নাম তার আব্দুল কাদের। পড়েছেন মাত্র দশম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু তিনি নিজেকে একজন অতিরিক্ত সচিব বলে পরিচয় দিতেন। ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ এনে দেওয়া, বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ পাইয়ে দেওয়া, চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
আজ শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমরা কাদেরকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে অনেক তথ্যই পেয়েছি। মূলত অতিরিক্ত সচিব পরিচয় দেওয়া আবদুল কাদের চৌধুরী দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সুবর্নচরে। তার বাবা ছিলেন মাঝি। কাদেরের প্রত্যেক উপার্জনই ছিল প্রতারণার মাধ্যমে।’
‘১৪ বছর যাবৎ তিনি প্রতারণার মাধ্যমে অঢেল সম্পত্তি বানিয়েছেন। গাড়িতে সচিবালয়ের স্টিকার ও কোটি টাকা দামি প্রাডো গাড়ি নিয়ে চলায় সচিবালয়ে তাকে কেউ সন্দেহের নজরে দেখেননি। গুলশান ১ নম্বর সেকশনের জব্বার টাওয়ারে মাসিক ৫ লাখ টাকা ভাড়ায় আলিশান অফিস রয়েছে তার। কারওয়ান বাজারেও তার আরেকটি বিলাসবহুল অফিস আছে। গুলশানেও তার দামি ফ্ল্যাট আছে।’
গত বৃহস্পতিবার রাতে গুলশান ১-এ জব্বার টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে আব্দুল কাদেরসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এতে এনএসআইয়ের সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করে ডিবি গুলশান বিভাগ।
আজ পুলিশের সংবাদ সম্মেলন শেষে এক ভুক্তভোগী জয়নাল আবেদিন গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘আব্দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করার জন্য ১৫ হাজার টাকা দিয়ে আমি একটি ফর্ম পূরণ করি। এরপর লোন নেওয়ার জন্য প্রোফাইল মেকিং চার্জের নামে আরও ৫ লাখ টাকা চাইলে আমি ২ লাখ টাকা দিই। এরপর ২০ কোটি টাকা লোন পাইয়ে দেওয়ার জন্য লোনের ১ শতাংশ টাকা অগ্রিম চায়, কিন্তু আমি নানাভাবে বলে ১০ লাখ টাকা (০.৫ শতাংশ) দিই।’
‘মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় আমার সাপ্লাইয়ের ব্যবসা ছিল। সাপ্লাইয়ের সাব কন্ট্রাক্টে আমি একটা ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছিলাম। এর জন্য আমার টাকার প্রয়োজন ছিল। কাদের মার্কেটিংয়ের লোক দিয়ে আমাকে তার ভিজিটিং কার্ড দিয়ে যায়। সেখান থেকে নম্বর নিয়ে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমার টাকা পাওয়ার পর থেকে নানা অজুহাতে আমাকে তিনি ঘুরিয়েছেন। তার কাছে টাকা চাইলে বলতেন, করোনার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে, সব কাগজপত্র তৈরি আছে, আবার কিছুদিন পরে দেবে’,- বলেন জয়নাল আবেদিন।