সুপ্রিম কোর্টে হাজিরা দিয়েছেন বিচারক কামরুন্নাহার

সুপ্রিম কোর্টে হাজিরা দিয়েছেন বিচারক কামরুন্নাহার

ঢাকা: রেইন ট্রি ধর্ষণ মামলায় রায়দানকারী সদ্য প্রত্যাহার হওয়া বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে হাজির হয়েছেন।

সোমবার (২২ নভেম্বর) তিনি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচার কক্ষে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হাজির হন।

আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ১ নম্বর ক্রমিকে ছিল রাষ্ট্র বনাম আসলাম সিকদারের মামলা। ওই ধর্ষণ মামলায় স্থগিতাদেশ থাকার পরও এক আসামিকে জামিন দেওয়ার ঘটনায় এই বিচারককে গত বছরের ১২ মার্চ তলব করেছিলেন আপিল বিভাগ। ২ এপ্রিল হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

কিন্তু করোনার পরে এই মামলাটি আর কার্যতালিকায় আসেনি। পরে মামলাটি ১৫ নভেম্বর কার্যতালিকায় উঠে। ওইদিন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ আদেশ দিয়েছেন। তবে কী আদেশ দিয়েছেন, তা জানা যায়নি।

এরপর মামলটি ফের সোমবার কার্যতালিকায় ওঠে।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিচারক কামরুন্নাহার আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচারকক্ষে হাজির হন। পরে ওই বিচারকক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন অফিসার, আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের বেরিয়ে যেতে বলা হয়। এরপর ভার্চ্যুয়ালি শুনানি শুরু হয় বলে জানা গেছে।

প্রায় পৌনে এগারোটা পর্যন্ত আর কেউই ওই কক্ষে ঢুকতে পারেননি। পরে বেঞ্চ অফিসারদের কক্ষে প্রবেশ করানো হয় এবং ২ নম্বর আইটেমের আইনজীবীদের ডেকে নেওয়া হয়। এ সময় ওই কক্ষে প্রবেশ করে বিচারক কামরুন্নাহারকে দেখা যায়নি। এর মধ্যে কোনো এক সময়ে তিনি অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান।

কিন্তু এই মামলায় কোনো আদেশ দেওয়া হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।

বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক ছিলেন। তিনি রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় ১১ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেছিলেন। রায়ে পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেওয়া হয়। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রায় ঘোষণার সময় তিনি একটি পর্যবেক্ষণ দেন। পযরবেক্ষণে ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে পুলিশ যেন মামলা না নেয়। এমন পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা।

এরপর ১৩ নভেম্বর শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধান বিচারপতির কাছে বিচারক হিসেবে তার দায়িত্ব পালন নিয়ে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সে জন্য একটা চিঠি লিখবেন।

পরদিন রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ওই বিচারককে আদালতে না বসতে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে মোছা. কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে বর্তমান কর্মস্থল থেকে তাকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

পরে ওইদিন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোছা. কামরুন্নাহারকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হয়।

ধর্ষণের ওই মামলায় ২০১৯ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট থেকে জামিন পান বেসরকারি একটি টেলিভিশনের সাবেক অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক আসলাম সিকদার। ওই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার আদালত ওই বছরের ২৫ জুন জামিন স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। আবেদনটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত বছরের ২ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ ওই আসামিকে জামিন দেন। সর্বোচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের পরও আসামিকে জামিন দেওয়ার বিষয়টি আদালতের নজরে আনে রাষ্ট্রপক্ষ।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১২ মার্চ আপিল বিভাগসংশ্লিষ্ট বিচারককে ব্যাখ্যা জানাতে আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে আসলাম সিকদারকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন।

এদিকে ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আসলাম সিকদারের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় ওই মামলা করা হয়। মামলায় গত বছরের ১৪ অক্টোবর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫–এর বিচারক রায়ে আসলাম সিকদারকে খালাস দেওয়া হয়।

পরে রাষ্ট্রপক্ষ খালাসের ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে। হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন।

শীর্ষ সংবাদ