১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলব

১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলব

এগারো সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সাংবাদিক নেতাদের আর্থিক লেনদেনের তথ্য চেয়ে গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের সব ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে। ব্যাংক হিসাব তলবের ঘটনায় উদ্‌বেগ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক নেতারা।

ব্যাংক হিসাব তলব করা সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে রয়েছেন—জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি মোল্লা জালাল ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ, বিএফইউজের অপর অংশের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি আব্দুল কাদের গণি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, ডিইউজের অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালীন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খান।

চিঠিতে বলা হয়, উল্লেখিত ব্যক্তিরা এবং তাঁদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো হিসাব অতীতে অথবা বর্তমানে পরিচালিত হয়ে থাকলে সেসব হিসাবের যাবতীয় তথ্য (যাবতীয় কাগজপত্রসহ হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি, ট্রানজেকশন প্রোফাইল, শুরু থেকে হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী) জরুরি ভিত্তিতে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বিবরণীর শুধু সফটকপি পাঠাতে বলা হয়।

একই সঙ্গে সাংবাদিক এই নেতাদের নামে কোনো হিসাব অতীতে অথবা বর্তমানে পরিচালিত না হয়ে থাকলে, তা-ও জানাতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ চিঠির বিষয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা এ ধরনের কোনো চিঠি পাইনি। তবে, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পেরেছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের হিসাব তলব করেছে। সরকার যেকোনো সময়ে যে কারও ব্যাংকের হিসাব চাইতে পারে।’ তবে, সব নির্বাচিত সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংকের হিসাব চাওয়ার কারণে জনগণের মধ্যে একটা ভুল বার্তা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

সম্পদের হিসাব তলবের বিষয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, ‘আমরা চাই সবার সম্পদের হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করা হোক। সরকার কী উদ্দেশে এটি করছে, হয়তো সামনে এটি পরিষ্কার হবে।’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘সরকার সন্দেহজনক মনে হলে যে কারও ব্যাংক হিসাব তলব করতে পারে। কিন্তু সাংবাদিকদের ছয়টি সংগঠনের নির্বাচিত নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলবের মধ্যে সরকারের অবশ্যই দুরভিসন্ধি রয়েছে বলে আমি মনে করি। এটি স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য বড় ধরনের অশনিসংকেত। সরকার যদি সব পেশাজীবী বা অনেক মানুষের সঙ্গে সাংবাদিকদেরও ব্যাংক হিসাব তলব করতো, তাহলে দোষের কিছু ছিল না। কিন্ত দেখে শুনে সাংবাদিকদের নেতৃত্বদানকারী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলবের মানে হলো সাংবাদিকদের চাপে রাখার কৌশল।’

উদ্‌বেগ প্রকাশ করে এম আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘এমনিতেই দেশে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ নেই। গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও সীমিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় গণমাধ্যমকে নতুন করে চাপে ফেলতেই সরকার এ অভিনব কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। এটি সব সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের জন্য উদ্‌বেগের বিষয়।’

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ‘দেশের সাংবাদিকেরা দুর্নীতিমুক্ত আছেন কি না, সেটা দেখার এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ছিল, আগে থেকে তদন্ত করে যাঁদের ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন রয়েছে, তাঁদের হিসাব তলব করা। এটা হওয়ার কারণে আত্মীয়-স্বজন ও জনগণের মধ্যে ভুল বার্তা যেতে পারে।’

Others