বীমা দাবি পরিশোধ, প্রিমিয়ামের টাকা জমা দেয়ার বিপরীতে অরিজিনাল রিসিট বা ওআর (প্রিমিয়ামের টাকা জমা দেয়ার রশিদ) দেয়ার ক্ষেত্রে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স গ্রাহকদের হয়রানি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি কোম্পানিটিরই চুয়াডাঙ্গা জোনের গাংনী সাংঠনিক অফিসের কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল হক বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে এমন অভিযোগ করেছেন।
তবে গ্রাহকদের বীমা দাবির টাকা পরিশোধ এবং ওআর দেয়ার ক্ষেত্রে হয়রানি করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. কাজিম উদ্দিন।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ন্যাশনাল লাইফের বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরাই গ্রাহকদের সব থেকে বেশি বীমা দাবি পরিশোধ করি। ঠিক মতো বীমা দাবি পরিশোধ করার কারণে আমাদের ‘প্রথম-বর্ষ প্রিমিয়াম’ সব থেকে বেশি। আমাদের কোনো দাবি বকেয়া নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৯ সালে আমি দাবি পরিশোধ করেছি ৭২৬ কোটি টাকা। ২০২০ সালে পরিশোধ করেছি ৮০০ কোটি টাকা। আর চলতি বছরে এখন পর্যন্ত পাঁচশ কোটি টাকা দাবি পরিশোধ করা হয়ে গেছে।’
ন্যাশনাল লাইফের বিরুদ্ধে আইডিআরএ’র কাছে করা অভিযোগে মো. আনোয়ারুল হক উল্লেখ করেছেন, ‘অসাধু পন্থা, অব্যবস্থাপনা আর দুর্নীতি বীমা শিল্পকে তিলে তিলে ক্ষত-বিক্ষত করছে। কিন্তু নিঃসন্দেহে বীমা শিল্প ভালো।’
তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘গ্রাহকের নবায়ন প্রিমিয়ামের টাকা অফিসে জমা হয়। একই দিনে ওই টাকা হিসাবরক্ষক ব্যাংকে ডিপোজিট করেন এবং মাস শেষে সমস্ত টাকার ডিডি’র চেক জোনের প্রধান ব্যাংক থেকে তুলে নেন ওআর করার জন্য। কিন্তু তিনি ওআর না করে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। ৭-৮ মাস অথবা ১ বছর পর বিভিন্নভাবে টাকা ম্যানেজ করে তখন ধীরে ধীরে ওই টাকা ওআর করতে থাকেন।’
‘এতে একদিকে যেমন গ্রাহকরা তাদের জমা করা টাকার ওআর কপি না পেয়ে অফিসে এসে নানান অভিযোগসহ ঝামেলা করে, অন্যদিকে ওআর না হওয়ার কারণে মাঠের কর্মীরা তাদের জমা করা টাকার নবায়ন বিল সময় মতো না পেয়ে মনঃকষ্ট নিয়ে বীমা পেশা থেকে প্রতিনিয়ত ঝরে পড়ছে।’
তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, ‘মাসিক কাজের রিলিজ ঠিক মতো দেয়া হয় না। যেমন- ২৪৫২১৮ কোডের (মো. মিনারুল ইসলাম-এফএ) শুধু ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের কাজের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৫ হাজার ৭৯৮ টাকা, কিন্তু তাকে বিল দেয়া হয়েছিল ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৭ টাকার। বাকি ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯০১ টাকার বিল দেয়া হয়নি। পরে অনেক আবেদন-নিবেদন করে ৩-৪ মাস পর পাওয়া যায়।’
মো. আনোয়ারুল হক অভিযোগ করেছেন, ‘মৃত্যু দাবির টাকা দাবিদারকে এতটাই হয়রানি, পেরেশানি এবং দেরিতে দেওয়া হয় যে, দাবিদার গণবীমা সম্বন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে বাজে মন্তব্য করতে বাধ্য হন। যেমন- নার্গিস আরার পলিসি নম্বর- ৫৬০১৬৮৮-৭, গাংনী, মেহেরপুর। তিনি মারা যাওয়ার পর ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর তার সব কাগজপত্র জোন অফিসের মাধ্যমে প্রধান কর্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। ৭ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত তার কোনো হদিস নেই। অথচ কোম্পানি প্রদত্ত বিধানে উল্লেখ আছে, ৯০ দিনের মধ্যে মৃত্যু-দাবি পরিশোধ করা হবে।’
তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, ‘এসবি ভাউচার এবং এসবি চেক সময় মতো গ্রাহককে দেয়া হয় না। যেমন- মো. শাহাজেদ আলীর (পলিসি নং ৫৬০০৮৭৮-৫) এসবি পাওয়ার তারিখ ২০১৯ সালের ২০ মার্চ, মো. ফারুক হোসেনের (পলিসি নং ৩৯০১৯১১-২) এসবি পাওয়ার তারিখ ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর। নিয়মিত টাকা জমা করা এই দুজন গ্রাহক এখন পর্যন্ত এসবি ভাউচার এবং চেক পাননি।
ন্যাশনাল লাইফের এই কর্মী অভিযোগ করেছেন, গ্রাহকের টাকা জমা এবং ওআর না হওয়ার মধ্যে কোনো জটিলতা থাকলে তা গ্রাহককে অবহিত না করে অসম অবস্থায় অসমন্বয় খাতে ফেলে রাখা হয়। ফলে গ্রাহক প্রতারিত হন। অথচ প্রতিটি এফপিআর এবং পিআর কপিতে গ্রাহকের মোবাইল নম্বর থাকে।
অভিযোগের সঙ্গে প্রায় অর্ধশত গ্রাহকের প্রিমিয়ামের টাকা জমা দেয়ার তথ্য এবং ওআর দেয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, কোনো কোনো গ্রাহক টাকা জমা দেয়ার এক বছর পর ওআর পেয়েছেন।
দেরিতে ওআর দেয়া সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ন্যাশনাল লাইফের সিইও মো. কাজিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ অভিযোগও ঠিক না। গ্রাহক হয়তো সময় মতো প্রিমিয়ামের টাকা জমা দেননি। সময় মতো টাকা না দিলে পলিসি ল্যাপস থাকে। জোন অফিসে টাকা আসলে অবশ্যই ওআর হবে। ওআর না হলে তো গ্রাহক টেনশনে থাকে তার টাকা কী হলো!’