গতিসীমা মেনে চলি, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করি লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল

গতিসীমা মেনে চলি, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করি লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল

এবছর পঞ্চমবারের মতো সরকারি উদ্যোগে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালন করা হচ্ছে। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য “গতিসীমা মেনে চলি, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করি” । উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালের ৫ জুন মন্ত্রী সভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহন ও অনুমোদন করা হয়। ফলে ২০১৭ সাল থেকে ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে সরকারি উদ্যোগে জাতীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে।
মহাসড়কে যত দুর্ঘটনা ঘটে তার শতকরা ৮০ ভাগ ঘটে অতিরিক্ত গতির কারণে। মহাসড়কে একই মানের গাড়ি, কাজেই একটি গাড়ির আরেকটি ওভারটেক করার প্রয়োজন নেই বললেই চলে। অথচ আমরা দেখতে পাই পেছনের গাড়ি সামনের গাড়িটিকে ওভারটেক না করা পর্যন্ত যেন স্বস্তি পায় না। আমাদের দেশের চালকদের এটা একটা ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এই ধরণের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করা প্রয়োজন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে যে, বিশ্বে সড়কে প্রতি বছর প্রায় ১.৩ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় এবং ২০ থেকে ৫০ মিলিয়ন এর মধ্যে অ-প্রাণঘাতী জখম থাকে। বড় বড় এবং পথচারী বহুল এলাকাগুলোতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। ৮০ টির বেশি বড় বড় শহরে পরিচালিত সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে জাতিসংঘ এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৩০ কিলোমিটার করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। গাড়ির গতি ঘণ্টায় ১ কিলোমিটার বৃদ্ধি পেলে ৪-৫% দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যানবাহনের গতি যত বেশি কম হবে, পথচারীদের জন্য আহত ও মৃত্যুর ঝুঁকি তত কম হবে। অর্থাৎ যত গতি, তত ক্ষতি। গতি বাড়লে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়বে। ৩০ কিলোমিটার ঘণ্টা বেগে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৯৯%। ৫০ কিলোমিটার ঘণ্টা বেগে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৮০%।
মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য সারা দেশে স্পিড গানের ব্যবহার নিশ্চিত করা যেতে পারে। প্রতি জেলায় যদি গাড়িসহ দুটি টিম নিয়োগ করা যায় এবং প্রতিটির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩০ কিলোমিটার এলাকা নির্ধারণ করে দিয়ে স্থান পরিবর্তন করে স্পিড গানের মাধ্যমে দ্রুতগতির গাড়িগুলো শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা আদায় করা হয় তাহলে মহাসড়কে চালকরা দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে সাহস পাবে না।
২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর সকালে রাজধানী খামারবাড়িস্থ বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনষ্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল এবং ওভারটেকিংয়ের মত অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছিলেন ‘ওভারটেকিং নামক অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে চালানো দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে।’
তিনি আরো বলেছিলেন, ‘কেউ যদি অহেতুক নিয়মের বাইরে গিয়ে গাড়ি বা ট্রাকের আকার পরিবর্তন করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ট্রাফিক পুলিশকেও এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ড্রাইভারদেরও দোষ রয়েছে, কোন গাড়ি তাদের ওভারটেক করলে যেন মাথা খারাপ হয়ে যায়, ঐ গাড়িকে তাদেরও ওভারটেক করতেই হবে। ফলে, দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।’
তিনি বলেন, একটি রাস্তা কেমন লোড নিতে পারে, একটি সড়কে কি ধরনের দু’টি গাড়ি পাশাপাশি চলতে পারে তার একটি আকার নির্দিষ্ট করা থাকে। অথচ, আমাদের দেশে দেখা যায় অধিক মুনাফার আশায় আসন বৃদ্ধির জন্য বা অতিরিক্ত মালামাল পরিবহনের জন্য ক্ষেত্রে বিশেষে এক্সট্রা ক্লাম দিয়ে দু’পাশে বেআইনীভাবে গাড়ির আকার বাড়িয়ে নিচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে।’
অতীতে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তৈরি করা এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গৃহীত হলেও পরবর্তীতে তা থেমে যাওয়ার আবার তা শুরু হয়েছে। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তন এবং নতুন ঋতু আগমনের সঙ্গে সঙ্গে অতীতের বিষয়গুলো ভুলে যাওয়ার মত বৈশিষ্ট্য আমাদের মানসিকতায় রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর উপরোক্ত বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও যুক্তিসম্মত। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, অদ্যাবধি প্রধানমন্ত্রীর এসব কথার কার্যকর বাস্তবায়ন হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে সরকার সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ প্রণয়ন ও গেজেট আকারে প্রকাশ করছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের থেকে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই আইন ১নভেম্বর ২০১৯ তারিখ থেকে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু আইনটি পুরোপুরি এখনও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। আইনটি সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়ানোর জন্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আশা করছি।
নতুন আইনের বিধি-বিধান সমূহঃ
১.নতুন আইনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে শাস্তির বিধান। এই অপরাধে দায়ী চালকের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজা বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে তদন্তে প্রমাণিত হলে ফৌজদারি আইনের ৩০২ ধারায় মামলা স্থানান্তর হবে। অর্থাৎ মৃত্যুদন্ডের সুযোগ থাকছে। এই ধারার অপরাধ অজামিনযোগ্য। পুরোনো আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদন্ড এবং এটি জামিনযোগ্য অপরাধ ছিল।
২.যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে নিবন্ধন সনদ না নিয়ে রাস্তায় যানবাহন নামালে এর মালিককে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদন্ড অথবা উভয় দন্ড ভোগ করতে হবে। ভুয়া নম্বরপ্লেট দিয়ে যানবাহন চালালে সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা সর্বনিম্ন ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
৩.সরকারের কার্যকর করা এ নতুন আইনে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে এক মাসের কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
৪.নতুন এ আইনে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ৬ মাসের জেল অথবা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা। অথবা উভয় দন্ড হতে পারে। তা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে অষ্টম শ্রেণি পাস করতে হবে।
৫.ভাড়ার তালিকা নিয়ে অবহেলা নয়, গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায় নৈমিত্তিক ব্যাপার। ভাড়ার তালিকা না থাকলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা এক মাসের কারাদন্ড- অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। একই সঙ্গে এটি চালকের ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে তাঁর এক পয়েন্ট কাটা যাবে।
৬.ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ট্যাক্সিক্যাবে ভাড়ার মিটার বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। তবে এসব যানের প্রায় কোনোটারই মিটার সচল নেই। থাকলেও মিটার মেনে যাত্রী বহন করে না। আগের আইনে এর জন্য কোনো শাস্তির বিধান ছিল না। এখন মিটার বিকল থাকলে এবং যেকোনো গন্তব্যে যাত্রী পরিবহনে অস্বীকৃতি জানালে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদ- অথবা উভয় দন্ডের ব্যবস্থা আছে।
৭.যানবাহনচালককে যেমন সংকেত মেনে চলতে হবে, তেমনি পথচারীকে সড়ক-মহাসড়কে জেব্রা ক্রসিং, পথচারী-সেতু, পাতালপথসহ নির্ধারিত স্থান দিয়ে পার হতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে চালক ও পথচারীকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদ- অথবা উভয় দন্ডে পড়তে হবে।
৮.যত্রতত্র হাইড্রোলিক হর্ন বাজানোর অপরাধে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান ছিল। নতুন আইনে এ অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা তিন মাসের কারাদন্ড- অথবা উভয় দন্ডের মুখোমুখি হতে হবে।
৯.কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহন চালালে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা তিন মাসের কারাদ- অথবা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। সরকার নির্ধারিত স্থানের বাইরে গাড়ি পার্কিং করলে বা যাত্রী-মালামাল ওঠানামার দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করার সুযোগ আছে।
১০. দেশের পরিবহন খাত থেকে বছরে হাজার কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ আছে। চাঁদাবাজির বিষয়টি আগের আইনে উপেক্ষিত ছিল। এবার ফৌজদারি আইনের ১৭ ধারায় শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এই ধারায় চাঁদাবাজির দায়ে সর্বোচ্চ তিন বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে।
এই আইনের কার্যকর বাস্তবায়নের জন্যে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা প্রয়োজন। সড়ক দুর্ঘটনারোধে বর্তমান সরকারের কার্যক্রম প্রশংসনীয়, তবে সরকারের গৃহিত এ সকল উদ্যোগের কার্যকর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।
সড়ক দুর্ঘটনা সকলের কাছে এক আতঙ্কের নাম। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ হতাহত হচ্ছে। সড়কের মড়কে খালি হচ্ছে হাজারো মায়ের কোল। সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমান সময়ে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, যা বেদনাদায়ক ও অনাকাঙ্খিত। সরকারের একার পক্ষে সড়ক দুর্ঘনা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তবে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সড়ক দুর্ঘনা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন সংগঠন, এনজিও, ছাত্রসমাজ, যাত্রী, চালক, পথচারীসহ সকলকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। তবে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উদ্যোগ সরকারই নিতে পারে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকার নতুন আইন করেছে। এই আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকারের আরো কঠোর হওয়া উচিত। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সর্বপ্রথম সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো খতিয়ে বের করা আবশ্যক। সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ তিনটি, এগুলো হলো অতিরিক্ত গতি বা ওভারস্পিড, ওভারট্রেকিং, ওভাররোড। এছাড়াও সচেতনতার অভাব, অদক্ষ ও অশিক্ষিত চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব, যাত্রী ও পথচারীদের অসচেতনতা, দুর্নীতি, চলন্ত অবস্থায় চালকের মোবাইল ফোন ব্যবহার, অপরিকল্পিত ও ভঙ্গুর সড়ক, ওভারব্রিজের স্বল্পতা, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ট্রাফিক পুলিশের গাফিলতি, অনিয়ম, লাইসেন্সবিহীন গাড়ি ও চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানো মনোভাব। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। গণমাধ্যম এই বিষয়ে সহায়ক ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে গণমাধ্যমকে দক্ষতার সাথে আরো অধিক বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
উল্লেখ্য যে, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২৫জুন ২০১৮ তারিখে ছয়টি নির্দেশনা এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আরো ১৭টি নির্দেশনা প্রদান করা হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় অদ্যাবধি এই সকল নির্দেশনার কার্যকর বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হয়নি। এই নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর ছয়টি নির্দেশনা হলো-
গাড়ির চালক ও তার সহকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, লং ড্রাইভের সময় বিকল্প চালক রাখা, যাতে পাঁচঘণ্টার বেশি কোনো চালককে একটানা দূরপাল্লায় গাড়ি চালাতে না হয়। নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর সড়কের পাশে সার্ভিস সেন্টার বা বিশ্রামাগার তৈরি করা। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা। সড়কে যাতে সবাই সিগন্যাল মেনে চলে-তা নিশ্চিত করা। পথচারী পারাপারে জেব্রাক্রসিং ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধার বিষয়টি নিশ্চিত করা। এছাড়া ১৬ আগস্ট ২০১৮ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান এর সভাপতিত্বে ট্রাফিক ব্যব্যস্থার উন্নয়ন বিষয়ক এক সভায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ১৭টি নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
নির্দেশনাগুলোহলো-
১. ঢাকা শহরে চলমান সব গণপরিবহন, শহরে চলাকালে সব সময় দরজা বন্ধ রাখা এবং বাস স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠা-নামা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা নিশ্চিত করতে বিআরটিএ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়।
২. একই সময়ের মধ্যে গণপরিবহনে (বিশেষত বাসে) দৃশ্যমান দু’টি স্থানে চালক এবং হেলপারের ছবিসহ নাম, চালকের লাইসেন্স নম্বর, মোবাইল নম্বর প্রদর্শন নিশ্চিত করা।
৩. সব মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীকে (সর্বোচ্চ দু’জন আরোহী) বাধ্যতামূলক হেলমেট পরিধান এবং সিগনালসহ সব ট্রাফিক আইন মানতে বাধ্য করা।
৪. সব সড়কে বিশেষত মহাসড়কে চলমান সব পরিবহনে (বিশেষত দূর পাল্লার বাসে) চালক এবং যাত্রীর সিট বেল্ট ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া এবং পরিবহনসমূহকে সিট বেল্ট সংযোজনের নির্দেশনা দেওয়া এবং আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।
৫. ঢাকা শহরের যেসব স্থানে ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস রয়েছে সেসব স্থানের উভয় পাশে ১শ’ মিটারের মধ্যে রাস্তা পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ করা। প্রয়োজনে আইনের প্রতিশ্রদ্ধাশীল নাগরিকদের ধন্যবাদ কিংবা প্রশংসাসূচক সম্বোধনের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
৬. ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাসসমূহে প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আন্ডারপাসসমূহে প্রয়োজনীয় লাইট, সিসিটিভি স্থাপনাসমূহ ব্যবহার করা।
৭. ঢাকা শহরের সব সড়কে জেব্রা ক্রসিং ও রোড সাইন দৃশ্যমান করা, ফুটপাত হকার মুক্ত রাখা, অবৈধ পার্কিং এবং স্থাপনা উচ্ছেদ করা, সব সড়কের নাম ফলক দৃশ্যমান স্থানে সংযোজনের নির্দেশ দেয়া হয়।
৮. ট্রাফিক সপ্তাহে চলমান সব কার্যক্রমসমূহ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত যথাসম্ভব অব্যহত রাখা।
৯. স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুৎতিক সিগনাল ব্যবস্থা চালু করার বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
১০. একই সময়ে ঢাকা শহরে রিমোট কন্ট্রোলড অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগনালিং পদ্ধতি চালু করার নির্দেশ দেয়া হয়।
১১. ঢাকা শহরের সব সড়কের রোড ডিভাইডারের উচ্চতা বৃদ্ধি করে বা স্থানের ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ।
১২. মহাখালী ফ্লাইওভার থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত (আপ এবং ডাউনে) ন্যূনতম দু’টি স্থানে স্থায়ী মোবাইল কোর্ট বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং প্রতিনিয়ত দৈব চয়নের ভিত্তিতে যানবাহনের ফিটনেস এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করা। শহরের অন্য সব স্থানেও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী অস্থায়ীভাবে অনুরূপ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
১৩. ঢাকা শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি বা আরম্ভ হবার সময় অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী, স্কাউট এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) সহযোগিতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারের উদ্যোগ নিতে হবে।
১৪. অবৈধ পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ফিটনেস দেওয়ার প্রক্রিয়াতে অবশ্যই পরিবহন দেখে ফলপ্রসূ ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৫. রুট পারমিট/ফিটনেস বিহীন যানবাহনসমূহকে দ্রুত ধ্বংস করার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে।
১৬. লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ‘লারনার’ দেওয়ার প্রাক্কালে ড্রাইভিং টেস্ট নেয়া যেতে পারে এবং উত্তীর্ণদের দ্রুততম সময়ে লাইসেন্স দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
১৭. কর্মকর্তা/কর্মচারীর ঘাটতি থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়।
উপরোক্ত নির্দেশনাগুলোসহ পরিবহন আইন ২০১৮ এর কার্যকর বাস্তবায়ন হলে সড়ক দুর্ঘটনা নিশ্চিত কমে আসবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চালক যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।

লেখক পরিচিতি:
লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল
(শিক্ষক, কলাম লেখক, সমাজসেবক ও সংগঠক)
নির্বাহী সদস্য ও সাবেক যুগ্ম মহাসচিব, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা), কেন্দ্রীয় কমিটি
সভাপতি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি ঢাকা।

সংগঠন সংবাদ