ই-অরেঞ্জের পণ্য কিনে পথে বসেছে ২০০ পরিবার

ই-অরেঞ্জের পণ্য কিনে পথে বসেছে ২০০ পরিবার

এনায়েত করিম বিজয়টাঙ্গাইলই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ থেকে পণ্য কিনে পথে বসেছে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাদিঘী গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার। ক্রেতাদের অনেকে ঋণ নিয়ে, জমি বন্ধক রেখে, আবার কেউ সোনার অলঙ্কার ও গরু বিক্রি করে ই-অরেঞ্জ থেকে কয়েক কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য কিনেছেন বলে দাবি করেছেন।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের কৃষক, দিনমজুর, ভ্যানচালক, প্রবাসী, প্রবাসীর স্ত্রী, চায়ের দোকানদারসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার দুই শতাধিক পরিবারের সদস্য ই-অরেঞ্জে বিনিয়োগ করেছেন। ভুক্তভোগীরা ঋণ নিয়ে, জমি-সোনার অলঙ্কার ও গরু বিক্রিসহ বিভিন্ন উপায়ে টাকা সংগ্রহ করে দ্বিগুণ মুনাফার লোভে বিভিন্ন পণ্য কেনেন। পণ্য কেনার প্রায় চার থেকে ছয় মাস অতিবাহিত হলেও এখনও কেউই তা হাতে পাননি।

এ ঘটনায় গ্রামের একাধিক গ্রাহক ই-অরেঞ্জ কোম্পানির বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানা ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ করেছেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গ্রামের নাশিদুল ইসলাম ২৪ লাখ ৫০ হাজার, কাউছার আহমেদ ২২ লাখ, আমিনুর ২০ লাখ, ইঞ্জিনিয়ার সাগর আহমেদ ১৮ লাখ, রিপন আল মামুন ১৮ লাখ, আইয়ুব আলী ১৫ লাখ, শেফালী আক্তার ১৩ লাখ ৫৭ হাজার, মারুফ ১২ লাখ, মাজেদুল ১২ লাখ, আল আমিন ১০ লাখ, নাজমুল ১০ লাখ, আমিনুল ইসলাম ৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকার পণ্য ই-অরেঞ্জ থেকে কিনেছেন। এভাবে একে-অপরকে দেখে পণ্য কিনেছেন গ্রামের দুই শতাধিক মানুষ।

ইছাদিঘী গ্রামের ভুক্তভোগী নাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘ই-অরেঞ্জ থেকে প্রথমবার পাঁচটি মোটরসাইকেল কিনে ডেলিভারি পেয়েছি। পরে তাদের সাইটে মোটরসাইকেলের ওপরে বিশেষ অফার আসে ডাবল টাকা ভাউচার নামে। তাদের ক্যাম্পেইন থেকে ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার ২৯টি মোটরসাইকেল কিনি। সেই ভাউচারগুলো ডাবল টাকা হয়ে ওয়ারলেটে জমা হয়। লকডাউনের নাম করে তারা বাকি ডেলিভারিগুলো স্থগিত করে। টাকাগুলো আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে এনে এই কোম্পানিতে মোটরসাইকেল কিনি। এখন আমি নিঃস্ব। এ ঘটনায় কোম্পানির বিরুদ্ধে ঢাকার গুলশান থানায় ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। এই এলাকার দুই শতাধিক পরিবার বিভিন্ন পণ্য কেনার জন্য কয়েক কোটি টাকা জমা দিয়েছেন।’

আমিনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি ৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকার বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করেছি। এখনও পণ্য ডেলিভারি পাইনি। আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে আমি পণ্য কিনেছি। এখন আমি নিঃস্ব।’

শাহানাজ নামে এক প্রবাসীর স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামী সৌদিতে থাকেন। আমাদের ঋণ পরিশোধও হয়নি। এলাকার অনেকেই এই কোম্পানিতে পণ্য কেনার জন্য টাকা জমা দিয়েছেন। এ জন্য আমার স্বামীর কাছ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা এনে মোটরসাইকেল কিনেছি। চার মাস চলে গেছে, এখনও মোটরসাইকেল পাইনি।’

পারভীন বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘আমি এই কোম্পানিতে দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকার পণ্য ক্রয় করেছি। আমার প্রবাসী স্বামী বাড়িতে ঘর দেয়ার জন্য টাকাগুলো দিয়েছিলেন। কিন্তু অতি লোভে এই কোম্পানি থেকে পণ্য কয় করেছি। পণ্য পেলে আবার তাদের কাছেই বিক্রি করা যেত এজন্য আরও আগ্রহ হয়ে মোটরসাইকেল ক্রয় করেছি। এখন টাকাও পাচ্ছি না, মোটরসাইকেলও পাচ্ছি না।’

গজারিয়া ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য শিউলি আক্তার বলেন, ‘আমি তিন লাখ টাকার পণ্য কিনেছি। এলাকার অধিকাংশ পরিবার এই পণ্য কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এলাকার বিভিন্ন পরিবার কয়েক কোটি টাকার পণ্য কিনে হাতে পাইনি। ই-অরেঞ্জ কোম্পানির হাতিয়ে নেয়া টাকা আমরা দ্রুত ফেরত চাই।’

সখীপুর থানার ওসি একে সাইদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। তবে কেউ অভিযোগ করেননি এখনও।’

প্রসঙ্গত, তাহেরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৬ আগস্ট গুলশান থানায় ই-অরেঞ্জের মালিক ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে আসামিরা পণ্য সরবরাহ না করে এক লাখ গ্রাহকের এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে পণ্য বুঝে না পাওয়ায় এর আগে ১৬ আগস্ট দিনভর ই-অরেঞ্জের গুলশান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন গ্রাহকরা।

অর্থ বাণিজ্য তথ্য প্রুযুক্তি সারাদেশ