শামীম খান,
দলে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তৃণমূল থেকে জেলা পর্যন্ত নতুন যে সব কমিটি হবে সেগুলো কেন্দ্রীয় নেতারা পর্যবেক্ষণে রাখবেন।
এর জন্য নতুন গঠন করা কমিটি এখন থেকে কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।
গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ নিয়ে দলের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। সারা দেশে বিভিন্নভাবে দলের মধ্যে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে এবং অনুপ্রবেশকারীরা বিভিন্ন কমিটিতে স্থান করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দলে অনুপ্রবেশের বিষয়টি নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকরাও চিন্তিত। অনুপ্রবেশের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে বার বার সতর্ক করা হয়েছে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বিষয়টি নিয়ে বহুবার আলোচনা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দলে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বার বার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় সুযোগ সন্ধানীরা বিভিন্নভাবে দলে ভিড়ে পড়ছে। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী, সন্ত্রাসী, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী লোকজন দলে ঢুকে পড়তে তৎপর রয়েছে। স্থানীয়ভাবে দলের কোনো কোনো নেতা নিজের স্বার্থে গ্রুপ ভারী করা ও প্রভাব বাড়ানোর জন্য তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে এবং কৌশলে দলে ভোড়াচ্ছে। এরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতেও ঢুকে পড়ছে। এতে দলের ত্যাগী ও পুরনো নেতাকর্মীরা অনেক সময় কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রুপিং ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্ম দিচ্ছে। পাপাপাশি অনুপ্রেশকারীরা আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সুযোগ নিয়ে নিজেদের স্বার্থে দলকে ব্যববহার করছে এবং বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করছে। এর দায় এসে পড়ছে আওয়ামী লীগ ও সরকারের উপর।
এ কারণেই অনুপ্রবেশ ঠেকানোর ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আগামীতে ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে যে সব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে এবং এই সব সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গঠিত নতুন কমিটিতে যাতে কোনো অনুপ্রবেশকারী থাকতে না পারে সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগে সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, এখন থেকে ওযার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে নতুন যে সব কমিটি হবে কেন্দ্র থেকে সেগুলো কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ কাজে সুবিধার জন্য এই কমিটিগুলো কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। সারা দেশের আট বিভাগের দায়িত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের যে আটটি টিম রয়েছে, সেই টিমের নেতারা প্রয়োজনে নতুন কমিটিগুলো যাচাই করে দেখবেন কারো কোনো সমস্যা আছে কিনা। নতুন কমিটিতে কোনো অনুপ্রবেশকারী থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, দলে যাতে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী, গণতন্ত্র ধ্বংসকারী, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চেতনা বিরোধী, বিএনপি-জামায়াতের কেউ প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি। এরা দলে অনুপ্রবেশ করে আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত না করতে পারে সে জন্য এই শ্রেণির লোকদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড কমিটি আওযামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরাই নির্বাচন করবেন। তবে এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারি ও কড়া পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য কমিটি কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। প্রয়োজন হলে কেন্দ্র থেকে তা যাচাই করে দেখা হবে।