রুহুল আমিন রাসেল
মাদক কারবারে যুক্ত রাঘববোয়াল ও চোরাচালান সিন্ডিকেটগুলোতে অর্থায়ন করা ব্যক্তি সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে একটি তালিকা করা হয়েছে। চোরাচালান নিরোধ কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্স এ তালিকা করেছে। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। চোরাচালানের মূল হোতাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে বলেও গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চোরাচালান নিরোধ কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্সের ১৯৭তম সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত মূল হোতা ও অর্থায়নকারীদের তথ্য গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে চিহ্নিত করে তাদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কার্যবিবরণীতে অভিমত পোষণ করা হয়েছে, এই তালিকা চোরাচালান প্রতিরোধ সংক্রান্ত সব এজেন্সির সঙ্গে শেয়ার করলে, চোরাচালান প্রতিরোধ কার্যক্রম আরও ফলপ্রসূ হবে। তাই চোরাচালান কাজে অর্থায়নকারী মূল হোতাদের তালিকা শেয়ার করার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স পাওয়া গেলে তা শেয়ার করা যেতে পারে।
কার্যবিবরণীতে এও বলা হয়, চোরাচালানের মূল হোতা ব্যক্তিদের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে যদি তাদের নামের তালিকা অন্যান্য এজেন্সির সঙ্গে শেয়ার করা যায় এবং অন্যান্য এজেন্সি তাদের গতিবিধির ওপর নজরদারি বাড়ায় – তাহলে চোরাচালান অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রামের প্রধান মাদক চোরাচালানের রুট টেকনাফ টু কক্সবাজার। দেশের অতি প্রচলিত মাদক ইয়াবার প্রধান রুট হচ্ছে এ টেকনাফ। এ ধরনের মাদক চোরাচালানে জড়িত ব্যক্তিরা খুব সহজে অনেক অর্থ আয় করে। ফলে এ ধরনের কাজে এক ধরনের মোহ কাজ করে। আবার সমাজের কিছু বিত্তবান মানুষ এ ধরনের অপরাধে অর্থ বিনিয়োগ করে। চোরাচালানের ক্ষেত্রে সাধারণত ক্যারিয়াররা ধরা পড়ে এবং এর পেছনের লোকগুলো ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। এ ধরনের চোরাচালানের নেপথ্যে যারা রয়েছে- তাদের চিহ্নিত করা খুব জরুরি। কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়- গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে তৈরি গোপন তালিকার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভেটিং প্রয়োজন হয়। কারণ- তালিকায় কিছু কিছু নাম থাকে যেগুলো স্পর্শকাতর এবং এগুলো অনেক সময় বিভ্রান্তিও তৈরি করে। তাই চোরাচালানে পেছনে অর্থায়নকারী ব্যক্তিদের আয়কর নথি এবং অন্যান্য রেকর্ডও পর্যালোচনা করা যেতে পারে। এ তালিকাটি নিজেদের মধ্যে বিনিময় করা খুব জরুরি। টাস্কফোর্সের সঙ্গে জড়িত এজেন্সিগুলো তাদের সোর্স বা গোয়েন্দা ইউনিটের মাধ্যমে সংগৃহীত চোরাচালানকারী ও চোরাচালানে অর্থায়নকারী মূল হোতাদের নামের তালিকা একে অপরের সঙ্গে বিনিময় করে, তাহলে কাজটি অনেক ফলপ্রসূ হবে। কারণ- যে সংস্থা তালিকা তৈরি করেছে, তারা তালিকাভুক্ত সব ব্যক্তির ওপর নজরদারি রাখতে সক্ষম হয় না। চোরাকারবারিদের কার্যক্রমের বিস্তৃতি অনেক বেশি। বিভিন্ন স্টেশনে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত দিয়ে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। কার্যবিবরণীতে এনবিআর চেয়ারম্যান ও টাস্কফোর্সের সভাপতি আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম উল্লেখ করেছেন, স্পর্শকাতর ব্যক্তিদের গোপন তালিকা টাস্কফোর্সের মাধ্যমে শেয়ার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স পাওয়া সাপেক্ষে টাস্কফোর্সের অন্তর্ভুক্ত গোয়েন্দা সংস্থা/এজেন্সি, পুলিশ বা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর মাধ্যমে শেয়ার করা যেতে পারে। চোরাচালানকারী বা চোরাচালানে অর্থায়নকারীদের বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকে, তাহলে তা সমাজে প্রচার করা যেতে পারে। এতে সাধারণ মানুষও জানবেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, মাদকসহ হাতেনাতে ধরা আসামিদের ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণ আদালতে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে হবে। কারণ উপস্থাপন দুর্বলতা ও যথাযথ তথ্য-প্রমাণ না থাকায় অনেক সময়ই আসামিরা ছাড়া পায়। তাই চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা খুবই জরুরি। এতে আদালতের জন্য ন্যায়বিচার করাটা সহজ হয়।