মোস্তফা ইমরুল কায়েস
নিজেকে কখনও সিআইপি, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, উপস্থাপিকা আবার কখনও সাহিত্যিক বা লেখিকা বলে দাবি করেন তিনি। সুবিধামতো বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে দেন।
নিজের অবস্থান জানান দিতে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন খুলে সাহায্য-সহযোগিতাও করেন। তবে আরও প্রচারের প্রত্যাশায় নিজেই খুলে বসেন ‘জয়যাত্রা’ নামে অনুমোদনহীন একটি অনলাইন টিভি। এতে সংবাদকর্মী নিয়োগের নামে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।
শুধু কি তাই, নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির নেত্রী বলেও পরিচয় দেন বিভিন্ন জায়গায়। এতসব পরিচয় বহনকারী সেই নারী হচ্ছেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। যিনি অন্যের জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে সমালোচিত। সম্প্রতি চাকরিজীবি লীগের সভাপতি পদে তার নাম আসার পর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন। যদিও তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
হেলেনা জাহাঙ্গীরের জন্ম ১৯৭৪ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার তেজগাঁওয়ে। স্বামী জাহাঙ্গীর আলম একজন ব্যবসায়ী। ১৯৯০ সালে তারা বিয়ে করেন। হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাবা মরহুম আবদুল হক শরীফ ছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। সেই সূত্রে হেলেনার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের হালিশহরের মাদারবাড়ী, সদরঘাট এলাকায়। পড়াশোনা স্থানীয় কৃষ্ণচূড়া স্কুলে। অষ্টম শ্রেণিতে থাকাকালে তার বিয়ে হয়। এরপর তিনি স্নাতক পাস করেন বলে দাবি করেন।
আওয়ামী লীগ নেতা বলে পরিচিত এই নারী শুরুতে ছিলেন জাতীয়তাবাদী ঘরানার। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, হেলেনা হাওয়া ভবন ও বিএনপি কার্যালয়ে সবার পরিচিত মুখ। তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বান্ধবী হিসেবেও কম পরিচিত ছিলেন না। অনেকে বলছেন, হেলেনা জাহাঙ্গীর জাতীয়তাবাদী মহিলা দল ঢাকা মহানগর কমিটির সহসভাপতি ছিলেন।
২০১৩ সালের দিকে দলের গ্রুপিংয়ে পড়ে মারধরের শিকার হন। এরপর চলে যান মালয়েশিয়া। সেখান থেকে দেশে ফিরে নিজেকে ‘সিস্টার হেলেনা’ বলে প্রচার করেন। ২০১৪ সালে শুরু হয় তার খোলস বদলানোর গল্প। বিএনপির সক্রিয় কর্মী হলেও নিজেকে তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে প্রচার করতে থাকেন। সেই সঙ্গে নিজের পরিচয় ঢাকতে খুলে বসেন আইপি টিভি। নিজেকে সাংবাদিক বলে জাহির করতে শুরু করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হেলেনা মিরপুর-১১ নম্বরের একটি বহুতল ভবনের দুটি ফ্লোর নিয়ে কাপড় সেলাইয়ের কারখানা খুলে বসেন। পরে নানারকম প্রভাব খাটিয়ে মিরপুর-কালশী সড়কে রাজউকের জায়গা দখল করে রাতারাতি বিপণিবিতান নির্মাণ করেন এবং ভাড়া দেন। অবশ্য পরে ভবনটি ভেঙে দেয় রাজউক কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া রূপনগর এলাকায় রাজউকের দুটি প্লট দখলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
হেলেনা আইটি টিভি খুলে সারা দেশের প্রতিনিধিদের কাছে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের নামে চাঁদাবাজি শুরু করেন।
কয়েক মাস আগে বিষয়টি আলোচনায় আসে। তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, হেলেনা এতসব করেছেন শুধু কুমিল্লার এমপি হওয়ার জন্য। তিনি টাকা দিয়ে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের কমিটিতেও জায়গা করে নেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন পাননি। সম্প্রতি কুমিল্লা-৫ আসনের উপনির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। সেখানেও মনোনয়ন পাননি।
হেলেনা জাহাঙ্গীর একাধিক সামাজিক সংগঠন ও ক্লাবের সদস্য হয়েছেন। তার যুক্ততা রয়েছে গুলশান ক্লাব, গুলশান নর্থ ক্লাব, বারিধারা ক্লাব, কুমিল্লা ক্লাব, গলফ ক্লাব, গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাব, বিজিএমইএ অ্যাপারেল ক্লাবসহ অভিজাত ক্লাবগুলোর সঙ্গে। এসব পরিচয়ের পাশাপাশি নিজেকে এফবিসিসিআইয়ের সদস্য ও নির্বাচিত পরিচালক বলেও পরিচয় দিতে ভালোবাসতেন তিনি।
সম্প্রতি সময়ের আলোর সঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীরের কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক। ছোটবেলা থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। খালেদা জিয়া ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে তোলা ছবির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের ছেলের বিয়েতে গিয়ে সেখানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। এ ছাড়া এরশাদ সাহেব আমার ছেলের বিয়েতে এসেছিলেন।’