কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অবৈধভাবে এনবিএল থেকে ৮৮৭ কোটি টাকার ঋণ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অবৈধভাবে এনবিএল থেকে ৮৮৭ কোটি টাকার ঋণ

 

বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক (এনবিএল) নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ১৪৬ কোম্পানিকে ৮৮৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকটির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম বুলবুল অবৈধভাবে এসব ঋণ অনুমোদন করেন। চারটি শাখা থেকে ঋণ ছাড় করা হয়, যাতে পরিচালনা পর্ষদের কোনো অনুমোদন ছিল না। এ সময়ে পর্ষদের কোনো বৈঠকও হয়নি। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুমোদন ক্ষমতার বাইরে এএসএম বুলবুল এসব ঋণ দিয়েছেন। অবৈধভাবে দেওয়া ঋণের আংশিক পর্যালোচনা করে তিন কোম্পানির ৬২৬ কোটি টাকা খেলাপি করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ব্যাংকের পরিচালক রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদারের উৎসাহে এসব ঋণ অনুমোদন করেন এএসএম বুলবুল। বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংকে বুলবুলকে নিষিদ্ধ করার পর সম্প্রতি তাকে সিকদার গ্রুপের বড় পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক পরিদর্শনে এনবিএলে সিকদার পরিবারের বেনামি ঋণসহ স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে।

গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৩১ মার্চের মধ্যে অনুমোদন ছাড়া দেওয়া ঋণে অনাপত্তির জন্য গত ২০ জুন এনবিলের পরিচালনা পর্ষদের ৪৪৬তম সভা ডাকা হয়। বৈঠকে ব্যাংকের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন এবং জাকারিয়া তাহেরের প্রকাশ্য বিরোধিতার পরও সিকদার পরিবারের প্রভাবের কারণে তা পাস হয়। পর্ষদে অনুমোদনের পর অনাপত্তির জন্য সম্প্রতি পাঠানো হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। তবে এই ঋণে অনাপত্তি দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে সব ধরনের নিয়ম মেনে কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এনবিএলের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়, এএসএম বুলবুল স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৩১ মার্চ সময়ে অবৈধ আর্থিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে মোট ১৪৬ কোম্পানিকে অবৈধভাবে ঋণ দিয়েছেন, যার পরিমাণ ৮৮৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। মহাখালী, দিলকুশা, গুলশান করপোরেট ও রংপুর শাখা থেকে যা বিতরণ বা নবায়ন করা হয়। ক্ষমতাবহির্ভূতভাবে ঋণ দেওয়ায় এএসএম বুলবুলসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া এএসএম বুলবুল যেন ভবিষ্যতে কোনো ব্যাংকের কর্মকর্তা বা পরিচালক পদে আসতে না পারেন, সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার গত ১০ ফেব্রুয়ারি মারা যান। এরপর নতুন চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন তার স্ত্রী মনোয়ারা হক সিকদার। ব্যাংকটির বর্তমান ৯ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে সিকদার পরিবার ও সিকদার গ্রুপের কর্মকর্তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এর মধ্যে এবি ব্যাংকে ঋণখেলাপি থাকার কারণে গত ২৭ জুন পরিচালক পদ হারিয়েছেন তাদের ছেলে রিক হক সিকদার। বর্তমানে মনোয়ারা সিকদার ছাড়াও ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে আছেন তার ছেলে রন হক সিকদার ও মেয়ে পারভীন হক সিকদার। সিকদার গ্রুপের কর্মকর্তা নাইমুজ্জামান ভূঁইয়া মুক্তা স্বতন্ত্র পরিচালক ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান। আর সিকদার ইন্স্যুরেন্সের পক্ষে পরিচালক হিসেবে আছেন বদিউল আলম।

গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক না হলেও ক্ষমতাবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদন ও নবায়নের একটি অভিযোগ আসে বাংলাদেশ ব্যাংকে। এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে নতুন ঋণ বিতরণে নিষেধাজ্ঞাসহ নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত ৪ মে ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে নতুন ঋণ বিতরণে নিষেধাজ্ঞাসহ বেশ কিছু শর্ত আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব শর্তের মধ্যে ছিল- ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত ৮৭ শতাংশে না আসা পর্যন্ত নতুন ঋণ দেওয়া যাবে না। একক গ্রাহকের ঋণসীমা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে ব্যাংকের ৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের ৫ শতাংশ সমপরিমাণ ১৫৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলে যা হবে ৩০৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আর বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং অন্য ব্যাংকের ঋণ অধিগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণ গ্রহীতার তথ্য মাসিক ভিত্তিতে জানাতে বলা হয়। আর ব্যাংকের উপদেষ্টা, পরামর্শক ও এমডির নিচের দুই পদে নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি নিতে বলা হয়। গত ৬ এপ্রিল চিঠি দিয়ে এএসএম বুলবুলকে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (চলতি দায়িত্ব) দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ব্যাংকটির এমডির দায়িত্ব পান অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ সৈয়দ আব্দুল বারী।

জানতে চাইলে এনবিএলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম বুলবুল সমকালকে বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দেওয়ার পর্যালোচনা সঠিক নয়। ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়। পরে পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে যা অনুমোদিত হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সঠিক ব্যক্তি ও খাতে এসব ঋণ দেওয়া হয়েছে। যারা ঋণ পেয়েছেন, তারা ঠিকমতো ফেরতও দিচ্ছেন। তিনি বলেন, শান্তনা এন্টারপ্রাইজ, কর্ণফুলী লিমিটেড, স্টেপ মিডিয়াসহ যাদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সবাই ন্যাশনাল ব্যাংকের পুরাতন ও ভালো গ্রাহক। এক্ষেত্রে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। আবার নিয়মেরও ব্যত্যয় হয়নি। ওই সময় করোনা মহামারিসহ নানা কারণে পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে চেয়ারম্যান মারা যান। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য তো আর বন্ধ থাকে না। যে কারণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়।

পর্যালোচনায় যা পেল বাংলাদেশ ব্যাংক :পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক ছাড়াই দেওয়া ঋণের আংশিক পর্যালোচনায় শান্তনা এন্টারপ্রাইজ, কর্ণফুলী লিমিটেড ও স্টেপ মিডিয়ার ঋণে অনিয়ম পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে শান্তনা এন্টারপ্রাইজের ৪৪৯ কোটি টাকা, কর্ণফুলী লিমিটেডের ১৭২ কোটি ৩৪ লাখ ও স্টেপ মিডিয়ার সাড়ে ৪ কোটি টাকা খেলাপি করতে হবে। এই তিন কোম্পানিকে পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া ৪১৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৪৩ কোম্পানিকে দেওয়া ৪৭১ কোটি ৭১ লাখ টাকা ঋণের তথ্য পর্যালোচনা করে শিগগিরই আরও প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, চারটি জাহাজ আমদানির জন্য গত ২ মার্চ ১৭৬ কোটি টাকা সমমূল্যের ২ কোটি ৮ লাখ ডলারের এলসি সুবিধার জন্য এনবিএলের দিলকুশা শাখায় আবেদন করে কর্ণফুলী লিমিটেড। পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই ব্যাংকটির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত এমডি এএসএম বুলবুলের মৌখিক নির্দেশে গত ৯ মার্চ মাত্র ৫ শতাংশ মার্জিনের শর্তে এলসি খোলা হয়। গ্রাহকের পক্ষে ওই মাসেই দু’দফায় ১৭২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা পরিশোধ করে ব্যাংক। অথচ এনবিএলের নিজস্ব নীতিমালার আলোকে এমডি নূ্যনতম ১০ শতাংশ মার্জিনে সর্বোচ্চ আড়াই কোটি টাকার এলসি সুবিধা অনুমোদন দিতে পারেন। আর ৫ শতাংশ মার্জিনের কথা বলা হলেও গ্রাহক থেকে অনেক কম মার্জিন নেওয়া হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় ১৭২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা গুণগত মানে খেলাপি হিসেবে শ্রেণিকরণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখায় শান্তনা এন্টারপ্রাইজের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৪৯ কোটি টাকা। অথচ এ কোম্পানির জন্য ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদিত ঋণসীমা ২১০ কোটি টাকা। সীমার অতিরিক্ত ২৩৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে চলতি বছর। আবার ঋণের অর্থ যথাসময়ে ছাড় না করে গ্রাহককেও ফেলা হয়েছে বিপদে। কেননা ট্রাস্ট ব্যাংকের ঋণ অধিগ্রহণের জন্য ২০১৯ সালের মে মাসে ১৯০ কোটি টাকার আবাসন ঋণের আবেদন করে শান্তনা এন্টারপ্রাইজ। অধিগ্রহণের শর্ত অনুযায়ী ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে পুরো অর্থ জমা না হলে সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিল হওয়ার কথা ছিল। কয়েক দফা সময় পেয়েও টাকা ছাড় না করায় গত বছরের ৫ অক্টোবর সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিল করে ট্রাস্ট ব্যাংক। পরবর্তী সময়ে ৯টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে শান্তনা এন্টারপ্রাইজের পক্ষে মোট ২৮৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা দিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। সুদে-আসলে গত ১৩ এপ্রিল যার স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২৯৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে, একই গ্রাহকের ২০ কোটি টাকার ওভার ড্রাফট ঋণসীমার বিপরীতে গত ৩১ মার্চ ঋণ স্থিতি দাঁড়ায় ১৫৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অনুমোদনের অতিরিক্ত এই ১৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে চলতি বছরের মার্চের মধ্যে। পর্ষদের অনুমোদনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যথাসময়ে ঋণ অধিগ্রহণ না করে গ্রাহককে অতিরিক্ত ৯৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এই গ্রাহকের পুরো ঋণ খেলাপি করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্টেপ মিডিয়াকে তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি কিনতে চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি সাড়ে ৪ কোটি টাকা ঋণ দেয় গুলশান শাখা। এএসএম বুলবুল যা অনুমোদন করেন ২৮ ফেব্রুয়ারি। অথচ ন্যাশনাল ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালায় গাড়ি কেনার জন্য এমডি একজন গ্রাহককে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ঋণ অনুমোদন করতে পারেন। এই ঋণও খেলাপি করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নিয়ম-নীতি অমান্য করে সিকদার পরিবারের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এনবিএলে ভঙ্গুর অবস্থা তৈরি হয়েছে। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৭ সালে ব্যাংকটির ওপর দুটি বিশদ পরিদর্শনে সিকদার পরিবারের নানা অনিয়মের তথ্য উঠে আসে। ২০১৪ সালের অক্টোবরে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পর্যবেক্ষক থাকলেও ব্যাংকটির আর্থিক পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।

সিকদার পরিবারের ঋণে জালিয়াতি :বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে আসে যে, ব্যাংকের সীমান্ত স্কয়ার শাখা থেকে অস্তিত্বহীন কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনালকে ২০১৩ সালে ১৩২ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়। ওই বছরের ১৩ মে আবেদন এবং ১৬ মে মঞ্জুরিপত্র দেওয়া হয়। অথচ প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধিত হয় ২১ মে। কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনালের ঋণ আবেদনে ভবন ও জমির মালিক দেখানো হয় পারভীন হক সিকদারসহ অন্য দু’জনকে। আর জমি ও ভবন বিক্রির সাফকবালা দলিলে মালিক হিসেবে তার মা মনোয়ারা সিকদার স্বাক্ষর করেন। এ ঋণে আদায় না থাকলেও কয়েক দফায় পুনঃতফসিল, সুদ মওকুফসহ নানা উপায়ে তা নিয়মিত দেখিয়ে আসছে ব্যাংকটি।

সিকদার রিয়েল এস্টেট থেকে বাজারদরের কয়েক গুণ বেশি দামে ফ্লোর ক্রয় দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের ঋণ নেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে। দীর্ঘদিন ধরে আদায় না হলেও তা নিয়মিত দেখানো হচ্ছে। সুদে-আসলে বর্তমানে এসব ঋণের বকেয়া স্থিতি ৭০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলায় সিকদার রিয়েল এস্টেট থেকে প্রতি বর্গফুট ১২ হাজার ৮২০ টাকা দরে ক্রয় দেখিয়ে ১৩৮ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে ইফসু ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ অনুমোদনের আগেই সিকদার রিয়েল এস্টেটের হিসাবে পুরো টাকা ছাড় করে ব্যাংকটির মুন্সীগঞ্জের নিমতলী শাখা। একই শাখা থেকে এসএম দিদারুল ইসলামের নামে ৩৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ঋণ সৃষ্টি করে তা সিকদার রিয়েল এস্টেটে পরিশোধ দেখানো হয়। এক্ষেত্রেও মঞ্জুরিপত্র পাওয়ার আগেই ঋণ ছাড় হয়। মুন্সীগঞ্জের নিমতলায় সিকদার রিয়েল এস্টেট থেকে ২৪ হাজার টাকা বর্গফুট দরে ফ্লোর কিনতে জিকে স্টিলকে আড়াই কোটি এবং জিকে এসএস পাইপের ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা দেয় ব্যাংকটির সীমান্ত স্কয়ার শাখা। সিকদার রিয়েল এস্টেটের ধানমন্ডিতে থাকা ভবনের ফ্লোর কিনতে এ শাখা থেকে হেল্পলাইন রিসোর্সকে দেওয়া হয় ৭০ কোটি টাকা। এ ধরনের আরও কয়েকটি অনিয়ম পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সার্বিক বিষয়ে জানতে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান পারভীন হক সিকদারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের কথা উলেল্গখ করে তার বক্তব্য চাওয়া হলে তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর আর কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জমি বেচাকেনার ব্যবসায় ব্যাংকের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। অথচ সাভারের পানিশাইলে ২০ একর এবং রায়েরবাজারে ২০ বিঘা জমি কেনে ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকের জমি বিক্রির টেন্ডারে অংশ নিয়ে রায়ের বাজারের জমি ৪৫ কোটি টাকায় কেনার জন্য নির্বাচিত হন আশরাফুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। তবে অজ্ঞাত কারণে এই জমির দলিল হয় ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান ও তৎকালীন পরিচালক মনোয়ারা সিকদারের নামে। এ ছাড়া ২০১২ সালে পানিশাইলের জমি কেনে প্রয়াত সাংসদ আসলামুল হকের মালিকানাধীন মেসার্স মাহিম রিয়েল এস্টেট। এরপর থেকে দেদার ঋণ পান তিনি। আসলামুল হকের মালিকানাধীন মাইশা গ্রুপকে ২ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক, যেখানে বিভিন্ন অনিয়ম পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থ বাণিজ্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *