নিজস্ব প্রতিবেদক: পৃথিবীর যে কোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। এখানে বিনিয়োগ করলে লাভের সম্ভাবনা বেশি। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে অংশীদার হওয়ার সামর্থ্য ও সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। তাই কোনো অনুদান কিংবা সহায়তা নয়Ñ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অংশীদার হতে চায় বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ শহর লস এঞ্জেলেসে স্থানীয় সময় শুক্রবার বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে রোড শো’তে বক্তারা এসব কথা বলেন।
লস এঞ্জেলেসের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত রোড শো’র মূল বিষয়বস্তু ছিল ‘রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার : পটেনশিয়াল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট’। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, রফতানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন, আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ার, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম অর্থনৈতিক অংশীদার। আমরা দেশটির সহায়তা নয় বিনিয়োগ চাই। প্রবাসীদের সব ধরনের জটিলতা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিমানবন্দরে অভিবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) গেটের ব্যাপারে সালমান এফ রহমান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত যৌক্তিক। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগের কোম্পানি একেবারেই সহজ। তাই প্রবাসীদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসা উচিত।
অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিভিন্ন জটিলতা নিরসন হলে তারা ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগে প্রস্তুত। এ সময় বিমানবন্দরে এনআরবিদের জন্য আলাদা গেট দাবি করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে স্থিতিশীল বাংলাদেশ। এ অবস্থায় এ দেশে বিনিয়োগ লাভজনক।
অন্যদিকে অনুষ্ঠানে প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করলে আগামী বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা বিশাল। কিন্তু আমাদের অর্থনীতিতে যে অর্জন ও সম্ভাবনা রয়েছে, উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের কাছে তা তুলে ধরা হয়নি। যে কারণে আমাদের ওইভাবে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। এ কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য আমরা এ ধরনের ‘রোড শো’র উদ্যোগ নিয়েছি। কেউ কেউ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রোড শো কেন। আমাদের জবাব হচ্ছেÑ সহায়তা নয়, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ চাই।
তিনি বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ বিশাল বাজার রয়েছে আমাদের। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। কম মূল্যে শ্রমিক, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অন্যান্য সেবা মিলছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে ২০৫০ সালে বিশ্বের ২৩তম অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। সংস্থাটির তথ্য অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হলো বাংলাদেশ। একই পূর্বাভাস দিয়েছে আরেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হংকং সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশন (এইচএসবিসি)। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশ। আর মোট জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধিকে সাপোর্ট দিতে ২০২০ সালে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৮৬০ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা দুই হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অনুসারে করোনার মধ্যে ২৩ দেশ অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক অবস্থানে থাকবে। সংস্থাটি বলছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তি সাত কোটি। এর মধ্যে সাড়ে পাঁচ কোটিই বয়সে তরুণ।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা তুলে ধরে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগ আকর্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের চারটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে ১০ দিনের রোড শো আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ও লস এঞ্জেলেসে রোড শো শেষ হয়েছে। আগামী ২ আগস্ট সানফ্রানসিসকোয় অনুষ্ঠিত হবে এ কর্মসূচি। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বে সবচেয়ে প্রভাবশালী এই দেশটিতে বাংলাদেশকে তুলে ধরে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেন সে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।