ফারুক মেহেদী
লকডাউনে কেমন চলছে এগ্রিবিজনেস? অন্য খাতে করোনার প্রভাব কেমন পড়েছে? সামনে অর্থনীতির চিত্রটা কেমন হবে? এসব বিষয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন এসিআই এগ্রিবিজনেস এবং এসিআই মোটরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. এফ এইচ আনসারী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারুক মেহেদী।
আজকের পত্রিকা: এই করোনায় আপনাদের ব্যবসা কেমন চলছে?
ড. এফ এইচ আনসারী: আমাদের কৃষি ব্যবসা বেশ ভালো। প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশ। আমাদের মোটরসাইকেল ব্যবসাও ভালো। প্রবৃদ্ধি একটু কম ১২ শতাংশ। কারণ, ভারত থেকে আমদানি করি যন্ত্রপাতি যন্ত্রাংশ, সেখানে একটু সমস্যা ছিল। সংখ্যায় কম হলেও ভ্যালুতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশ। যদিও পুরো খাতের ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ। আমাদের ওষুধ ব্যবসা এবং সুপারশপ স্বপ্নও খুব ভালো এগিয়েছে। কনজিউমার ব্র্যান্ডও সন্তোষজনক অগ্রগতি করছে।
আজকের পত্রিকা: এগ্রিবিজনেস ভালো করার কারণ কী?
ড. এফ এইচ আনসারী: প্লাস্টিকের ব্যবসা খারাপ গেছে। কারণ, লকডাউনে এ ধরনের ব্যবসা বন্ধ রাখতে হয়েছে। কিন্তু কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প, ওষুধ শিল্প–এসব সরকার বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে চালু রেখেছিল। যার ফলে কৃষি উৎপাদন, সরবরাহ ও বাজারজাতকরণ স্বাভাবিক ছিল। যার কারণে যথেষ্ট ভালো ব্যবসা হয়েছে। যেহেতু কোভিডের চিকিৎসা সীমিত, ভ্যাকসিনও ঠিকমতো আসেনি, তাই মানুষ তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশি বেশি খেয়েছে। এটা পুরো ফুড ব্যবসায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ কাজে সরকার পরিবহন থেকে দোকানপাটও খোলা রেখেছিল। এতে বিক্রিও হয়েছে কাঙ্ক্ষিতমাত্রায়। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতেও একই অবস্থা হয়েছে।
আজকের পত্রিকা: গ্রামীণ কর্মসংস্থান কি স্বাভাবিক ছিল?
ড. এফ এইচ আনসারী: মোটরসাইকেল ব্যবসা সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগেই আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছিলাম। আমাদের মোটরসাইকেলগুলো ডিলারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। তারা বাড়ি থেকে এসব ডেলিভারি দিয়েছে। যেহেতু দেশের বাইরে থেকে লোকজন ফিরে এসেছে, ঢাকা শহর থেকে অনেকে গ্রামে ফিরে গেছে, তারা হয়তো একটি হ্যান্ড ট্রাক্টর কিনেছে, সার্ভিস ক্রিয়েট করে কাজের ব্যবস্থা করে ফেলেছে। অনেকে সবজি, ফল ও ফুলের বাগান করেছে। এতে করে কাজে গতি ছিল। ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে কৃষি ও কৃষি যন্ত্রপাতি খাতে।
আজকের পত্রিকা: করোনায় তাহলে গ্রামীণ অর্থনীতি ক্ষতি হয়নি?
ড. এফ এইচ আনসারী: গ্রামীণ অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো ধান বা চাল, মাছ ও মুরগি। সেখানে একটা বিরাট কর্মচাঞ্চল্য চলছে। কারণ, ধানের দাম বেড়ে গেছে। দেড় বছর আগে ধানের মণ ছিল ৬০০ টাকা। এখন তা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। এখন একই জমিতে ধান উৎপাদন করে তারা যদি ৭০ শতাংশ বেশি টাকা পায়, তাতে ওদের লাভ। সবজি, মাছ, মুরগি ও ডিমের দামও ভালো পেয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে উৎপাদন করে ভালো দামে পণ্য বিক্রি করতে পারা এবং বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় ব্যাস্টিক অর্থনীতি বেশ ভালোই ছিল। যদিও এর আকার ছোট এবং জিডিপিতে এর অবদান কম; তারপরও এটা অর্থনীতিতে শক্তি সঞ্চার করেছে।
আজকের পত্রিকা: শহরকেন্দ্রিক অর্থনীতি বা সেবা খাত কেমন ছিল?
ড. এফ এইচ আনসারী: সমস্যাটা হয়েছে সামষ্টিক অর্থনীতিতে। রেস্তোরাঁ, পর্যটনসহ আরও বেশ কিছু সেবা খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ, এগুলো শহরকেন্দ্রিক। লকডাউনে এসব খাত ভালো চলেনি। পুরো অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান অনেক বেশি। যেমন আমাদের পরিবহন খাতটি অনেক বড়। সেখানে একটি বাসের সঙ্গে তিনজন লোক থাকে। তারা বসে গেছে। ট্রাকের ব্যবসাও ভুগছে। বলা যায়, পুরো সেবা খাতই মারাত্মক বিপর্যয়ে পড়েছে। গার্মেন্টসে যারা বড়, তারা টিকে গেছে, যেহেতু ইউরোপ আমেরিকায় সব খুলছে, অর্ডার আসছে। তবে ছোটরা অনেকে হারিয়ে গেছে।
আজকের পত্রিকা: আগামী দিনের অর্থনীতি কেমন থাকবে বলে আপনার ধারণা?
ড. এফ এইচ আনসারী: কোভিডের দেড় বছর হয়েছে। এর মধ্যেও বাংলাদেশ বেশ ভালো দক্ষতা অর্জন করেছে। এখন মানুষ মোটামুটিভাবে চিকিৎসা পাচ্ছে। হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা বাড়ছে। চিকিৎসকেরা দক্ষ হচ্ছে। আর ভ্যাকসিনও সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে। সহযোগী দেশগুলো বাংলাদেশকে টিকা দেওয়া শুরু করেছে। জাপান, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন সবাই তো দিচ্ছে। ইইউ অনেক বেশি ভ্যাকসিন মজুত করেছিল। সেগুলোর যখন মেয়াদ শেষের দিকে যাবে তখন তারাও আমাদের মতো দেশে সহযোগিতার অংশ হিসেবে ভ্যাকসিন পাঠাবে। এর মধ্যে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেড়েছে। তারা আর আগের মতো ভয় পায় না। এসব কারণে সামনের অর্থনীতি অতটা খারাপ হবে না, বরং ভালোর দিকে যাবে। সেবা খাত হয়তো অতটা ভালো করবে না।