ফারজানা লাবনী
২৩ মে গুগল, ২৭ মে অ্যামাজন এবং ১৩ জুন ফেসবুক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নামি-দামি এসব প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও এত দিন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়নি। এতে নিয়মিত রাজস্ব পরিশোধেরও বাধ্যবাধকতা ছিল না। এরপর বাংলাদেশে রমরমা ব্যবসা করছে এমন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধিত হওয়ার বিষয়ে এনবিআর কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
গত ছয় মাস থেকে ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে বাংলাদেশে সফলভাবে ব্যবসা করছে এমন সব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ভ্যাটের আওতায় না এলে এ দেশে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হবে না বলেও ভ্যাট গোয়েন্দারা ওই সব প্রতিষ্ঠানকে স্পষ্ট জানিয়েছে। এনবিআর থেকে হিসাব কষা হয়েছে, এ দেশে দুই হাজারের বেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নামি-দামি এসব প্রতিষ্ঠান হিসাব মতো রাজস্ব পরিশোধ করলে এনবিআরের কোষাগারে ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি জমা হবে।
ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান কালের কণ্ঠকে বলেন, বিদেশি ব্যবসাসফল প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই নিয়মিত ভ্যাট দিতে হবে। এ জন্য অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করা খুব জরুরি। এসব প্রতিষ্ঠান অনেক দেশে আইন মেনে রাজস্ব পরিশোধ করে ব্যবসা করছে, বাংলাদেশে তারা একইভাবে ব্যবসা করবে বলে আশা করছি।
টেক জায়ান্ট গুগল ও অ্যামাজনের পর সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বাংলাদেশে ব্যবসায় নিবন্ধন নম্বর (বিআইএন) বা ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে। ভ্যাট পরিশোধ ও ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়াসহ সরাসরি ভ্যাটসংক্রান্ত সেবা পেতে এই নিবন্ধন নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। অনলাইনে আবেদন করে গুগল, ফেসবুক ও অ্যামাজন ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট থেকে অনাবাসী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিআইএন নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার প্রমীলা সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘১৩ জুন ফেসবুক, এর আগে ২৩ মে গুগল এবং ২৭ মে অ্যামাজন ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছিল। ১২ জুন ফেসবুক তিনটি পৃথক প্রতিষ্ঠান থেকে নিবন্ধন পেতে অনলাইনে আবেদন করে। আমরা যাচাই-বাছাই শেষে রবিবার অনুমোদন দিয়েছি। এখন থেকে এই তিনটি প্রতিষ্ঠানই নিয়মিত ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করবে এবং ভ্যাটের অর্থ পরিশোধ করবে।’
ফেসবুকের মূসক এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপার (পিডাব্লিউসি)। আর বাংলাদেশে হক ভট্টাচার্য্য দাস অ্যান্ড কোং মূসক এজেন্ট হিসেবে নিবন্ধন নিয়েছে। ফেসবুকের তিনটি প্রতিষ্ঠান তাদের আয়ারল্যান্ডের ঠিকানা ব্যবহার করে নিবন্ধন নিয়েছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছে ফেসবুক আয়ারল্যান্ড লিমিটেড, ফেসবুক পেমেন্টস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও ফেসবুক টেকনোলজিস আয়ারল্যান্ড লিমিটেড।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সময়ে বছর তিনেক আগে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব ও মাইক্রোসফটের মতো আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি সংস্থাকে নিয়মিত রাজস্ব পরিশোধ ছাড়া বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে স্থায়ী অফিস না থাকায় এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয় না। এ সমস্যার সমাধানে এসব কম্পানিকে বাংলাদেশে স্থায়ী বা অস্থায়ী অফিস স্থাপন করতে অথবা ভ্যাট এজেন্ট নিয়োগ দিতে বলা হয়। এই এজেন্টরা ব্যবসা পরিচালনা বাবদ বাংলাদেশ সরকারকে রাজস্ব দিতে দায়বদ্ধ থাকবে বলে এনবিআর থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২০ সালের প্রথম দিকে এসব ধারা ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’ আইনে সংযোজন করে, ফেসবুক, ইউটিউব, গুগলসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে পৃথক বিআইএন নিতে বাধ্য করা হয়।
ভ্যাট নিবন্ধন নিতে ফেসবুক, গুগল ও অ্যামাজনকে ব্যাংক হিসাব, ট্রেড লাইসেন্স, বাংলাদেশে তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাবের তথ্য জানাতে হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের এ দেশে স্থায়ী কার্যালয় না থাকায় অনাবাসী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধন নিতে হয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠান দেশে বিজ্ঞাপন প্রচারসহ নিজেদের নানা ধরনের সেবা দিয়ে আয় করে থাকে। সেবা নিয়ে গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ড বা অন্য কোনো উপায়ে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করে।