নানা অভিযোগে বলা হয়েছে, চীনের উহানে একটি গবেষণাগারে সৃষ্টি করা হয়েছে করোনা ভাইরাস। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি নানা কথা প্রচলিত। কিন্তু এবার বৃটেনের প্রফেসর অ্যাঙ্গাস ডালগলেইশ এবং নরওয়ের বিজ্ঞানী ড. বারগার সোরেনসেন তাদের গবেষণায় বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন। তারা বলেছেন, করোনা ভাইরাস প্রাকৃতিক নয়। এই ভাইরাস সৃষ্টি করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। পরে তারা একে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। নতুন এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলেছেন, তারা কোভিড-১৯ এর নমুনায় ব্যতিক্রমী ফিঙ্গারপ্রিন্ট পেয়েছেন। তারা ধারণা করছেন, এটা শুধু একটি ল্যাবরেটরি থেকে আসতে পারে।
এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন ডেইলি মেইল। ওই দুই বিজ্ঞানীর গবেষণা প্রকাশ হওয়ার কথা কোয়ার্টারলি রিভিউ অব বায়োফিজিক্স ডিসকভারি’তে। তার আগেই ২২ পৃষ্ঠার নতুন এই গবেষণাকর্মের পেপার হাতে পেয়েছে ডেইলি মেইল। এতে দেখা যায়, এই দুই বিজ্ঞানী বলেছেন, উহানের একটি ‘গেইন অব ফাংশন’ প্রকল্প নিয়ে কাজ করার সময় করোনা ভাইরাস সৃষ্টি করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। ‘গেইন অব ফাংশন’ গবেষণা অস্থায়ীভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ।
এই গবেষণায় প্রাকৃতিক উপায়ে পাওয়া ভাইরাসকে আরো সংক্রামক করে তৈরি করা হয়। যাতে তা মানব দেহে কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তা গবেষণার মাধ্যমে জানা যায়। ওই গবেষণাপত্র অনুযায়ী, চীনা বিজ্ঞানীরা চীনের গুহায় পাওয়া বাঁদুরের মেরুদণ্ডে থাকা একরকম প্রাকৃতি করোনা ভাইরাস নিয়েছেন। তাকে নতুন স্পাইকযুক্ত করেছেন। তারপর এটাকে ভয়াবহ ও উচ্চ মাত্রায় সংক্রমণযুক্ত কোভিড-১৯ এ রূপ দিয়েছেন। গবেষণায় বলা হয়েছে, এসব যে ল্যাবরেটরিতে করা হয়েছে সেখানকার ডাটা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। লুকানো হয়েছে। যেসব বিজ্ঞানী এই গবেষণা শেয়ার করতে চেয়েছেন তারা তা পারেননি অথবা তাদেরকে অদৃশ্য করে দেয়া হয়েছে। উপরোল্লিখত দুই বিজ্ঞানী বলেছেন, এসব বিষয় শিক্ষাবিদ বা বড় বড় জার্নাল এড়িয়ে গেছে। উল্লেখ্য লন্ডনের সেইন্ট জর্জেস ইউনিভার্সিটির অনকোলজির একজন প্রফেসর ডালগলেইশ। তিনি প্রথম কার্যকর ‘এইচআইভি টিকা’ নিয়ে বিস্ময়কর কাজ, রোগীদের সনাক্ত এবং চিকিৎসা নিয়ে কাজ করার জন্য সুপরিচিত। অন্যদিকে ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি ইমিউনর-এর চেয়ার হলেন ড. বারগার সোরেনসেন। তিনি একজন ভাইরাস বিশেষজ্ঞ। তার প্রতিষ্ঠান ইমিউনর করোনা ভাইরাসের টিকা বায়োভ্যাক-১৯ প্রস্তুত করেছে। তবে তা এখনও পরীক্ষাধীন। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র থেকেও চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সহ অনেকেই অভিযোগ করেছেন, করোনা ভাইরাস সৃষ্টি করেছে চীন। এরপর এটাকে জীবাণু অস্ত্র হিসেবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এসব নিয়ে নানা অভিযোগ আছে। তবে এসব অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছে চীন। সর্বশেষ এ বিষয়ে আরো তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার শীর্ষ সংক্রামক বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচিও একই রকম ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিজ্ঞানী ডালগলেইশ এবং সোরেনসেন বলেছেন, তারা এর আগে এই গবেষণালব্ধ তথ্য প্রকাশ করতে চেয়েছেন। কিন্তু বেশির ভাগ বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল তা প্রকাশ করতে সম্মত হয়নি। কারণ, তারাও মনে করছিল এই ভাইরাস বাঁদুর থেকে মানবশরীরে এসেছে। এক পর্যায়ে বৃটেনের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬ এর সাবেক প্রধান স্যার রিচার্ড ডিয়ারলাভ প্রকাশ্যে বিজ্ঞানীদের তত্ত্বকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন এবং দাবি করেন এসব খবর ভুয়া। কিন্তু এক বছর পরে শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক এবং মিডিয়া পাল্টে গেছে। তারা এই ধারণা করছে যে, করোনা ভাইরাস চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে অবমুক্ত হয়ে ছুড়িয়ে পড়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ সপ্তাহে নতুন করে এই ভাইরাসের উৎস সন্ধান করার নির্দেশ দিয়েছেন।