বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণার পর নতুন মূল্যের বোতল এসে গেছে রাজধানীর সব বাজারে। কিন্তু দোকানে আগের মূল্যের তেল থাকলেও তা বিক্রি করছেন না দোকানিরা। এসব তেলের বোতল ফেরত নিয়ে ডিলার প্রতিনিধিরা বাড়তি দামের লেবেল লাগিয়ে দিচ্ছেন। আগের বোতলের লেবেল পাল্টে ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও ঠকছেন ক্রেতারা। অন্যদিকে বাজারে বোতলজাত তেলের দাম বাড়লেও খোলা সয়াবিন তেলের দাম কমেছে কেজিতে দুই থেকে চার টাকা। তার পরও এই দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালে আসেনি।
আবার বোরো ধানের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হলেও বাজারে চালের দাম বেড়ে ক্রেতাসাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে চালের দাম। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
গতকাল শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ দোকানে সয়াবিনের পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৬৯০ থেকে ৬৯৫ টাকায়। যদিও গায়ের মূল্য লেখা রয়েছে ৭২০ থেকে ৭২৮ টাকা। আগে ৬৫০ থেকে ৬৬০ টাকা গায়ের মূল্য লেখা থাকলেও বিক্রি হতো ৬৫০ টাকার নিচে। বাজারে বর্তমানে দুই লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকায়, আগে যা ২৪৫ থেকে ২৫০ টাকায় পাওয়া যেত। সর্বশেষ গত ২৭ মে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেন মিল মালিকরা। ওই ঘোষণায় বোতলজাত তেলের দাম এক লাফে ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৫৩ টাকা লিটার করা হয়। গতকাল মানিকনগর বাজারের হাজী মো. শহিদুল্লাহ ট্রেডার্সে গিয়ে তীর ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের সয়াবিনের বোতল পাওয়া যায়। যাতে গায়ের মূল্য লেখা রয়েছে ৬৬০ টাকা। তবে দোকানি বলেন, এটি বিক্রি হবে না। কম্পানির লোক এসে ফেরত নিয়ে নতুন দামের লেবেল লাগিয়ে দেবে। বাজারের অনেক দোকান থেকে প্রতিদিনই কম্পানির লোকেরা আগের বোতলজাত তেল নিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।’
এই বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি ১২৮ থেকে ১৩৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আগে বিক্রি হতো ১৩২ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি। পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১১৮ থেকে ১২০ টাকা কেজি। আগে বিক্রি হতো ১২০ থেকে ১২২ টাকা কেজি।
এদিকে, কৃষিমন্ত্রণালয় বলছে, চলতি বছর বোরো উৎপাদন নতুন রেকর্ড গড়েছে। এবার বোরো উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ১১ লাখ টন বেড়ে ২ কোটি ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৫০৮ টন হয়েছে। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। তবে বোরো উৎপাদনের সঙ্গে মিলছেনা চালের বাজার। দু এক বছর আগেও যেসব মিনিকেট চালের দাম বোরো মৌসুমে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজির মধ্যে (২৪০০-২৫০০ বস্তা) থাকতো, এবার সেই চালের দাম ভরা মৌসুমে ৫৪ টাকার নিচে (২৭০০ টাকা বস্তা) নামেনি। আর গত এক সপ্তাহে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে ৫৭ থেকে ৫৮ টাকায় ওঠেছে। সামনের দিনগুলোয় দাম আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বাজারে বর্তমানে মাঝারি মানের আঠাশ চালের দাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি। সপ্তাহ খানেক আগে যা ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা কেজি ছিল। ভালোমানের নাজিরশাইল কিনতে লাগছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা কেজি। দেশি বাসমতি পাওয়া যাচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি।
গোপীবাগ বাজারের বিসমিল্লাহ রাইচ এজেন্সির মালিক মো. রাজন বলেন, চালের বাজার এখন আর ছোট মিলারদের হাতে নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বড় বড় মিলমালিকরা। এখাতে এসিআই, আকিজ, প্রাণ এ জাতীয় ব্র্যান্ডগুলো ব্যবসা শুরু করছে। এতে বাজারে চালের সরবরাহ নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে। ফলে দাম বাড়ছে।
মুগদা বাজারের মরিয়ম স্টোরের মালিক মো. আলমগীর দাম বাড়ার আরো একটি কারণ জানালেন। তার মতে আমদানি বন্ধ থাকায় এখন চালের সরবরাহ কমেছে। এছাড়া সামনে দাম আরো বাড়বে এ আশায় অনেকে চাল ধরে রেখেছেন।