যাবজ্জীবন সাজা মানে ৩০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আমৃত্যু উল্লেখ না থাকলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হিসেবে ৩০ বছর সাজা খাটতে হবে আসামিকে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গত বছরের ১লা ডিসেম্বর সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের মতামতের ভিত্তিতে রিভিউ আবেদনটি নিষ্পত্তি করে এ রায় দেন। ওই রায়ের কপিতে বিচারকদের স্বাক্ষরের পর বৃহস্পতিবার ১২০ পৃষ্ঠার রায়ের অনুলিপি প্রকাশ করা হয়।
রায়ে বলা হয়, প্রাথমিক অর্থে যাবজ্জীবন কারাবাস মানে কোনো দণ্ডিতের বাকি জীবন। ফৌজদারি কার্যবিধি ও দণ্ডবিধির এ সংক্রান্ত বিধানগুলো একসঙ্গে পড়লে যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছরের কারাবাস। আদালত, ট্রাইব্যুনাল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক কাউকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হলে সেই দণ্ডিত ব্যক্তি ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫-এ ধারার সুবিধা পাবেন না।
এর আগে গত বছরের ১ ডিসেম্বর ‘যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড’ বলে এ সংক্রান্ত রিভিউ আবেদনের রায় দেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। সেদিন আদালতে রিভিউ অবেদনের পক্ষে শুনানি করেছিলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম (প্রয়াত)। এছাড়া আদালতে এ মামলায় অ্যামিকাস কিউরি (আদালত বন্ধু) হিসেবে মতামত তুলে ধরেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান ও আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন।
২০০৩ সালের ১৫ অক্টোবর একটি হত্যা মামলায় দুই আসামি আতাউর রহমান মৃধা ওরফে আতাউর ও আনোয়ার হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। এসব আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টের রায়ে দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ে দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে আদালত যাবজ্জীবন মানে ‘আমৃত্যু কারাবাস’সহ সাত দফা অভিমত দেন। এরপর আপিলের ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয়।