নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্যপদ থেকে বহিষ্কৃত হেলেনা জাহাঙ্গীরের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত আরও তিন নারী ও চার যুবককে পুলিশ খুঁজছে। তাদের মাধ্যমেই হেলেনা চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেলিং ও গুজব রটানোর মতো অপকর্ম করতেন। অন্যদিকে, হেলেনার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভোলার সাংবাদিক আবদুর রহমান তুহিন। গতকাল ঢাকা মহানগরের পল্লবী থানায় মামলাটি করেন তিনি। এদিকে, পল্লবী থানার মামলার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আবদুর রহমান তুহিন নামে এক সাংবাদিক চাঁদাবাজি ও প্রতারণার অভিযোগ এনে মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ৯।
ওসি বলেন, এই নিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় দুটি মামলা হলো। অনুমোদন ও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া জয়যাত্রা টিভির সম্প্রচারের অভিযোগে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন আইনে র্যাব-৪-এর একজন উপপরিদর্শক (এসআই) গত শুক্রবার রাতে প্রথম মামলাটি করেন। দুটি মামলারই তদন্ত চলছে। মামলা সূত্রে জানা যায়, জয়যাত্রা টেলিভিশনের ভোলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়ার নামে টেলিভিশনটির চেয়ারম্যান হেলেনা জাহাঙ্গীর ও তার সহযোগীরা দেড় লাখ টাকা নিয়েছিলেন। তবে প্রতিনিধি হিসেবে ক্যামেরাসহ যেসব সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল তাকে, সেগুলো দেওয়া হয়নি। উল্টো তার কাছ থেকে প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। টাকা ফেরত চেয়ে বিভিন্ন সময় হেলেনা ও তার সহযোগীদের ফোন করলেও তারা হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। সম্প্রতি ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে হেলেনা জাহাঙ্গীরের নাম আসায় তাকে আওয়ামী লীগের উপকমিটির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। চার ঘণ্টার অভিযান শেষে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার ও বাসা থেকে বিদেশি মদ, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, চাকু, ওয়াকিটকিসহ বিভিন্ন অবৈধ সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এরপর রাত দেড়টা থেকে ৪টা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর-১১ নম্বরের এ ব্লকের ৩ নম্বর রোডে হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন জয়যাত্রা টেলিভিশনের কার্যালয়ে অভিযানে যায় র্যাব। সেখান থেকেও বিভিন্ন অবৈধ সরঞ্জাম জব্দ করার দাবি করেছে র্যাব। এসব ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে হেলেনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত রাজধানীর গুলশান ও পল্লবী থানায় মোট চারটি মামলা করেছে। এর মধ্যে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় করা দুটি মামলার মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়েছে। গত রবিবার বিকালে গুলশান থানা থেকে মামলার তদন্তভার ডিবির স্পেশাল সাইবার ক্রাইম বিভাগে দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে হেলেনা জাহাঙ্গীর উদ্দেশ্যমূলকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মানহানি ও সুনাম নষ্ট করেছেন। তিনি মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেন। খ্যাতি লাভের আশায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের বিব্রত করতেন। অনৈতিকভাবে সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে খ্যাতনামা হিসেবে উপস্থাপন করতে চতুরতার আশ্রয় নিতেন তিনি। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তিনি একটি সংঘবদ্ধ চক্র তৈরি করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ফেসবুক লাইভে এসে অযাচিত ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিতেন। তদন্তে তার সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।