নুরুল আমিন
লাখ টাকার মোবাইল বিক্রি হবে ৪০ হাজারে—এমন লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করত তারা। প্রতিটি বিজ্ঞাপনের বিপরীতে ১০–১৫ জনের কাছ থেকে নিত টাকা। এভাবে দেড় বছরে ‘বিক্রয় ডটকম’–এ সাত শতাধিক মুঠোফোন বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র।
এই প্রতারণায় জড়িত অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। অল্প দামে ব্যবহৃত মুঠোফোন (সেকেন্ডহ্যান্ড) বিক্রির নামে গ্রাহকের প্রায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাঁরা। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, সোজায়েদ আহমেদ (২১), আল আমিন (২০) ও শাহিনুর রহমান (২৬)। সবার বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত শুক্রবার ময়মনসিংহ থেকে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে দুটি কম্পিউটার ও আটটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, মিরপুর মডেল থানায় এক ভুক্তভোগীর করা প্রতারণা মামলার তদন্তে নেমে চক্রটিকে শনাক্ত করা হয়। গ্রেপ্তার তিনজনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক প্রতারণার মামলা ও সাধারণ ডায়েরি রয়েছে।
বিজ্ঞাপনডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা ‘জিমেইল’ অ্যাকাউন্ট খুলে এবং ভিন্ন নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম ব্যবহার করে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘বিক্রয় ডটকম’–এ বিজ্ঞাপন প্রচার করতেন। এক মাস ব্যবহার করা হয়েছে উল্লেখ করে ১ লাখ টাকা দামের মুঠোফোন ৪০ হাজার টাকায় বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতেন। আগ্রহী হয়ে অনেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তখন শুরুতেই কৌশলে গ্রাহকের অবস্থান জেনে নিতেন তাঁরা। গ্রাহক ঢাকায় আছেন বললে প্রতারক চক্রের সদস্যরা বলতেন, তাঁরা রাজশাহীতে আছেন। দাম পরিশোধের পর সেখান থেকে কুরিয়ারে মুঠোফোনটি পাঠাবেন বলে জানাতেন তাঁরা।
গ্রাহকদের কেউ বিশ্বাস না করলে চক্রের সদস্যরা নিজেদের পুলিশ সদস্য বলে পরিচয় দিতেন। পরে ওই গ্রাহকের কাছে অনলাইনে পুলিশের একটি ভুয়া আইডি কার্ড পাঠিয়ে দিতেন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্ধেক টাকা নেওয়ার পর সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের একটি বুকিং রসিদ গ্রাহককে পাঠাতেন। পরে বিজ্ঞাপনটি নিজেরাই সরিয়ে দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতেন। আবার নতুন বিজ্ঞাপন দিয়ে শুরু করতেন নতুন প্রতারণা। প্রতিটি বিজ্ঞাপন দিয়ে তাঁরা ১০–১৫ জন গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করতেন।
ডিবি সূত্র জানায়, ভুয়া বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য চক্রের সদস্যরা প্রায় ৭২০টি জিমেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়া প্রতিটি বিজ্ঞাপনের জন্য একটি করে ভিন্ন নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম ব্যবহার করেছেন। প্রতিটি বিজ্ঞাপনের জন্য বিক্রয় ডটকমকে ২০৯ টাকা দিয়ে শীর্ষ বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রচার করতেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে আল আমিন ভাসমান মুঠোফোন সিম বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৩৫০ টাকায় ভিন্ন নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম কিনতেন। এই সিম তিনি প্রতারক চক্রের অন্য দুই সদস্য সোজায়েত আহমেদ ও শাহিনুর রহমানের কাছে ৫০০ টাকায় বিক্রি করতেন। এ ছাড়া আল আমিন সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার কাছ থেকে বুকিং বই কিনে ওই দুজনের কাছে বিক্রি করতেন। প্রতিটি বই ৩৫ হাজার টাকায় কিনে তিনি বিক্রি করতেন ৩৮ হাজার টাকায়। এই বই থেকে রসিদ হিসেবে লিখে গ্রাহকদের পাঠাতেন প্রতারক চক্রের সদস্যরা।