খোদ সরকারি হিসাবেই পেঁয়াজের রয়েছে পর্যাপ্ত মজুদ। তার পরও বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁজ। হুট করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ। আন্তর্জাতিক বাজারে গেল এক বছরে চালের দাম কমেছে ২৪ শতাংশ। আর দেশে চালের বাজারের ছবিটা উল্টো। ধান উৎপাদনে রেকর্ড হলেও চালের দামের লাগাম টানতে হচ্ছে আমদানি করে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার ছুতায় তেল, চিনি, ডালসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম এখনো পাগলা ঘোড়া। হিমাগারে আলুর কেজি ১০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে কিনতে হচ্ছে ২০ টাকায়। বিভিন্ন সময় দাম বেঁধে দেওয়া হলেও সেই দরে বিক্রি হচ্ছে কি না সেটার তদারকিও নেই বাজারে। অথচ করোনার এই দুঃসময়ে বেসরকারি খাতের সব পেশাজীবীর কমেছে আয়। সংসার চালাতে রীতিমতো খেই হারাচ্ছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে বাজারে পা রেখেই নিত্যপণ্যের আগুন দামে ত্যক্তবিরক্ত ক্রেতারা।
রাজধানীর মুগদা বাজারে গতকাল সকালে সেই বিরক্তিরই বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল পোশাক কারখানার কর্মকর্তা আহমেদুলের কথায়। তিনি বলেন, ‘এই যে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ল। এর কি কোনো কারণ আছে? নাই। এটা দেখার মতো কেউ আছে এ দেশে? তাও নাই। যে যেভাবে পারছে দাম বাড়াচ্ছে।’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এই যে দেখেন, গেল এক মাসে সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। তাও এক-দুই টাকা না, কেজিতে পাঁচ-দশ টাকা। আমরা কেমনে চলি?’
গৃহকর্মী সালেহার দুশ্চিন্তা অন্য কিছুতে। তিনি বলেন, ‘আমি যে বাসায় কাজ করতাম তারা এখনো দেশের বাড়ি থেকে ফেরেনি। এখন যেখানে কাজ করি তারা বেতন দেয় কম। আমার রোজগার কমলেও বাজারে পণ্যের দাম বাড়ছে। আমি কিভাবে চলি? তার ওপর আমরা যেগুলা খাই সেগুলার দামই বেশি বাড়ছে।’
সালেহার কথায় সত্যতা পাওয়া যায় মালিবাগ বাজারে ঢুকে। বাজারে বড় দানার মসুর ডালের দাম গত সপ্তাহে কেজিপ্রতি এক দফা বেড়ে ৮৮ টাকায় উঠেছিল। এই সপ্তাহে আরো দুই টাকা বেড়ে এখন ৯০ টাকা কেজি। তেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন তেলটাই বেশি কেনে নিম্ন আয়ের মানুষ। গেল সপ্তাহে সয়াবিন তেল মিলেছে ১৪২ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি। গতকাল বাজারগুলোতে আরো তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে ১৪৫ থেকে ১৪৮ টাকায় উঠেছে। বোতলজাত তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন মিল মালিকরা। খোলা চিনির সপ্তাহ দুয়েক আগের বাড়তি দাম এখনো নামেনি। চিনির দাম ৭৪ টাকা বেঁধে দেওয়া হলেও বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি। আটা-ময়দার দামও বেড়েছে কেজিপ্রতি এক-দুই টাকা। খোলা আটা ৩২ থেকে ৩৫ টাকা ও ময়দা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
দামের তাপে সালেহা আর আহমেদুলরা পুড়ছিলেন তিন সপ্তাহ ধরেই। এর মধ্যেই চলতি সপ্তাহে হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহে কয়েক দফা বেড়ে পেঁয়াজের দাম এখন প্রায় দ্বিগুণ। গত শুক্রবারও দেশি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে তা ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যাঁদের আগের কেনা ছিল, তাঁরা অনেকে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করছেন।
অথচ দেশে এবার পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে রেকর্ড তৈরি হয়েছে। সাড়ে ছয় লাখ টন বাড়তি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। পেঁয়াজের
ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত পাবনা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই বলে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বন্ধ নেই আমদানিও। তার পরও এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে পণ্যটির দাম।
দেশি পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হলেও দেশি রসুনের দাম এখন তলানিতে। দেশি রসুন কেনা যাচ্ছে ৪০ টাকা কেজি। তবে চায়না রসুন ও আদার দাম এখনো অনেক বেশি। রসুন ১১০ টাকা ও আদা মিলছে ১৩০ টাকা কেজি।
এ সপ্তাহে বাজারে ক্রেতাদের জন্য কিছুটা স্বস্তির খবর হলো ডিমের দাম ডজনে কমেছে ১০ টাকা। ডিমের ডজন এখন ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। তবে আরেক দফা বেড়েছে ফার্মের মুরগির দাম। কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এখন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। সোনালি মুরগির দাম উঠে ৩০০ টাকায় ঠেকেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, অনেক দিন লোকসানে থাকায় অনেক খামারি উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে সামাজিক অনুষ্ঠান। ফলে হঠাৎ উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেড়েছে।
বাজারের এমন অবস্থায় তদারকি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, নতুন একটা মূল্য কমিশন গঠন করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তদারকি বাড়াতে হবে।