে আজহারুলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। খবর পাওয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে পরিবারের লোকজন ঢাকায় রওয়ানা হলে রাস্তা থেকেই র্যাব আসমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরে তারা জানতে পারেন এই হত্যার সঙ্গে আসমা ও ইমাম জড়িত।
আজহারুলের ভাতিজা লিসান উদ্দিন জানান, র্যাবের মাধ্যমে জানতে পারেন আসমা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন এবং মোবাইল ফোনটি আজহারুলের বাড়িতেই রয়েছে। একথা শুনে পরিবারের সবাই হত্যার পরিকল্পনা করার জন্য ব্যবহৃত মোবাইল ফোন খোঁজাখুজি করতে থাকেন। কিন্তু কোথাও না পেয়ে বাড়ির পাশের জঙ্গলে ব্যাটারি ও সিমবিহীন একটি মোবাইল ফোন পান। পরে সেটি র্যাবের কাছে জমা দেন তারা।
তিনি জানান, আসমা যে নম্বর দিয়ে ইমামের সঙ্গে কথা বলেছেন সেই সিমকার্ডটি এখনো উদ্ধার হয়নি। তাদের ধারণা আজহারুলকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরপরই সিম কার্ডটি কোথাও ফেলে দিয়েছেন আসমা আক্তার।