বাজার মন্দা বিএনপি সমর্থিত নামসর্বস্ব সংগঠনগুলোর

বাজার মন্দা বিএনপি সমর্থিত নামসর্বস্ব সংগঠনগুলোর

শফিক সাফি

বিএনপি সমর্থিত নামসর্বস্ব সংগঠনগুলোর বাজার মন্দা। একটা সময় নানা ইস্যুতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে তৎপর থেকেছে এসব সংগঠন। সে সুবাদে তারা আর্থিকভাবে কিছুটা লাভবান হয়েছে। পাশাপাশি বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কোনো এক নেতাকে সামনে রেখে উঠতি নেতাদেরও দলে পদ-পদবি পেতে সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু ২০০৬ সাল থেকেই বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। ফলে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার অনুষ্ঠান আয়োজনেও এসব সংগঠনকে আর দেখা যাচ্ছে না।

নামসর্বস্ব এসব সংগঠনের ব্যাপারে ২০১২ ও ২০১৭ সালে এবং সর্বশেষ গত ২৬ জুলাই বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে সতর্ক করা হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপি এই সংগঠনগুলোকে স্বীকৃতি দেয়নি। তাই তাদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’ ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘এসব সংগঠনের অনুষ্ঠানে আমাদের দলের কিছু নেতাকে অতিথি করা হলে তাঁরা তাতে অংশ নেন। কিন্তু দলের কোনো নেতা এসব সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বা পৃষ্ঠপোষক নন। বিএনপির সঙ্গে এদের কোনো সংশ্লিষ্টতা আগেও ছিল না, এখনো নেই।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয়তাবাদী মতাদর্শী দাবি করে অন্তত ৬৯টি সংগঠন বিভিন্ন সময় নানা ইস্যুতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক একাডেমি, সম্মিলিত সমন্বয় পরিষদ, জিয়া নাগরিক ফোরাম, জিয়া আদর্শ একাডেমি, তৃণমূল দল, জিয়া সেনা, স্বদেশ জাগরণ পরিষদ, দেশনেত্রী সাংস্কৃতিক পরিষদ, দেশপ্রেমিক ফোরাম, জিয়া স্মৃতি সংসদ, চেতনায় ৭১, সচেতন নাগরিক ফোরাম, চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ, নাগরিক অধিকার সোসাইটি, গণতান্ত্রিক ঐক্য ফোরাম, গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক জোট, জাগ্রত জনতা ফোরাম, নাগরিক পরিষদ, গণমুক্তি আন্দোলন পরিষদ, প্রজন্ম একাডেমি, নাগরিক সংসদ, সুশীল ফোরাম, নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ, চিরন্তন বাংলাদেশ, হৃদয়ে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম, জিয়া পরিষদ, তৃতীয় স্বর, দেশপ্রেমিক যুবশক্তি, নাগরিক ফোরাম, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক জোট, সচেতন নাগরিক পরিষদ, গ্রুপ-৯, আমরা ঢাকাবাসী, বাংলাদেশ সচেতন যুবসমাজ, সচেতন দেশপ্রেমিক ফোরাম, জিয়া নাগরিক সংসদ, সামাজিক আন্দোলন সংস্থা, গণতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, সচেতন যুবসমাজ, স্বদেশ মঞ্চ, জিয়া ব্রিগেড, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সেবা দল, জাতীয়তাবাদী বন্ধু দল, ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল, নাগরিক মঞ্চ, সমবায় দল, জাতীয়তাবাদী দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন, জাতীয় মানবাধিকার সমিতি, জিয়া ন্যাশনালিস্ট ফোরাম, বাংলাদেশ উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিষদ, বাংলাদেশ সচেতন যুবসমাজ, বাংলাদেশ মানবাধিকার ফোরাম, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম, চেতনায় মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয়তাবাদী নাগরিক সংসদ, জাতীয়তাবাদী বাউল দল, জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী কল্যাণ পরিষদ, খালেদা জিয়া মুক্তি পরিষদ, তারেক রহমান মুক্তি পরিষদ, তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংগ্রাম পরিষদ, শহীদ জিয়াউর রহমান আদর্শ বাস্তবায়ন পরিষদ, জাতীয়তাবাদী কৃষি আন্দোলন, জনতার ধ্বনি, শত নাগরিক কমিটি, নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম, নব্বই দশকের ছাত্রনেতা ও আজকের প্রজন্ম।

এর মধ্যে ‘জি-নাইন (গ্রুপ-২০০৯)’ ও ‘শত নাগরিক কমিটি’ নামে দুটি সংগঠনকে দলের থিংক ট্যাংক হিসেবে মর্যাদা দেয় বিএনপি। নব্বই দশকের ছাত্রনেতাদের করা একটি সংগঠন এবং নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম নামের আরেকটি সংগঠনকেও দলে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির সমর্থক সংগঠন হিসেবে গড়ে ওঠা প্যাডসর্বস্ব সংগঠনগুলো মূলত জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সামনের সড়কে এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিকেন্দ্রিক বিভিন্ন বিষয়ে মানববন্ধন, সমাবেশ ও সেমিনারের আয়োজন করে থাকে। এক পর্যায়ে এসব সংগঠনের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি ও কর্মকাণ্ড নিয়ে দলের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব (বর্তমানে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব) রুহুল কবীর রিজভী সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয়তাবাদী বন্ধু দল, জাতীয়তাবাদী তরুণ দল, জিয়া ব্রিগেড, জিয়া মঞ্চ, দেশনেত্রী পরিষদ, তারেক রহমান পরিষদ, তারেক রহমান মুক্তি পরিষদসহ অন্তত ৪০টি সংগঠনের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেন।

একইভাবে ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল তারেক জিয়া সেবা ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৬ জুলাই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, শহীদ জিয়া ছাত্র পরিষদ নামে সংগঠনটির সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।

ভুঁইফোড় বিএনপির নামসর্বস্ব সংগঠনগুলোর মধ্যে ৩৮টি মিলে ২০১৪ সালের আগস্টে ‘বিএনপির সহযোগী সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ গঠন করেছিল। তবে এখন আর সেটির কোনো অস্তিত্ব নেই।

তবে স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ দাবি করেন, জাতীয় রাজনীতিতে এসব সংগঠন সক্রিয় না থাকলেও জনমত তৈরিতে এগুলো ভূমিকা রাখে।

রাজনীতি