জামাল উদ্দীন
বাণিজ্যিক ব্যাংকের কোনো কোনো চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। বিদেশে টাকা পাচার করে গাড়ি-বাড়ি কেনা, ছেলেমেয়েকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা ব্যাংকিং খাতে অনেকের মুখে মুখে। কোনো কোনো ব্যাংক চেয়ারম্যান নিজে না করে আত্মীয়, ভাই-বন্ধুর নামেও বিদেশে মার্কেট কিনেছেন এমন গুঞ্জনও ব্যাংকে ব্যাংকে শোনা যায়। কেউ কেউ ব্যাংক মালিকানায় নিয়ে সেখান থেকে কৌশলে অর্থ সরিয়ে পাচার করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সববিষয়ে তদারকি করছে না এমন মন্তব্য খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্রের। এই সূত্রমতে, কিছু বিষয় ওপেন সিক্রেট। তাই কেউ গা করছে না।
সরকারি-বেসরকারি কোনো কোনো ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সিঙ্গাপুর, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়ায় বেনামি বিনিয়োগ রয়েছে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। সরকারি এক ব্যাংকের এমডি সিঙ্গাপুরে মেয়ের নামে টাকার লেনদেন করেছেন তথ্য প্রযুক্তি খাতের এক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। সূত্রমতে, কমিশন হিসাবে ঐ টাকা সেখানে গ্রহণ করা হয়েছে।
বেসরকারি এক ব্যাংকের এমডির নামের আগে ‘হুন্ডি’ শব্দটি ব্যবহার করছেন খোদ ঐ ব্যাংকের পরিচালকরাই। ঢাকায় বসে হুন্ডি ব্যবসায় তিনি পারদর্শী তাই, ব্যাংকের পরিচালকরাই তার নামের আগে হুন্ডি বিশেষণটি ব্যবহার করে থাকেন। চেয়ারম্যান, পরিচালকদের পাশাপাশি কতিপয় এমডিও বিদেশে নিজের পরিবারকে প্রতিষ্ঠা করতে নানা অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন:
চেয়ারম্যান খাতা নিয়ে বসেন, এমডির ইন্টারভিউয়ের খরচ ৪২ লাখ টাকা
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রমতে, কোনো কোনো এমডিকে নানা অনিয়মের জন্য শোকজ করা হলেও তারা বেপরোয়া। কারণ, ঐ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ক্ষমতাধররা রয়েছেন। কিংবা প্রভাবশালীদের ‘নেকনজর’ আছে তার প্রতি। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও খুব একটা মান্য করেন না।
এদিকে, ব্যাংকের নিয়োগেও পরিচালকদের বাণিজ্য রয়েছে। পরিচালকদের কোটায় নিয়োগ প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকেন পরিচালকরা। ঋণ বাণিজ্যতো রয়েছেই। পরিচালকদের বেনামি ঋণ নিয়ে নানা কথা হলেও তা কমছে না। এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংকের পরিচালকের সঙ্গে যোগসাজশ করে ঋণ নেয়। এতে ঋণ পাওয়ার উপযোগী গ্রাহকরা বঞ্চিত হয়। বছরের পর বছর এমন ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস দেখায় না। তাদের ঋণ খেলাপি হওয়ার আগেই পুনর্গঠন করা হয়। যে কারণে ঋণখেলাপির তালিকায় তাদের নামও আসে না।
আরও পড়ুন:
গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ২৫৫০ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, একটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকাই খেলাপি। যা একাধিকবার পুনর্গঠিত হয় এবং পরবর্তীতে আবার খেলাপি হলেও তিনি কখনও খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হন না।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অন্য আরেকটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কর্মচারীর নামে, ভাই-ভাতিজা, ভাতিজির মালিকানা দেখিয়ে, এমনকি জামানত ছাড়াও ঋণ নিয়েছেন। যা আইনগতভাবে বা নৈতিকভাবে নিতে পারেন না। জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও একবার বলেছিলেন পরিচালকদের বেনামি ঋণ নিয়ে। তারপরও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি।