রফিকুল ইসলাম সবুজ
গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সবার জন্য মানসম্মত আবাসন নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে। এ কাজে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠানও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এজন্য বেসরকারি আবাসন নীতিমালা সহজ করা হয়েছে। দৈনিক সময়ের আলোর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, রাজউকের পাশাপাশি বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোও ঢাকা শহরের সম্প্রসারণ ও পরিকল্পিত আবাসন নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। আবাসন সংস্থাগুলোকে জলাধার রক্ষা করাসহ সরকারি নিয়ম-কানুন মেনে আবাসন প্রকল্প গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিয়ম মানলে সরকারের অনুমোদন দিতে কোনো সমস্যা হবে না। আমরা চাই, সবার সহযোগিতায় আবাসন সঙ্কট নিরসন হোক।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না। এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও এর অধীন সংস্থাগুলো নিরলসভাবে কাজ করছে। ভিশন ২০৪১, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থার ঐকান্তিক চেষ্টা ও সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান শরীফ আহমেদ। পরে রদবদলে তাকে সরকারের উন্নয়ন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। শরীফ আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাজধানীসহ সারা দেশে আমরা ছোট-বড় শতাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।
পাশাপাশি মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার বাসস্থান নিশ্চিতে বেশকিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজধানীতে আবাসনের গণপূর্ত অধিদফতর, রাজউক ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আজিমপুর ও মতিঝিল, ইস্কাটন, মিরপুর ও বেইলি রোডের কলোনির ফাঁকা জায়গা ও পুরনো ভবনের স্থানে নতুন করে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি দেশের জেলা পর্যায়ে আবাসন প্রকল্প নিয়েছে। এটি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাউজিং এস্টেট তৈরি করে ফ্ল্যাট নির্মাণ, প্লটসহ বাণিজ্যিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্লটের মাধ্যমে পরিকল্পনামাফিক কাজ করা হচ্ছে।
পারিবারিকভাবে রাজনীতিতে আসা মো. শরীফ আহমেদ ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার কামারিয়া গ্রামে ১৯৭০ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ভাষাসৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হক পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং একবার উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শামছুল হক ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুব কাছের রাজনৈতিক সহচর হিসেবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। অধিকারের প্রশ্নে ভাষাসৈনিক শামসুল হক আজীবন আপসহীন ছিলেন। এ কারণে তাকে এ বছর মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়।
শরীফ আহমেদ স্কুলজীবনে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি অর্জনসহ কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করেন। ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর রাজনীতিতে হাল ধরার জন্য তিনি নিজ এলাকা ময়মনসিংহের ফুলপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন শেষে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নিজ পিতার রাজনৈতিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ছাত্রজীবনেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা শরীফ আহমেদ ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরবর্তী সময়ে ময়মনসিংহ জেলা যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য।
রাজনৈতিক জীবনে ২০১৩ সালে জনগণ তাকে তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেন। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তিনি দশম জাতীয় সংসদের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেন, রাজউক ও গণপূর্ত অধিদফতর, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষসহ মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলোতে দুর্নীতি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ কারণে অনিয়ম অনেকাংশে কমে গেছে। রাজউক থেকে নকশা পেতে হয়রানি বন্ধেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে কিছু পদ্ধতিগত পরিবর্তনের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ সেবা ওয়ানস্টপ সার্ভিস সিস্টেম চালু করা হয়েছে। প্রয়োজনে সেবা বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। ঢাকাসহ সারা দেশ নিয়ে পরিকল্পনার জন্য নগর উন্নয়ন অধিদফতর কাজ করছে।