ইভ্যালি  তারকাদের বিক্রি করছে

ইভ্যালি তারকাদের বিক্রি করছে

শাহ মোহাম্মদ
এবার তারকাদের বিক্রির অভিযানে নেমেছে দেশের অনলাইনভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান (ই-কমার্স) ইভ্যালি। সাধারণ মানুষকে সহজে ধোঁকা দিতে দেশের বিভিন্ন তারকাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ইভ্যালি। এতে দেশের সাধারণ মানুষের পকেট কেটে সহজে আরো শত কোটি টাকা নিজেদের পকেটে নেওয়া যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা মনে করছেন ইভ্যালি দেশের বিভিন্ন তারকাদের নিয়োগ দিয়ে নতুন কোনো ফন্দি তৈরি করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শনে উঠে এসেছে, অনলাইনভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান (ই-কমার্স) ইভ্যালির চলতি সম্পদের পরিমাণ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সম্পদের চেয়ে ৬ গুণের বেশি এই দেনা পরিশোধ করার সক্ষমতা কোম্পানিটির নেই।
এ বছরের মার্চ মাসে প্রথমবারের মতো ‘ফেস অব ইভ্যালি’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খান। আগামী দুই বছরের জন্য দেশের শীর্ষ ইকমার্স মার্কেটপ্লেস ইভ্যালি ডট কম ডট বিডি’র ‘ফেস’ হয়ে থাকবেন তাহসান। গত ১০ মার্চ রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক এই ঘোষণা দেয় ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ। এসময় ‘ফেস অব ইভ্যালি’ তাহসান খান, ইভ্যালির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেলসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
‘ফেস অব ইভ্যালি’ হওয়ার প্রসঙ্গে তাহসান খান বলেন, ব্যক্তি ব্র্যান্ডের সাথে যখন কোন প্রোডাক্ট ব্র্যান্ড একত্রিত হয় তখন সেটি উভয়ের জন্য এক ‘উইন-উইন’ অবস্থা তৈরি করে। আমি দোয়া প্রার্থী এবং আশা প্রকাশ করছি যে, ইভ্যালি এবং আমার এই দুই ব্র্যান্ডের একত্রীকরণ হওয়া উভয় পক্ষের জন্যই ফলপ্রসূ হবে। ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, তাহসানের সাথে আমরা যুক্ত হতে পেরে আমরা সম্মানিত বোধ করছি। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা আকর্ষণীয় দিক যে তিনি ‘ইভ্যালি’ শব্দটাকে তার নামের সাথে যুক্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। আমরা বলছি শুরুটা দুই বছরের জন্য কিন্তু ইচ্ছা আছে এটাকে আরও দীর্ঘায়িত করার। এদিকে দেশীয় ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ইভ্যালি ডটকম ডটবিডি’তে ‘ঈদ ফ্যাশন সাইক্লোন’ নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা।
আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে গ্রাহকদের জন্য বিশেষভাবে সাজানো এই ফ্যাশন সাইক্লোন অফারে দেশি-বিদেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের পণ্য সুলভ মূল্যে কেনা যাবে ইভ্যালি থেকেই। গত ২০ জুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয় ইভ্যালির পক্ষ থেকে। মিথিলাকে দিয়ে পরিচালিত হবে ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল পণ্যের বিশেষ এই অফার সাইক্লোন। রাফিয়াত রশিদ মিথিলা বলেন, ভারতে অবস্থান করা ও করোনার কারণে প্রায় এক বছর কোন বিজ্ঞাপনে আমার কাজ করা হয়নি। ইভ্যালির ‘ব্র্যান্ড এম্বাসেডর’ এবং ‘ফ্যাশন ফেস’ হিসেবে এই বিজ্ঞাপনের মধ্যে দিয়ে আবারও কাজে ফিরে আসার বিষয়টি ছিল সত্যিই দারুণ। আশা করি ইভ্যালির প্রায় ৫০ লাখ গ্রাহকদের এই সাইক্লোন অফার ভালো লাগবে। জনপ্রিয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়াও এড়িয়ে যেতে পারেননি ইভ্যালির দৃষ্টি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে ইভ্যালির মিডিয়া এবং কমিউনিকেশনস প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন ‘দেবী’ খ্যাত এ অভিনেত্রী।
ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ মনে করে, জনসংযোগ, মিডিয়া ও কমিউনিকেশনস বিভাগের প্রধান হিসেবে গণমাধ্যম ও ইভ্যালির মধ্যকার সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে কাজ করে যাবেন টিভি নাটকের এ প্রজন্মের আলোচিত অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, শবনম ফারিয়া দেশের মিডিয়ার খুবই পরিচিত এবং প্রিয় মুখ। তাকে ইভ্যালিতে পেয়ে আমরা আনন্দিত। আমাদের বিশ্বাস ইভ্যালির সঙ্গে গণমাধ্যম ও অন্যান্য বাহ্যিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন।
ইভ্যালির প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (সিএমও) আরিফ আর হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই মার্কেটিংয়ের কিছু নিজস্বতা থাকতে পারে। সেখানে কিছু চমকও থাকতে পারে। ইভ্যালি শুরু থেকেই দেশের বাজারে গ্রাহকদের জন্য নানান চমক নিয়ে এসেছে এবং আগামীতেও আসবে। ইভ্যালির ভুক্তভোগী এক গ্রাহক বলেন ব্যাংক জমা টাকার ওপর সুদ দেয়। ইভ্যালি জমা টাকার ওপর দেয় হয়রানি। তিনি বলেন ইভ্যালি, ধীরে ধীরে দেশের সর্ববৃহৎ বাটপার হতে চলেছে।
তিনি বলেন ভ্যালির আসল কারবারটা হলো সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা। এজন্য ১০ টাকার জিনিস ৫ টাকায় দেওয়ার লোভ দেখায়। লোভী মানুষরা টোপে পড়ে। কয়েকজনকে আধাআাধি দামে মাল দিয়ে বাকিদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে আটকে রাখে। এভাবে ছয় মাস, এক বছর মানুষের টাকা আটকে রাখে ব্যাংকের মতোন। বিনিয়োগ করে। মুনাফা করে। মানুষ অনেক হয়রানির পর মাল না পেয়ে টাকা ফেরত পায়। ফলে সরাসরি বাটপার বলা যায় না। হয়তো এক সময় ইভ্যালি, কয়েক লাখ কোটি টাকা হাতে জমা হলে দেশ ছেড়ে পালাবে।  ইভ্যালি, এই কৌশলে ব্যাংকের মতো টাকা জমা করছে। ব্যাংকের মতো মানুষের টাকা খাটিয়ে মজা নিচ্ছে। পার্থক্য হলো, ব্যাংক জমা টাকার ওপর সুদ দেয়। ইভ্যালি দেয় হয়রানি।
অপরাধ তথ্য প্রুযুক্তি বিনোদন শীর্ষ সংবাদ