ঈদের জামাত রাজধানীতে  কখন কোথায়

ঈদের জামাত রাজধানীতে কখন কোথায়

রাত পোহালেই মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ঈদুল আজহা। গতবারের মতো এবারও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কার মধ্যেই এ উৎসব উদযাপন করবেন মুসলমানরা।

মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঈদকে ঘিরে যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস থাকার কথা, তা ম্লান করে দিয়েছে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। বাংলাদেশে ঈদ পালনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।

করোনা মহামারি শুরুর পর গত তিন ঈদে ঈদগাহে কিংবা খোলা মাঠে জামাতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এবার তা শিথিল করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে শর্তসাপেক্ষে ঈদগাহ মাঠে জামাতে নামাজ আদায় যাবে।

জেনে নিন রাজধানীতে ঈদের জামাতের সময়:

বায়তুল মোকাররমে ঈদের পাঁচ জামাত

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

প্রথম জামাত : সকাল সাতটা

প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান, মুকাব্বির হিসেবে থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. আতাউর রহমান।

দ্বিতীয় জামাত : সকাল আটটা

দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররমের মুয়াজ্জিন হাফেজ ক্বারী কাজী মাসুদুর রহমান।

তৃতীয় জামাত : সকাল নয়টা

তৃতীয় জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক, মুকাব্বির থাকবেন মুয়াজ্জিন হাফেজ ক্বারী হাবিবুর রহমান মেশকাত।

চতুর্থ জামাত : সকাল ১০টা

চতুর্থ জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহিউদ্দীন কাসেম। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মো. ইসহাক।

পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত : সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট

শেষ জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ূর রহমান খান। তার সঙ্গে মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. শহীদুল্লাহ।

এ পাঁচটি জামাতে কোনো ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

ঢাবিতে ঈদের নামাজের সময়সূচি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদে সকাল আটটায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের নামাজে ইমামতি করবেন মসজিদের সিনিয়র ইমাম খতিব ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দীন।

এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল জামে মসজিদে সকাল আটটায় এবং ফজলুল হক মুসলিম হল মসজিদে সকাল আটটায় ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রতিবছর ঈদে দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হলেও করোনার কারণে গত বছর থেকে শুধুমাত্র একটি জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

রাজধানীর অন্যান্য স্থানে কখন কোথায় জামাত

এদিকে রাজধানীর গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদে তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ছয়টা, সাড়ে সাতটা এবং সাড়ে নয়টায় এসব জামাত অনুষ্ঠিত হবে। পুরান ঢাকার চকবাজার শাহী মসজিদে সকাল আটটা ও নয়টায় দুটি জামাত হবে। বড় কাটারা মাদরাসা মসজিদে একটি ঈদ জামাত হবে সকাল আটটায়। লালবাগ শাহী মসজিদে সকাল সাড়ে আটটায় একটি জামাত হবে।

ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে সকাল সাড়ে সাতটা ও সকাল নয়টায়; ধানমণ্ডির বায়তুল আমান মসজিদে সকাল সাড়ে আটটায়; ঈদগাহ মাঠ মসজিদে আটটায় এবং সোবহানবাগ জামে মসজিদে সকাল সাড়ে আটটায় ঈদ জামাত হবে।

আজিমপুর কবরস্থান মসজিদে সকাল সাতটা, আটটা, নয়টা ও ১০টায় মোট চারটি জামাত হবে। মিরপুর দারুস সালাম লালকুঠি বড় মসজিদে সকাল সাতটায় একটি জামাত হবে।

পুরান ঢাকা তারা মসজিদে সকাল সাড়ে আটটা ও নয়টায়, রায়সাহেব বাজার জামে মসজিদে সাড়ে আটটায়, নিমতলী ছাতা মসজিদে সকাল আটটা ও নয়টায়, আগামছি লেন জামে মসজিদে সকাল সাড়ে সাতটা ও সাড়ে আটটায় এবং বায়তুল মামুর জামে মসজিদে সকাল সোয়া আটটা ও নয়টায় ঈদের জামাত হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া মহাখালীর মসজিদে গাউসুল আজমে তিনটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

করোনার কারণে এবারও ঈদ জামাত আয়োজনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। তবে দুই সিটির মেয়র নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত হচ্ছে না

করোনার সংক্রমণ এড়াতে এবারও দেশের ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দান শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার জামাত হচ্ছে না। কিশোরগঞ্জ কালেক্টরেট ভবনে অনুষ্ঠিত ১৯৪তম ঈদুল আজহার প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার এ সিদ্ধান্ত হয়।

তবে শহরের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ ও মসজিদের প্রাঙ্গণজুড়ে। এখানে সকাল সাড়ে সাতটা, সোয়া আটটা ও সকাল নয়টায় পরপর তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এবার জেলার ১৩ উপজেলার ৬ হাজার ৬৩৮টি মসজিদে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

শর্তসাপেক্ষে ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করা যাবে

করোনা পরিস্থিতিতে ঈদুল ফিতরে খোলা মাঠ বা ঈদগাহে নামাজ আদায় করার অনুমতি দেয়নি সরকার। তবে এবার শর্তসাপেক্ষে ঈদুল আজহার নামাজ ঈদগাহে আদায় করার অনুমতি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ১৩ জুলাই ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ঈদের জামাত আদায়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ১২ নির্দেশনা

১) করোনা সংক্রমণের স্থানীয় পরিস্থিতি ও মুসল্লিদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করে ঈদুল আজহার জামাত মসজিদ নাকি ঈদগাহে বা খোলা জায়গায় হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঈদের নামাজ আদায়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক জারি করা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।

২) মসজিদে ঈদের নামাজ আয়োজনের ক্ষেত্রে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন।

৩) প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে মসজিদ/ঈদগাহে আসতে হবে। ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।

৪) করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকল্পে মসজিদ ও ঈদগাহে ওজুর স্থানে সাবান, পানি ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।

৫) মসজিদ/ঈদগাহ মাঠের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/ হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান ও পানি রাখতে হবে।

৬) ঈদের নামাজের জামাতে আগত প্রত্যেক মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।

৭) ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে।

৮) শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিতদের ঈদের নামাজের জামাতে অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করা হলো।

৯) সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।

১০) ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করতে হবে।

১১) করোনা মহামারির এ বৈশ্বিক মহাবিপদ থেকে রক্ষা পেতে বেশি বেশি তওবা, আস্তাগফিরুল্লাহ ও কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে এবং ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।

১২) খতিব, ইমাম, মসজিদ/ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

এসব নির্দেশনা না মানলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট মসজিদের পরিচালনা কমিটিকে নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Others জাতীয়