এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় এক টাকা। এখন খোলাবাজারে প্রতি ডলারের জন্য ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে প্রায় ৯১ টাকা। বর্তমানে ব্যাংকে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮৭ থেকে ৮৮ টাকার মধ্যে। তবে আন্ত ব্যাংকে মুদ্রাবাজারে (ব্যাংক টু ব্যাংক) গত এক সপ্তাহে ডলারের দাম নতুন করে বাড়েনি, আগের মতোই ৮৫ টাকা ৬৫ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে আন্ত ব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দামের ব্যবধান চার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে এই পার্থক্য দুই থেকে আড়াই টাকার মধ্যে থাকে।
মানি চেঞ্জাররা বলছেন, অনেক বেশি লোক হঠাৎ দেশের বাইরে যাওয়ায় ডলারের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। সে তুলনায় পর্যটক ও যাত্রীদের মাধ্যমে হাতে হাতে দেশে ডলার আসছে না। ফলে দাম বেড়ে গেছে। হাতে হাতে ডলার দেশে না এলে এই ঊর্ধ্বগতি শিগগিরই থামবে না। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদা বাড়লেও ব্যাংকগুলোতে ডলারের কোনো সংকট নেই। বাজার স্বাভাবিক রাখতে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হওয়ায় এখন আমদানি বেশ বাড়ছে। আবার বিলম্বে পরিশোধ শর্তে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়েছিল, সেগুলোর এখন পেমেন্ট করতে হচ্ছে। করোনা ভ্যাকসিন আমদানির অর্থও পরিশোধ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও বাড়ছে। তবে সংকট সামাল দিতে বাজারে প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার খোলাবাজারে প্রতি ডলার ৯০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৯০ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। আগের কার্যদিবস রবিবার বিক্রি হয় ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৯০ টাকা ২০ পয়সায়। এক সপ্তাহ আগে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা। ফলে এক সপ্তাহের ব্যবধানেই খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় এক টাকা।
রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত পাইওনিয়ার মানি চেঞ্জারের চেয়ারম্যান মো. রোকন সিদ্দিকী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় যাত্রীদের আসা-যাওয়া বেড়েছে। তবে মানুষের আসার চেয়ে যাওয়ার সংখ্যাই বেশি। চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ দেশের বাইরে বেশি যাচ্ছে। ফলে আমাদের কাছে ডলার আসছে কম, কিন্তু চাহিদা বেশি হচ্ছে। এতে দামও বাড়ছে।’
খোলাবাজারে ২৩ বছর ধরে ডলার কেনাবেচার ব্যবসা করছেন উল্লেখ করে রোকন সিদ্দিকী জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে ডলারের এটি সর্বোচ্চ দাম। এর আগে কখনো ৯০ টাকায় ডলারের দাম ওঠেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বিভিন্ন প্রয়োজনে দেশের বাইরে মানুষের যাতায়াত বাড়ায় হঠাৎ নগদ ডলারের চাহিদা বেড়েছে। ব্যাংকেও নগদ ডলার বিক্রি করা হয়, কিন্তু মানুষজন ব্যাংকে না এসে খোলাবাজারেই বেশি যাচ্ছে। এতে ওই বাজারে বেশি চাহিদা তৈরি হওয়ায় দাম একটু বেশি বেড়েছে। তবে ব্যাংকে এখনো নগদ ডলার ৮৬ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, আমদানিতে ডলারের চাহিদা বাড়লেও ব্যাংকে ডলারের কোনো সংকট নেই। ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে।