জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ইউনেস্কো’র পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের।
২০২১ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় ইউনেস্কো’র ৪১তম সাধারণ সভায় প্রথমবারের মত পুরস্কারটি দেয়া হবে। ইউনেস্কো আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন খ্যাতিমান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দিয়ে আসছে। সংস্থাটি এই প্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’র নামে পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশে ইউনেস্কো ক্লাব এ্যাসোসিয়েশন ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দ্যা ফ্লিড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ শীর্ষক পুরস্কারটি প্রবর্তন করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও সাংবাদিক মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী একটি নিবন্ধে লিখেছেন, ‘জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানার্থে সৃজনশীল অর্থনীতিতে উদ্যোগের জন্য দু’বছর পর পর তরুণদের উৎসাহিত করতে ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দ্যা ফ্লিড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ শীর্ষক পুরস্কারটি প্রবর্তন করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘ইউনেস্কো অর্থাৎ আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে জাতিসংঘের কোন সংস্থা এই প্রথম বঙ্গবন্ধু’র নামে এই পুরস্কার চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু’র জীবন দর্শনের আর্ন্তজাতিকীকরণ এবং বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ইউনেস্কো পুরস্কার এ মূহুর্তে সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এর আগে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলাদেশের ২১ শে ফেব্রুয়ারী মহান শহীদ দিবসকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া ছাড়াও ২০১৭ সালে ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধু’র ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব ইতিহাসের ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে শুধু ঘোষণা নয়, স্বীকৃতি প্রদান ও করেছে।
ইউনেস্কোকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে বলা হয়, ইউনেস্কো হচ্ছে জাতিসংঘের ১৪টি অঙ্গ সংস্থার মধ্যে অন্যতম। যা শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক কর্মকান্ডে জড়িত। জাতি-সমূহের মধ্যে শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও যোগাযোগের সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বে শিক্ষা বিস্তার, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান চর্চা এবং শান্তি ও নিরাপত্তা আনায়নই হচ্ছে ইউনেস্কো’র প্রাথমিক লক্ষ্য। পৃথিবীর ১৯৮ দেশ বর্তমানে ইউনেস্কো’র সদস্য রাষ্ট্র।
ইউনেস্কো’র গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, যেহেতু মানুষের মনে গড়ে তুলতে হবে ‘শান্তির সুদুর প্রাচীর’ সেহেতু ইউনেস্কো হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে একটি আদর্শের নাম।
আর এ জন্যই ১৯৪৬ সালের ৪ নভেম্বর জন্মের পর থেকেই ইউনেস্কো পৃথিবীময় যা কিছু করেছে এবং করছে সে সবই হচ্ছে মানব জাতির মনে শান্তির আন্দোলনকে জোরদার করার অভীষ্ট প্রয়াস। ইউনেস্কো’র স্বীকৃত কর্মক্ষেত্র সমূহ এর নামেই স্বয়ং পরিস্ফুটিত। কিন্তু তা শুধু শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেই সীমায়িত নয় গণমাধ্যম ও সমাজবিজ্ঞান-এর কর্মসূচীতে পরিব্যাপ্ত। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই ১৯৭২ সালে ইউনেস্কো’র সদস্যপদ লাভ করে।
তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিনের বিরাজমান দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অবসান ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত বিদ্রোহীদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি সম্পাদনে ও এতদাঞ্চলে শান্তির জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ইউনেস্কো কর্তৃক হুকে বোয়ানি শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। এটাও ছিল বাংলাদেশের একটি অর্জন ও আরেকটি আনন্দের সংবাদ। মর্যাদাবান এই পুরস্কার গোটা জাতির জন্য এক বিরাট সম্মান ও গৌরব বয়ে আনে। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল করেছে যা আমাদের জন্য একটি বড় ধরনের খুশীর ব্যাপার ছিল। ইউনেস্কো’র শান্তি পুরস্কার এমন এক মর্যাদা ও সম্মানের প্রতীক, নোবেল শান্তি পুরস্কারের পরপরই এটির স্থান।
ইয়াসির আরাফাত, নেলসন মেন্ডেলাসহ বিশ্বের শান্তিকামী এমন কয়েকজন ব্যক্তিত্ব এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। নিবন্ধে বলা হয়, তাদের স্থান শান্তিকামী বিশ্ববাসীর হৃদয়ে শান্তির অন্বেষায় যারা নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছেন। হিংসার উম্মত্তাতার মধ্যেও যারা বয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন অহিংসার সুবাতাস। এই মহৎ পুরস্কারটি কেবল তাদের জন্য।’
এই বিশাল বিশ্বে বাংলাদেশের মতো ছোট্ট একটি দেশ অথচ সাহাসী ও শান্তিকামী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জিত ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কারটি ছিল সীমাহীন গৌরবের। দেশবাসীও ছিল এর অংশীদার। আর একথা প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ বিশ্বে ছোট্ট দেশ হলেও এর ইতিহাস প্রাচীন ও ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। একে পরিপূর্নভাবে বিশ্বের বুকে তুলে ধরার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে হাজারো সমস্যার পরও ইউনেস্কো থেকে শান্তির জন্য পুরস্কারটি অর্জন ছিল হিংসা-বিদ্বেষ ও অশান্তির বিরুদ্ধে ভালোবাসার প্রতীক। যা সহজে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
নিবন্ধে আরো বলা হয়, বঙ্গবন্ধু’র নামে প্রবর্তিত বঙ্গবন্ধু ইউনেস্কো-বাংলাদেশ পুরস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্মানিত বোধ করছে। এছাড়াও মুজিব শতবর্ষেও ইউনেস্কো’র উদ্যোগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা কর্মসূচী পালন করা হবে। এ ধরনের অর্জনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি জাতির গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা বাড়াতে সক্ষম হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী এবং বাঙ্গালী জাতির স্বপ্নদ্রষ্ঠা বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন। ইউনেস্কো-বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ পুরস্কারটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইউনেস্কো’র মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এ পুরস্কার প্রবর্তনে বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনগণ ইউনেস্কো-কে সাদুবাদ জানায়। সূত্র: বাসস।