বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের নির্বাচনী প্রচার মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ হয়েছে। রাত পোহালেই ভোটগ্রহণ। এই ইউনিয়নে ২২ হাজার ৮২৭ ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন।
এম বালিয়াতলী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদের বিপরীতে লড়াই করছেন তিন প্রার্থী। এ ছাড়া ১২ সংরক্ষিত নারী সদস্য ও ৪৫ সদস্য প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।
এই তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সবাই আওয়ামী লীগ ঘরানার রাজনীতি করে আসছেন। এর মধ্যে অ্যাডভোকেট মো. নাজমুল ইসলাম নাসির নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী হিসাবে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ বারী বাদল।
এ ছাড়া নির্বাচন করছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ঘোড়া প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করা স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. গোলাম সরোয়ার শাহীন।
বরগুনা জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, বরগুনায় নৌকার ঘাটি। আমরা আশা করতে পারি নৌকা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।
পরিরখালের ভোটার জসিম বলেন, বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের সাবেক দুবারের চেয়ারম্যান ও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তিনি নিজ এলাকার পাশাপাশি ব্যক্তি ইমেজের কারণে রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক।
অন্যদিকে দলীয় মনোনয়ন না চেয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. গোলাম সরোয়ার শাহীন। গত নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে সামান্য ভোটে হেরে যাওয়ায় এলাকায় তার অবস্থান এবার অনেকটা ভালো।
এদিকে বরগুনা প্রেসক্লাব ও বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং এজেন্টে স্বজনপ্রীতি করায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. গোলাম সরোয়ার শাহীন।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এক প্রার্থীর শুভাকাঙ্ক্ষী ও আত্মীয়দের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদের নিয়োগ বাতিল করা না হলে সুষ্ঠুভাবে ভোট হবে না বলে তিনি করেন।
নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম নাসির বলেন, এক প্রার্থীর শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করায় আমি আপত্তি জানিয়েছি। তারা নির্বাচনী প্রচারকালে তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি দিয়ে ওই প্রার্থীর সমর্থনে পোস্ট ও শুভকামনা জানিয়েছেন। এদের নিয়োগ প্রদান করা হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে তিনি জানান।
তিনি পরীরখাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ছোট তালতলী সিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পালের বালিয়াতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চালিতাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জেলখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি এসব কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ বারি বাদল বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে বিপুল ভোটে আমি জয়লাভ করব।
বরগুনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার রায় বলেন, আমার অভিযোগে আত্মীয় পরিচয়ে যাদের ভোটকেন্দ্রে নিয়োগ করা হয়েছিল, তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে এবং ভোটকেন্দ্রসহ নির্বাচনের আশপাশের এলাকায় সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের নির্বাচন রিটার্নিং কর্মকর্তা বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, প্রার্থীদের অভিযোগের কারণে যারা প্রার্থীদের আত্মীয় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, তাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা কারও শুভাকাঙ্ক্ষীকে নিয়োগ দিইনি। কে কার শুভাকাঙ্ক্ষী আমরা তা বলতে পারি না। নির্বাচনের দিন বিজিবিসহ পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করেছি নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে।
নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য বরগুনা সদর থানার ওসি এম তারিকুল ইসলাম বলেন, এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের ৯ ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ফোর্স থাকবে এবং বাইরে ৯টি মোবাইল টিম থাকবে। এ ছাড়া ইউনিয়নের সাবেক ৩টি ওয়ার্ডে থাকবে স্পেশাল মোবাইল টিম।
উপজেলায় অবস্থান থাকবে আরও তিনটি মোবাইল টিম। বর্তমানে নির্বাচনে পরিবেশ বজায় রাখতে বিশেষ বিশেষ এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে, সে জন্য আমাদের যা করণীয় আমরা সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করব। বর্তমানে ইউনিয়নে সর্বত্র শান্তি বিরাজ করছে।