সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৮টি ও রায়গঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদরের সয়দাবাদ, রতনকান্দি ও ছোনগাছা তিনটি এবং রায়গঞ্জের ধানগড়া, ধামাইনগর তিনটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। সদরের ৮টির মধ্যে চারটিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে ২৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়াও সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য পদে ২৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর ৩৪৯ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদে ১৭ জন নির্বাচিত হওয়ার পরও ১০৬ জন প্রার্থী মাঠে রয়েছে। রায়গঞ্জের ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ২২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়াও সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য পদে ৩৬২ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদে ১০৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে, নির্বাচন দিনক্ষণ যতই বাড়ছে, ততই ভোটের মাঠ উত্তপ্ত হয়ে পড়ছে। গত কয়েকদিনে সদরের কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ মারপিটে পাঁচজন আহত এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে ১১ জন আহত হয়েছে।
ধুবিল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে এবং ৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। নলকা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও প্রতিদিন আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা নিয়ে একে অপরকে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটছে।
সিরাজগঞ্জ সদরের তিনটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা হলেন-সয়দবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নবিদুল ইসলাম, ছোনগাছা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও রতনকান্দি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন। বাকি ৫টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপি সমর্থিত ২৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদের মধ্যে বহুলী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে থানা আওয়ামী লীগ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য গাজী আব্দুল বারী তালুকদার, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, বহুলী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন সেখ ও বহুলী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সালেহ মাহমুদ মিঞ্জা বাবু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাগবাটী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপি কর্মী মাহফুজুর রহমান খান ডেভিট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
খোকশাবাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাশিদুল ইসলাম রশিদ মোল্লা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী গোলাম হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি সমর্থিত রেজাউল করিম রোকনী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক চেয়ারম্যান মনজুর রহমান বকুল মাঠে রয়েছেন।
শিয়ালকোল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিম রেজা, বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী হাফেজ মো. হাবিবুল্লাহ, বিএনপি ইউনিয়ন কর্মী মো. এরশাদ রানা, বিএনপি কর্মী মঞ্জুরুল আলম সরকার, বিএনপি কর্মী জাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রার্থী আব্দুস সালাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কায়সার আহমেদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুস সবুর, বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আনিসুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মুফতি আল আমিন সিরাজী, স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল কাদের সরকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রায়গঞ্জ উপজেলার তিনটিতে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলো ধানগড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মীরওবায়দুল্লাহ, ধামাইনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাইসুল হাসান ও ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম সরোয়ার লিটন। বাকি ৬টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী ও বিএনপি সমর্থিত ২২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদের মধ্যে ঘুড়কা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. জিল্লুর রহমান তালুকদার, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সলঙ্গা থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবু তালেব খান ও ঘুড়কা ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হুদা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ধুবিল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত মিজানুর রহমান রাসেল, বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ধুবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম ও সলঙ্গা থানা কৃষকলীগের দপ্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা আব্দুল করিম রেজা, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সলঙ্গা থানা বিএনপির সদস্য সচিব হাসান ইমাম তালুকদারভ তালুকদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নলকা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবু বকর সিদ্দিক, বিদ্রোহী প্রার্থী নলকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নলকা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল গফুর, নলকা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন, সাবেক বিএনপি নেতা আব্দুল জব্বার সরকার ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত শফিকুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পাঙ্গাসী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম নান্নু, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে আওয়ামী লীগের কর্মী আলী আকবর সরকার, স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রবাসী সালাহ উদ্দিন সেখ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাইদুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সোনাখাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত আবু হেনা মোস্তফা রিপন ও বিদ্রোহী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমজাদ হোসেন সানা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চান্দাইকোনা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত আব্দুল হান্নান খান ও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চান্দাইকোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজমল আকন্দ। এছাড়াও তৃতীয় ধাপে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে মোট ৬৯ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৩ জন।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ১৩টি ইউনিয়নে ৩৩ জন। বাকি ২৩ জন বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় থাকায় এখনো চূড়ান্ত প্রার্থী হয়নি। বেলকুচি উপজেলায় তৃতীয় ধাপে ৬টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী ১৩ জন, জামায়াত ইসলাম সমর্থিত স্বতন্ত্র ৩ জন, বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র ৫ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই ও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় থাকায় এখনো চূড়ান্ত প্রার্থী হয়নি।