বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ডিজেল পাচার ঠেকাতে কঠোর নজরদারি বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা। সরেজমিনে বুধবার (১০ নভেম্বর) সকালে বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানি গেটে তেল পাচার রোধে তদারকি করতে দেখা যায় বিজিবি সদস্যদের।
জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি লিটার ডিজেলের যখন মূল্য ছিল ৬৫ টাকা ২০ পয়সা তখন ভারতে মূল্য ছিল প্রতি লিটার ১০১.৫৬ রুপি (বাংলাদেশি টাকায় ১১৮ টাকা ৭৮ পয়সা)। ৪ নভেম্বর রাতে বাংলাদেশে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি লিটার করা হয় ৮০ টাকা। তখন ভারতে ডিজেলের দাম কমিয়ে করা হয় ৮৯.৭৯ রুপি (বাংলাদেশি টাকায় ১০৫ টাকা)। প্রতি লিটারে বাংলাদেশ থেকে ভারতে দাম বেশি ২৫ টাকা। আর এ কারণে ডিজেল পাচারের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। আর এ সুযোগটা নিয়ে যাচ্ছিল ভারতীয় এক শ্রেণীর পণ্যবাহী ট্রাক চালকরা।
সম্প্রতি ভারত থেকে আমদানি পণ্যবাহী ট্রাকে তেল পাচার ও সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে তেল পাচারের সংবাদ প্রচার হওয়ায় নড়ে চড়ে বসেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। ভারত থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে আসার সময় ট্রাকের তেলের ট্যাংকি স্কেল দিয়ে পরিমাপ করে লিপিবদ্ধ করছে এবং ওই ট্রাক পণ্য খালাস করে ভারতে ফিরে যাওয়ার সময় আবারও পরিমাপ করা হচ্ছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট লিংক রোডে গিয়ে দেখা গেছে, ভারত থেকে আসা আমদানি পণ্যবাহী প্রতিটি ভারতীয় ট্রাক বিজিবি সদস্যরা স্কেল দিয়ে পরিমাপ করে লিপিবদ্ধ করছে। অপরদিকে, বেনাপোল আইসিপি ক্যাম্পের সামনে মালামাল আনলোড করে ভারত ফেরার পথে ওই ট্রাক আবারও পরিমাপ করছে বিজিবি সদস্যা।
বিজিবির হাবিলদার আব্দুল কুদ্দুস জানান, এরা ভারত থেকে আসার সময় যে তেল ছিল তা আমরা লিখে রেখেছি। আবার যাওয়ার পথে ওই ট্রাক আবারও পরিমাপ করা হচ্ছে। যদি আসার সময় যে তেল বহন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল তার চেয়ে বেশি পাওয়া যায় তাহলে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরকম পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন এখনও এরকম কোন কিছু পাওয়া যায়নি।
ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভার ( ট্রাক নং ডাব্লিউ ১৫-বি-৬০০৭) শহিদুল্লাহ মন্ডল বলেন, আমরা ভারত থেকে যে তেল নিয়ে আসি তাতে হয়ে যায়। তবে কোন কারনে যদি কম পড়ে যায় তাহলে হয়ত ১০ লিটারের মত তেল সংগ্রহ করি কারোর মাধ্যমে। আর সংগ্রহ করতে না পারলে আমরা গেটে বিএসএফকে বলে ওপার থেকে তেল নিয়ে আসি।
বেনাপোল সীমান্তের একটি সূত্র জানান, ওপারে ডিজেলের দাম বেশী হওয়ায় ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভাররা ট্রাকে ডিজেল নিয়ে যেত। বেনাপোলের বিভিন্ন তেল পাম্প থেকে ব্যারেলে করে ডিজেল এনে বন্দরের আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে রেখে এসব ডিজেল পাইপের মাধ্যমে ভারতীয় ট্রাকের ট্যাংকিতে ভরে দিত। আর এ কারণে বন্দরের আশেপাশে গড়ে ওঠে ডিজেল পাচারের একটি সিন্ডিকেট। বিজিবি কড়াকড়ি আরোপ করায় সিন্ডিকেটও চুপসে গেছে। বিজিবি‘র কড়াকড়িতে ভারতীয় ট্রাক চালকরা এখন আর িেডজেল নিতে ভয় পাচ্ছে।
চেকপোস্টের একজন সিএন্ডএফ এজেন্ট জানান, বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের একটি চক্র সিন্ডিকেট গড়ে তুলে দীর্ঘদিন প্রশাসনের নাকের ডগায় এই পাচারের সাথে যুক্ত ছিল।
যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের বেনাপোল চেকপোস্ট আইসিপি ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার মাহবুব হোসেন বলেন, ভারতে জ্বালানি তেল পাচার রোধে অতিরিক্ত নজরদারি বাড়াতে হেডকোয়ার্টার থেকে তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যার ফলে আমরা আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাকগুলোর জ্বালানি তেল স্কেল দিয়ে পরিমাপ করে খাতায় নোট করে রাখছি। বন্দরে মালামাল খালাস করে ট্রাকগুলো ভারতে ফিরে যাওয়ার সময় আবারও স্কেল দিয়ে পরিমাপ করা হচ্ছে। আর পূর্বের নোট করে রাখা তেলের পরিমাণ মিলিয়েই ট্রাক ছাড়া হচ্ছে।