করোনার ভয়াবহ বিরূপ প্রভাব রপ্তানি খাতে, বাড়ছে ঝুঁকিআয় কমেছে টার্গেটের ৩.৩ বিলিয়ন ডলার

করোনার ভয়াবহ বিরূপ প্রভাব রপ্তানি খাতে, বাড়ছে ঝুঁকিআয় কমেছে টার্গেটের ৩.৩ বিলিয়ন ডলার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনা মহামারীতে রেমিট্যান্সে আয়ে রেকর্ড হলেও পণ্য রপ্তানি আয়ে শঙ্কা কাটেনি। আগের অর্থবছরের চেয়ে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে সামগ্রিক রপ্তানি বাড়লেও সরকার যে টার্গেট ঘোষণা করেছিল তা পূরণ হয়নি। অর্থবছর শেষে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যে হিসাব দিচ্ছে তাতে দেখা  যাচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পণ্য রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ পরিস্থিতিতে আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পণ্য ও সেবা খাত মিলিয়ে নতুন অর্থবছরের জন্য রপ্তানি আয়ের যে টার্গেট দিতে যাচ্ছে তা ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি হতে পারে বলে জানা গেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আজ এ টার্গেট ঘোষণা করবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি আয়ের টার্গেট ঘোষণা করা হয়েছিল। অর্থবছর শেষে হিসাব করে দেখা গেছে, পণ্য খাতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার।

মহামারীর মধ্যে এ আয়কে ‘মন্দের ভালো’ মনে করছেন ইপিবির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে অর্জিত রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম হলেও এটি ২০১৯-২০ অর্থাৎ আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। ওই অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যেখানে আগের বছরের তুলনায় সামগ্রিক উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ৫ দশমিক ২ শতাংশ, সেখানে রপ্তানি আয়ে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে খারাপ বলা যাবে না।’ তিনি জানান, গত অর্থবছরে কভিড-১৯ নিয়ে যে ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, এটি তার চেয়েও দীর্ঘায়িত হয়েছে। এর ফলে অর্থনীতি যত দ্রুত সংকট কাটিয়ে উঠবে মনে করা হচ্ছিল তা হয়নি। তবে নতুন অর্থবছরে টিকা প্রদান কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে, যা রপ্তানিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ইপিবির তথ্যানুযায়ী সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে পোশাক খাতে ৩৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের টার্গেট দেওয়া হয়েছিল। প্রকৃত রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। এটি টার্গেটের চেয়ে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ কম। তবে পোশাক খাতের এ আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১২ দমমিক ৫ শতাংশ বেশি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের রপ্তানি আয় মূলত তৈরি পোশাকনির্ভর। ফলে এ খাতে রপ্তানি আয় কমে গেলে পণ্য রপ্তানির সামগ্রিক খাতে ঝুঁকি তৈরি হয়। এজন্য তৈরি পোশাকের পাশাপাশি আরও যেসব সম্ভাবনাময় পণ্য রয়েছে সেসব পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোতেও নগদ প্রণোদনা ও নীতিসহায়তা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে মহামারী দীর্ঘায়িত হলেও সংশ্লিষ্ট খাতগুলো ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের নগদ প্রণোদনার জন্য যেসব ক্ষতিগ্রস্ত ও সম্ভাবনাময় পণ্যের তালিকা পাঠানো হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করেনি অর্থ বিভাগ। এতে করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানি খাত সক্ষমতা অর্জনের সুযোগ পায়নি।

নতুন টার্গেট ঘোষণা আজ : ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য নতুন রপ্তানি টার্গেট ঘোষণা করা হবে আজ। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে সরকারের নতুন রপ্তানি টার্গেট ঘোষণা করবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্টরা জানান, রপ্তানি খাতে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণার জন্য ইপিবি থেকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই প্রস্তাবে নতুন অর্থবছরের জন্য পণ্য খাতে ৪২ দশমিক ৫ আর সেবা খাতে ৭ দশমিক ৫- সামগ্রিক রপ্তানি খাতে এই ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের কথা বলা হয়েছে। পণ্য খাতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি টার্গেটের প্রস্তাব করেছে ইপিবি। তবে আজ বাণিজ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে এ প্রস্তাব কিছু কমবেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

অর্থ বাণিজ্য