দেশে করোনা সংক্রমণের পর থেকে অনলাইন কেনাকাটায় বাড়ে নির্ভরশীলতা। এ সময় সবজি, ওষুধ থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যও বিক্রি হয় অনলাইনে। এতে ক্রেতাদের চাহিদার পাশাপাশি বাড়তে থাকে প্রতারণাও।
সম্প্রতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ই- কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ। গেল দুই মাসে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আগের চেয়ে ৮ হাজার বেশি অভিযোগ পড়েছে। সংস্থার মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা জানান, অভিযোগগুলো ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ ও দারাজসহ ১৯টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কাছে অনেক ক্রেতাই অভিযোগ জানাতে আসেন। সম্প্রতি বেশিভাগ অভিযোগই আসছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে ই-ভ্যালি ও ই-অরেঞ্জ ছাড়াও দারাজ, কিউকম, ধামাকাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক বাবলু কমার সাহা জানান, ৩০ জুন পর্যন্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ১৩ হাজার ৩১৭টি। আর জুলাই ও আগস্ট মাসে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ২১ হাজার ২৭টিতে। এদিকে এ খাত সংশিষ্টরা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে অনলাইন কেনাকেটা নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অনাস্থা তৈরি হচ্ছে। ভোক্তা অধিকারের তথ্য মতে, ৩০ জুন পর্যন্ত ১৯টি প্রতিষ্ঠানের ১৩ হাজার ৩১৭টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় ১১ হাজার ৪৩৪টি অভিযোগ। নিষ্পত্তির হার ৮৬ শতাংশ।
তবে জুলাই ও আগস্ট এ দুই মাসে ই-কমার্স নিয়ে অভিযোগ বেড়েছে ৫ হাজার ৯৮৭টি। অভিযোগের সংখ্যা বেড়ে ১৯ হাজার ৩০৪টিতে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ১২ হাজার ২৯৭টি। নিষ্পত্তির হার ৬৪ শতাংশ।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জ নিয়ে অভিযোগের হার বেশি। এর মধ্যে এক ভোক্তার ১ কোটি টাকার অভিযোগ আছে। এর বাইরে ৩০ লাখ, ৫০ লাখ টাকার অভিযোগ কম নেই। এ সময়ে আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে ভোক্তার অভিযোগের সংখ্যা ৭ হাজার ১৩৮টি। ভোক্তা অধিকার নিষ্পত্তি করেছে ৪ হাজার ৪৯৫টি। শতকরা হিসেবে নিষ্পত্তি ৬৩ শতাংশ।
ই-অরেঞ্জ ডটকমের বিরুদ্ধে অভিযোগ সংখ্যা ২ হাজার ৬৪৩টি। এর মধ্যে মাত্র ৩৩টি নিষ্পত্তি করা গেছে। নিষ্পত্তির হার ১ শতাংশ। দারাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ ১ হাজার ৫১টি। নিষ্পত্তি হয়েছে ৯৫৮টি। শতকরা হারে যা ৯১ শতাংশ।
ধামাকার বিরুদ্ধে ৩২৩টি অভিযোগের বিপরীতে ৫৮টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। শতকরা হার ১৮ শতাংশ। সহজডটকমের বিরুদ্ধে ৯৩টি অভিযোগের বিপরীতে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৮৫টি। আজকের ডিল ডটকমের বিরুদ্ধে অভিযোগ সংখ্যা ১৮২টি। নিষ্পত্তি হয়েছে ১৬৭টি। শতকরা ৯২ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে ৩২২টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৫১টি। শতকরা হিসেবে নিষ্পত্তির হার ৭৮ শতাংশ। চালডাল ডটকমের বিরুদ্ধে ভোক্তারা অভিযোগ করেছেন ১৯০টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৭৯টি। শতকরা নিষ্পত্তি ৮৯ শতাংশ।
প্রিয়শপ ডটকমের বিরুদ্ধে ৬২৬টি অভিযোগের বিপরীতে নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৪২টি। নিষ্পত্তির হার ৭১ শতাংশ। ফালগুনি ডটকমের মালিক আইনের আওতায় আছে। এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ৬৪৪টি অভিযোগ পড়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৫১টি।
অথবা ডটকমের বিরুদ্ধে ১৮৬টি অভিযোগের বিপরীতে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৬০টি। নিষ্পত্তির হার ৮৬ শতাংশ। উবার ডটকমের বিরুদ্ধে ১২৮টি অভিযোগের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১২৫ অভিযোগ। নিষ্পত্তির হার ৯৮ শতাংশ।
পাঠাওয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে ২৬৭টি। নিষ্পত্তি হয়েছে ২৬৫টি। বিক্রয় ডটকমের বিরুদ্ধে ১৭৪টি অভিযোগের বিপরীতে ১৫৭টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। নিষ্পত্তির হার ৯০ শতাংশ।
নিরাপদ ডটকম বিরুদ্ধে ১১৫টি অভিযোগের বিপরীতে ৬৪টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। যার হার ৫৬ শতাংশ। আদিয়ানমার্ট ডটকম বিরুদ্ধে ১১৬টি অভিযোগের বিপরীতে ৩৮টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। শতকরা হার ৩৩ শতাংশ।
বর্তমানে ই -কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগের মধ্যে ১২ হাজার ৪৯০টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে বলেও জানায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।