জাহাঙ্গীরনামা : চাঁদাবাজির কৌশল ট্রেড লাইসেন্স

জাহাঙ্গীরনামা : চাঁদাবাজির কৌশল ট্রেড লাইসেন্স

এসএম মিন্টু, গাজীপুর থেকে

আওয়ামী লীগ থেকে সদ্য বহিষ্কৃত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের চাঁদাবাজি অন্য নেতাকর্মীদের মতো নয়। এসব কাজে তিনি ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতেন।

গাজীপুর মহানগরে ছোট-বড় অন্তত তিন হাজার কলকারখানা রয়েছে। এসব কলকারখানা থেকেই আয়ের একটি বড় উৎস তৈরি হতো জাহাঙ্গীর আলমের। এর জন্য তিনি কারখানাগুলো থেকে চাঁদা হিসেবে নগদ অর্থ, না হয় কারখানার ঝুট আদায় করতেন। তার নীতি ছিল, ‘হয় চাঁদা, না হয় ঝুট’। এ দুটির কোনো একটি না দিলে মিলত না ট্রেড লাইসেন্সও।

গতকাল গাজীপুর মহানগরের কয়েকজন ব্যবসায়ী সময়ের আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে ছিলেন আমদানি ও রফতানিমুখী কারখানাগুলোর মালিকরা। প্রতিবছর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে ভোগান্তির অন্ত ছিল না। আর এই ভোগান্তিতে পড়েন খোদ প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলামের ভাগ্নে। একই ভোগান্তিতে পড়েন সাবেক ফুটবলার ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের হস্তক্ষেপে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে বাধ্য হন জাহাঙ্গীর আলম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ সালনায় অবস্থিত চীনা নাগরিক দ্বারা পরিচালিত ক্লোপেক্স নামে একটি রফতানিমুখী কারখানার একজনের সঙ্গে কথা হয় সময়ের আলোর এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, ২০২০ সালে ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের জন্য কাগজপত্র জমা দেন। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও সিটি করপোরেশন কারখানার ট্রেড লাইসেন্সটি নবায়ন করেনি।

ওই ব্যক্তি বলেন, একটি ট্রেড লাইন্সের বিপরীতে ১৮টি লাইসেন্স জড়িত থাকে। ইম্পোর্ট-এক্সপোর্টসহ ব্যবসায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই ট্রেড লাইসেন্স। এ সুযোগেই জাহাঙ্গীর ৪ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। তা না হলে কারখানার ঝুট বা ওয়েস্টেজ তাকে দিতে হবে। দাবিকৃত চাঁদা দিতে না পারায় লাইসেন্সটি মেয়রের নিজ বাড়িতেই ফাইলবন্দি রাখেন। পরে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ দফতর সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের কাছে ধরনা দেন ওই কারখানার কর্মকর্তারা।

বছরখানেক পর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের কিছুদিন আগে মাজহারুল ইসলামের মাধ্যমেই ট্রেড লাইসেন্সটি নবায়ন করে দেন মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তবে গত এক বছরে ওই কারখানার সব বায়ার ও অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। কারখানাটি এখন বিদেশিদের কাছে কালো তালিকায় রয়েছে। কারখানার মেশিনগুলো টিকিয়ে রাখতে সাব-অর্ডারে কাজ করছে কারখানাটি। কারখানাটি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও আপাতত তেমন কাজ নেই।

অন্যদিকে গাজীপুর মহানগরের গাছা এলাকায় অবস্থিত এলিট গ্রæপের এলিট গার্মেন্টস। ওই কারখানার মালিক পক্ষের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময়ের আলোকে বলেন, প্রায় দেড় বছর ট্রেড লাইসেন্স আটকে রাখেন মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। আমরা বারবার চেষ্টা করেও নবায়নকৃত লাইসেন্সটি পাইনি। ফলে কারখানার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বায়াররা অর্ডার বন্ধ করে দেন। পরে বাধ্য হয়ে মন্ত্রিপরিষদে বিষয়টি জানানোর পর চলতি বছর লাইসেন্সটি করে দেন।

তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টসের ঝুট না দেওয়ার কারণেই তিনি ট্রেড লাইসেন্সটি আটকে রাখেন। কারণ মেয়র তাকে বারবার বলছিলেন, অন্য পার্টিকে বাদ দিয়ে তাকে ঝুটগুলো দিতে হবে। তাও সম্পূর্ণ বিনা পয়সায়। ওই ব্যক্তি আরও জানান, কারখার ঝুট যে নিচ্ছেন তিনি টাকা দিয়েই নিয়েছেন। জাহাঙ্গীর চেয়েছিলেন বিনা টাকায়।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল গতকাল সময়ের আলোকে বলেন, ট্রেড লাইসেন্স পেতে হলে কারখানাগুলোকে আগে সমঝোতা করে নিতে হতো।

জাহাঙ্গীরকে ঝুট না দিলে অনেক কারখানার মালিক পড়তেন চরম ভোগান্তিতে। তিনি বলেন, এলিট গার্মেন্টস ছাড়াও জাহাঙ্গীরের কবলে পড়ে গাছা থানার টিআরজেড, লক ভিউ, ইন্টারন্যাশনাল, ব্রাভো, মেঘনা টেক্সটাইল মিলসের লাইসেন্স বছরের পর বছর আটকে রয়েছে। কারখানাগুলোর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ফি ধরা হয় তিন-চারগুণ বেশি।

আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল আরও জানান, কারখানাগুলোতে চাঁদাবাজি ছাড়াও বাসা-বাড়িগুলোতে বাৎসরিক কর বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ৫ লাখ টাকার কর বাড়ানো হয়েছে কোটি টাকার ওপরে। বিশেষ করে ছোট ছোট বাড়িতেও কর বাড়ানো হয়েছে। অনেকের পক্ষে এই কর পরিশোধ করতে কষ্ট হয়েছে। উন্নয়নের নামে যে পরিমাণ কর আদায় করা হয়েছে তার একাংশও কাজ করতে পারেননি তিনি। ইতোমধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ

সারাদেশ