শেরপুর প্রতিনিধি
শেরপুরের শ্রীবরদীতে লকডাউন অমান্য করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ৪ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা হামলা চালিয়েছে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর।
বুধবার (৪ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার ঝগড়ারচর বাজারে ওই ঘটনা ঘটে। হামলায় আহতরা হলেন- ময়মনসিংহ বিজিবি-৩৯ ব্যাটালিয়ানের সদস্য রুবেল খন্দকার (৩৫) ও সবুজ (২০) এবং শ্রীবরদী থানার এএসআই আজহারুল হক (৩৬) ও কনস্টেবল জান্নাত (২৫)। তাদেরকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, এসময় লিটন মিয়া নামে স্থানীয় এক কাপড় ব্যবসায়ীও আহত হয়েছেন। ব্যবসায়ীদের দাবি, অযৌক্তিকভাবে জরিমানা আদায়ের প্রতিবাদ করায় কাপড় ব্যবসায়ী লিটন মিয়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার কারণেই তারা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
জানা যায়, বুধবার বেলা ১২টার দিকে চলমান লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল আমিন ও সানাউল মোর্শেদের নেতৃত্বে শ্রীবরদী উপজেলার ঝগড়ারচর বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এসময় দোকান খোলা রাখায় স্থানীয় ৪ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ওই বাজার ত্যাগ করার সময় ব্যবসায়ীরা লকডাউন উপেক্ষা করে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। তাদের নিবৃত করতে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে গেলে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে বিজিবি ও পুলিশের ৪ সদস্য আহত হয়।
ওই ঘটনায় আহত হওয়া স্থানীয় ব্যবসায়ী লিটনের দাবি, ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে তার দোকান বন্ধ ছিল। তিনি দোকানের সামনে মাস্ক বিক্রি করছিলেন। ওইসময় বিনা কারণে বিজিবি সদস্যরা তাকে মারধর করেন।
ঝগড়ারচর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমাছ আলী বলেন, কাপড় ব্যবসায়ী লিটনকে মারধর করার খবরটি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এবং তাতেই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, ঘটনার বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সানাউল মোর্শেদ জানান, লকডাউন অমান্য করে দোকান খোলা রাখার খবর পেয়ে ঝগড়ারচর বাজারে ৪টি দোকানে জরিমানা করা হয়। পরে সেখানকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা স্থানীয়দের ইন্ধন দিয়ে গুজব রটায় যে, ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিদিন বিনা কারণে জরিমানা করছে। সেইসাথে তারা মাইকিং করে লোকও জড়ো করেন। ওই ইন্ধনের কারণেই সেখান থেকে ফিরে আসার সময় পেছন থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সংঘবদ্ধ হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা চালায় ও ইটপাটকেল ছুড়ে। ওই হামলার ঘটনায় শ্রীবরদী থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা আক্তার বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে কাউকে মারধর করা হয়নি। বরং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত সহনশীলতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। ওই ঘটনায় কেবল স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই নয়, কতিপয় দুস্কৃতকারীও জড়িত রয়েছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, ওই ঘটনার পরপরই ঝগড়ারচর বাজারে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দোকানপাট বন্ধসহ স্থানীয় পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। আর ওই ঘটনায় নিয়মিত মামলা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।